বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়
Published: 18th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নির্দিষ্ট কোনো সরকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। দুই দেশের স্বার্থের ভিত্তিতেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া উচিত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সীমান্ত হত্যা, আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং প্রধান উপদেষ্টা ড.
নিচে সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো—
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা
দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার বৈঠক সম্পর্কে আমাদের বলুন...
তৌহিদ হোসেন: বৈঠকের শুরুটা কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এক ধরনের সম্পর্কে অভ্যস্ত ছিল, যা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে প্রথম দিকে কিছুটা অস্বস্তি ছিল। তবে ছয় মাস পর এখন আমরা আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা চলছে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও অন্যান্য কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
দ্য হিন্দু: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছেন এবং পররাষ্ট্র সচিবের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপনি কি জয়শঙ্করকে এই উদ্বেগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন?
তৌহিদ হোসেন: আসলেই না। আমি জিজ্ঞাসা করিনি, কারণ এটি ভারতের ব্যাপার (তারা অন্য দেশের সাথে কী আলোচনা করবে)। আমি মনে করি না খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও ভারতের উদ্বেগ
দ্য হিন্দু: ভারত বারবার অভিযোগ করছে যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হচ্ছে। ভারত কি মনে করে বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে?
তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব, এবং সরকার সেই দায়িত্ব পালন করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ৫ আগস্টের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচার হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে।
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও ভারতের ভূমিকা
দ্য হিন্দু: শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত ঠিক কী করবে বলে আপনি আশা করছেন?
তৌহিদ হোসেন: তার (হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আমরা ভারতকে তাকে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছি। যদি তা না হয়, তাহলে অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত, যেন তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেন যা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়াতে পারে।
দ্য হিন্দু: আপনার সরকার কি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানাবে?
তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। আমরা ভারতের কাছ থেকে আগেও অপরাধীদের ফেরত এনেছি। শেখ হাসিনার বিষয়ে মামলা আদালতে রয়েছে, এবং সেই প্রক্রিয়া চলমান। তবে আমরা চাই, ভারতে থাকাকালীন তিনি যেন কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেন।
দ্য হিন্দু: তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর করার জন্য জনতাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
তৌহিদ হোসেন: বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।
দ্য হিন্দু: আপনার সরকার এখন পর্যন্ত শুধু মৌখিক নোট পাঠিয়েছে, যা হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি কূটনৈতিক নোট। আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?
তৌহিদ হোসেন: আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে) একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে এবং আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আমি মনে করি ভারতও তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে পারে।
দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমএলএটি (পারস্পরিক আইনি সহায়তা) এর জন্য আপনার পর্যাপ্ত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কখন সেই প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আশা করছে?
তৌহিদ হোসেন: ঠিক আছে, সেই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চলমান রয়েছে, কারণ মামলাগুলো এখন আদালতে রয়েছে। আমরা তাদের (তাড়াহুড়ো করে) কাজ করতে বাধ্য করতে পারি না। এবং আমরা এই বিষয়েও অবগত যে— তিনি (হাসিনা) ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারে। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আমরা যা চাই তা হলো— তিনি (হাসিনা) ভারতে থাকাকালীন কোনও ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।
সীমান্ত হত্যা ও জেলেদের ওপর নির্যাতন
দ্য হিন্দু: সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যার বিষয়টি নিয়ে ভারত কী বলছে?
তৌহিদ হোসেন: ২০২৪ সালে, যার অর্ধেক সময় আগের সরকারের অধীনে ছিল, ২৪ জন বাংলাদেশি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এটি বিশ্বের কোথাও দেখা যায় না। যদি কেউ অপরাধ করে, তাকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে, আদালতে পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি গুলি করে হত্যা করা অগ্রহণযোগ্য। ভারত চাইলে এটি বন্ধ করতে পারে এবং এটি বন্ধ হওয়া উচিত।
দ্য হিন্দু: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, বাংলাদেশে বন্দী কিছু ভারতীয় জেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। আপনি কী বলবেন?
তৌহিদ হোসেন: সীমান্ত সমস্যার মতোই, সমুদ্রসীমার ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা আছে। জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে দুই দেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের বন্দী জেলেদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দিয়ে থাকে। তবে নির্যাতনের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। যদি কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আইন ভঙ্গ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা
দ্য হিন্দু: আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ এই গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে আবার আলোচনা করছে। এটি কতটা সত্য?
তৌহিদ হোসেন: বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি অনুযায়ী, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে কয়লার দাম সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা যৌক্তিক নয়। আমরা আশা করি, আদানি গ্রুপের সঙ্গে আরও ভালোভাবে আলোচনা করে একটি ন্যায্য সমাধানে পৌঁছানো যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য বৈঠক
দ্য হিন্দু: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি বিমসটেক সম্মেলনে বৈঠক করতে পারেন?
তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই সময়ে একই স্থানে ছিলেন না, তাই সরাসরি বৈঠকের সুযোগ হয়নি। তবে বিমসটেক সম্মেলনে তারা একসঙ্গে থাকবেন। এ ধরনের বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে বসলে অনেক সময় এক কথায় বড় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
দ্য হিন্দু: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ভালো সম্পর্ক ছিল। আপনি কি মনে করেন সেটি আবার আগের মতো হতে পারে?
তৌহিদ হোসেন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো সরকারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর। বিএনপি সরকারের সময়ও (২০০১-২০০৬) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। গঙ্গা পানি চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় (১৯৯৬-২০০১) হয়েছিল।
আমাদের সম্পর্ককে কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করে দুই দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়া উচিত। ভারত ও বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র আছে, যা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট র ওপর ন র র র জন য উপদ ষ ট সরক র র আম দ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
মদ্যপানে কেন ডুবে থাকতেন আমির?
ব্যক্তিগত জীবনে ভালোবেসে অভিনেত্রী রিনা দত্তর সঙ্গে প্রথমবার সংসার বাঁধেন বলিউড তারকা আমির খান। এ সংসার ভাঙার পর ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ‘দিল’ তারকা। কেবল তাই নয়, মদ্যপান করে নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টাও করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আমির নিজেই।
ইনস্ট্যান্ট বলিউডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, “রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর প্রায় দুই-তিন বছর শোকগ্রস্ত ছিলাম। আমি কোনো কাজ করিনি, কোনো চিত্রনাট্যও শুনিনি। আমি বাড়িতে একা থাকতাম। প্রায় দেড় বছর প্রচুর মদ্যপান করেছি।”
আমির খান নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন। তা জানিয়ে ‘দঙ্গল’ তারকা বলেন, “বিচ্ছেদের পর বুঝতে পারছিলাম না কী করব! আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। ফলে মদ্যপান শুরু করেছিলাম। যে মানুষটি একেবারেই মদ্যপান করত না, সেই আমি এমন হয়ে গেলাম যে, দিনে পুরো এক বোতল মদ পান করতাম। একেবারে দেবদাসের মতো ছিলাম। নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলাম। টানা দেড় বছর এটা করেছি। আমি গভীরভাবে বিষণ্ণতায় ভুগছিলাম।”
১৯৮৬ সালে কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন রিনা ও আমির। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তান— জুনায়েদ ও ইরা। ২০০২ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে আমিরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এই অভিনেতার ‘লগান’ সিনেমার শুটিং সেটেই তাদের পরিচয় হয়। এক সময় বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং ২০০৫ সালে এই জুটির বিয়ে হয়। এ সংসারে আজাদ রাও খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ জুলাই যৌথ বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন এই যুগল।
কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কয়েক বছর সিঙ্গেল ছিলেন আমির খান। তারপর বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা গৌরির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ১৮ মাস গোপনে প্রেম করেন তারা। কয়েক দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমিকা গৌরিকে পরিচয় করিয়ে দেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট।
তথ্যসূত্র: লাইভ মিন্ট
ঢাকা/শান্ত