রিকশা চালিয়ে বিধানসভা অধিবেশনে পৌঁছালেন তৃণমূল এমএলএ
Published: 18th, February 2025 GMT
দামি গাড়িতে নয়, বরং রিকশা চালিয়ে বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের বলাগর এলাকার এমএলএ ও দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মনোরঞ্জন ব্যাপারি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা নাগাদ কিড স্ট্রিটের এমএলএ হোস্টেল থেকে রিকশার প্যাডেলে পা রেখে শুরু হয় বিধানসভার অধিবেশনের উদ্দেশ্যে তার যাত্রা। খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
নিরক্ষর মনোরঞ্জন ব্যাপারী কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন রিকশাচালক ছিলেন। রিকশাচালক হিসাবেই পার করেছেন জীবনের বেশিরভাগ সময়। পরবর্তীতে সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর সংস্পর্শে এসে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন মনোরঞ্জন। অল্প সময়েই মেলে পরিচিতি। আর সেই সূত্রেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের টিকিট। রিকশাচালক থেকে সোজা এমএলএ।
আরো পড়ুন:
ভারতকে মির্জা ফখরুল
বন্ধুত্ব করতে চাইলে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিন
মাস্কটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স
গঙ্গার পানি, সার্কসহ দ্বিপক্ষীয় উদ্বেগ নিয়ে ঢাকা-দিল্লি বৈঠক
তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘আমি একজন শ্রমজীবী মানুষ। আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে আমি একজন রিকশাচালক। জীবনে অনেক ধরনের কাজ করেছি তবে কোনো পেশা পরিচয় আমার গায়ে সেভাবে সেঁটে যায়নি, যেভাবে গেছে রিকশাচালক পরিচিতিটা। তৃণমূল কংগ্রেস মা-মাটি-মানুষের দল। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ ও নারীরা এই দলে অগ্রাধিকার পায়।”
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সরকার সিপিআইএমকে সূক্ষ্ম খোঁচা দিয়ে তিনি আরো জানান, “আমাদের এই বঙ্গে একটি রাজনৈতিক দল ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা নিজেদের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দল বলত। কিন্তু কোনো দিন বিধানসভায় এমএলএ পদের জন্য কোনো শ্রমিক, কৃষক বা মেহনতি মানুষকে টিকিট দেয়নি। দিয়েছেন মা-মাটি-মানুষের দল, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বমান্য নেত্রী, মমতা ব্যানার্জি।”
এমএলএ হোস্টেল থেকে রিকশা চালিয়ে বিধানসভায় যাওয়ার ঘোষণা মনোরঞ্জন ব্যাপারি আগেই দিয়েছিলেন। তাই এদিন রীতিমতো ভিড় জমে তার কর্মসূচি ঘিরে। বিরোধীরা অবশ্য এই কর্মসূচিকে নাটক বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। রিকশা চালিয়ে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি না পেয়ে গেট দিয়ে হেঁটেই বিধানসভায় ঢোকেন এমএলএ মনোরঞ্জন ব্যাপারি।
কলকাতা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘সবকিছু দিচ্ছে, কিন্তু চাল কেন দিচ্ছে না’
পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর ১০ দিনের মতো বাকি। ইতিমধ্যে কেউ কেউ রোজার বাজার করতে শুরু করেছেন। আবার কেউ হিসাব-নিকাশ করে মাস শেষে শুরু করবেন। তাঁদের একজন চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ লিয়াকত আলী। পঞ্চাশোর্ধ্ব লিয়াকত আলী স্ত্রী আর এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন কাজীর দেউড়ির ব্যাটারি গলি এলাকায়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কাজীর দেউড়ি বাজারের পাশে কথা হয় লিয়াকত আলীর সঙ্গে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। বাজারের ব্যাগ হাতে পণ্যের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন লিয়াকত আলী। গরমে কিছুটা হাঁপিয়ে উঠলেও ট্রাক আসার পর অনেকটা স্বস্তি দেখা যায় তাঁরা চোখে।
মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, বাসার সামনেই ফার্মেসি রয়েছে তাঁর। তবে বর্তমানে ব্যবসা কিছুটা মন্দা। শরীরের কারণে সেভাবে দোকানে বসা হয় না। ছেলের একার আয়ে সংসার চালাতে বেগ পেতে হয়। সামনে রোজা তাই টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন সকাল সকাল। তবে ট্রাক আসতে দুপুর হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়েছে। তবে পণ্য পাওয়ার পর তাঁর প্রশ্ন, ‘সবকিছু দিচ্ছে, কিন্তু চাল কেন দিচ্ছে না?’
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম নগরে ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমজান মাস উপলক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।
ক্রেতাদের যত অভিযোগচট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন ২০টি ওয়ার্ডের চার হাজার গ্রাহকের কাছে ট্রাকে করে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। সব মিলিয়ে এর মূল্য ৫৮৮ টাকা। প্রতি ট্রাকে বরাদ্দ ২০০ জনের। অথচ প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের সারি দেখা যায়।
আজ নগরের ১ থেকে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আমানবাজার, বালুছড়াবাজার, হিলভিউ, শুলকবহর, কাজীর দেউড়ি, কালামিয়া বাজারসহ ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। এদিন নগরের কাজীর দেউড়ি, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক ও ঘাট ফরহাদবাগ এলাকা—এই তিন স্থানে পণ্য না পেয়ে অন্তত ১০০ জন করে ক্রেতা ফিরে গেছেন।
কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে কাউন্সিলর অফিস থেকে বিষয়গুলো জানিয়ে দেওয়া হতো। টোকেন দিয়ে পণ্য বিক্রি হলেও অনেক ক্রেতা আগে পণ্য নেওয়ার জন্য লাইন ভেঙে সামনে চলে যান। ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে টোকেন পান না। এ কারণে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। আবার ট্রাকের বিক্রেতারা ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
জানতে চাইলে টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন একই স্থানে পণ্য দিলে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ বারবার পণ্য কেনার সুযোগ নেন। এটি এড়াতে প্রতিদিনই স্থান বদল করা হয়। ক্রেতাদের অভিযোগগুলো শুনে পরিবেশকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য দেওয়া হয়।
রোজায় চাল থাকতে পারেনগরে এক সপ্তাহ ধরে টিসিবির কার্যক্রমে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে অধিকাংশ ক্রেতাই চাল না দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ জানান। নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ছোলা ও চালের। কিন্তু এখনো চাল দেওয়া হচ্ছে না। একই দাবি ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম আক্তারের। তিনি বলেন, আগে চাল দিলেও এখন দিচ্ছে না।
জানা গেছে, আগে ট্রাকে করে খোলাবাজারে চাল বিক্রি করত খাদ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবি ৩০ টাকা দরে এসব চাল বিক্রি করে। চলতি মাসে অনুমোদন না নেওয়ার কারণে চাল বিক্রি হচ্ছে না। এর বাইরে নগরে প্রতিদিন ২৫ টন ও প্রতি উপজেলায় ৩ টন করে ওএমএস দোকানের মাধ্যমে চাল বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, এটি আন্তমন্ত্রণালয়ের বিষয়, তবে আমাদের চালের ঘাটতি নেই। অনুমোদন না থাকায় টিসিবিকে চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। রোজায় ট্রাকে চাল থাকছে কি না, এটিও টিসিবির আওতায়। অনুমোদন নেওয়া হলে আমরা তাঁদের চাল দিতে পারব।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা পাননি। তবে গত সোমবার অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, আগামী মার্চ ও এপ্রিল মাসে টিসিবির মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টন করে দুই মাসে ১ লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে।