মাদারীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৯ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৭ নারী অপহরণের ভুয়া দাবি প্রচার: রিউমর স্ক্যানার
Published: 18th, February 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি আগুনে ভস্মীভূত বসতবাড়ির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের মাদারীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৯টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৭ জন হিন্দু নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান (ফ্যাক্ট চেক) রিউমর স্ক্যানারের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি ভুয়া।
আজ মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের তফসিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাসও ভিডিওটি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তিনিও দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের মাদারীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৯টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৭ জন হিন্দু নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম গণমাধ্যম ‘সনাতন টিভি’ এবং ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও এই দাবি প্রচারিত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি আসলে শরীয়তপুরের ডোমসার ইউনিয়নে ঘটা দুর্ঘটনাজনিত একটি অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও। ওই আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হিন্দু নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘Robiul Islam NaVan’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত পোস্টে একই ভিডিও খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। ওই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, শরীয়তপুরের বেপারী কান্দি গ্রামে রান্নাঘর থেকে সৃষ্ট আগুনের ঘটনার ভিডিও এটি।
এই পোস্টের সূত্র ধরে ‘শরীয়তপুর টাইমস’ নামের স্থানীয় এক গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে একই ঘটনার ভিন্ন একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেছে রিউমর স্ক্যানার। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কোয়ারপুর দপ্তরিকান্দি এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০টি বসতঘরসহ ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও কিছুই রক্ষা করা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত দুই ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন সুজন বেপারী এবং রাজ্জাক বেপারী। তাঁদের নামের ভিত্তিতে রিউমর স্ক্যানার বলছে, তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের বলে প্রতীয়মান হয়।
রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মো.
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাফিস এলাহী রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ঘটনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। কেউ পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ করেননি এবং বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান খান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি গুজব। তিনি এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে রিউমার স্ক্যানার বলছে, মাদারীপুরে ১৯টি হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং ৭ হিন্দু কন্যাকে অপহরণের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উমর স ক য ন র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
অপহরণের মুক্তিপণ নিয়ে পালানোর সময় ৫ পুলিশ আটক
বগুড়ার ধুনট উপজেলা থেকে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে তিন লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার পাঁচ সদস্যসহ ছয় জনকে আটক করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ও পুলিশের একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে বীরগ্রাম এলাকা থেকে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশ তাদের আটক করে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
পুলিশ ফাঁড়ির জানালা ভেঙে পালাল আসামি
বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, পরে উদ্ধার
আটকরা হলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই শাহিন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, মাহবুব আলম, বাশির আলী এবং মাইক্রোবাস চালক মেহেদী হাসান।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, আরএমপির গোয়েন্দা শাখার পাঁচ সদস্য রবিবার (২৩ মার্চ) রাতে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামের রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ক্যাসিনো খেলার অভিযোগে আটক করে মাইক্রোবাসে উঠায়। এরপর শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরে মাইক্রোবাস থামিয়ে তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দর কষাকষি করে নগদ দুই লাখ টাকা এবং বিকাশ ও নগদ অ্যাপসের মাধ্যমে আরো এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। বগুড়া জেলা পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে শেরপুর ও শাজাহানপুর থানা এলাকায় তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস আটক করার চেষ্টা করে। দুই থানা পুলিশ মাইক্রোবাস আটক করতে না পেরে হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে শাজাহানপুর থানার বীরগ্রাম এলাকায় মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়।
পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, মাইক্রোবাসে থাকা পাঁচজন নিজেদের রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্য পরিচয় দেন। পরে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তারা কাউকে না জানিয়ে বগুড়ায় অসৎ উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। পরে তাদের আটক করা হয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে নেওয়া নগদ দুই লাখ টাকা ও একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ধুনট উপজেলার বাসিন্দা ওয়াহাব নামে একজন কনস্টেবল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত। তিনি ছুটি নিয়ে দুই দিন আগে বাড়িতে আসেন। তার তথ্য মতেই রাজশাহী থেকে পাঁচ পুলিশ ধুনটে আসেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধনে জানা গেছে।
তিনি জানান, আটকদের হাইওয়ে পুলিশ ধুনট থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের নামে ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে অপহরণ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঢাকা/এনাম/বকুল