সোমবার রাত সাড়ে আটটা। রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোড এলাকা। হঠাৎ দুই নারী-পুরুষকে রামদা দিয়ে কোপাতে শুরু করে দুই যুবক। ক্ষোভের মাত্রা বেশি পুরুষটির দিকে। নিরুপায় হয়ে ছুটোছুটি করছেন নারী। পুরুষটিকে আক্রমণ না করতে হাতজোড় করে অনুরোধ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হচ্ছে না। একপর্যায়ে নিজের জীবন বাজি রেখে অস্ত্রের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি।

গতকাল রাতেই এই ঘটনা নেটিজেনদের সবাই কমবেশি দেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটেজটি রীতিমতো ভাইরাল।

জানা গেছে, ওই নারী ও পুরুষ সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। তাদের নাম মকবুল ও ইফতি। আর অভিযুক্তরা হলেন মোবারক হোসেন (২৫) ও রবি রায় (২২)। তারা দু’জনই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ইতোমধ্যে তাদের আটকও করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী মকবুল জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তাহসিন রিয়াদের বন্ধু। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল সদস্য হাসান মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দুজনকে আটক করা হয়েছে। এই হামলার পেছনে আরও যারা জড়িত; তাদের সবাইকে খুঁজে বের করা হবে।

ঘটনার কারণ জানিয়ে হাসান মঈন বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপটি টঙ্গী এলাকার। তারা সেক্টরের ভেতরে উচ্চশব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রিকশা থেকে প্রতিবাদ জানান মকবুল ও ইফতি। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে ২০-২৫ জনের গ্যাং বাহিনীকে জড়ো করে তারা। পরে মোবারক ও রবি রায় ওই দম্পতিকে কোপানো শুরু করে।

স্থানীয়রা জানান, টঙ্গী এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তারা। সন্ধ্যার পর উত্তরা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রের সদস্য বলে জানা গেছে।

গতকালের ঘটনার সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে অভিযুক্তরা সেক্টরের বিভিন্ন রোড ধরে পালিয়ে গেলেও দুজনকে আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় আটককৃতদের গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা।

এদিকে ধারালো অস্ত্রের মুখে স্বামীকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অদম্য সাহসের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রসংশা কুড়িয়েছেন স্ত্রী ইফতি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র মদ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখা হবে

বাংলা নববর্ষের সকালে রাজিব ও তানিয়ার কোল জুড়ে আগমন হলো ৩য় পুত্র সন্তানের। সোমবার তিন কেজি ৩ গ্রাম ওজন নিয়ে ফরিদপুর শহরের ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন শিশুটি।

বছরের প্রথম দিনে নতুন অতিথিকে পেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দে ভাসছে তাদের পরিবার।

সাইদুল ইসলাম রাজিব ও তানিয়া আক্তার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট  হাউজিং স্টেট এলাকার খসরু ব্যাংকার এর বাসার ভাড়াটিয়া। রাজিব শহরে গাড়ির ব্যবসায় করেন। দীর্ঘদিন তারা ফরিদপুর শহরে বসবাস করেন। স্ত্রী তানিয়া আক্তারের বাড়ি শহরের গোয়ালচামট রথখোলা এলাকায়। এই দম্পতির ৯ বছর ও ২ বছরের পুত্র সন্তানের পর ৩য় পুত্র সন্তান জন্ম নিলো।

গত রাতে তানিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিজারের পর মা ও শিশু সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন ডা. দিলরুবা জেবা।

শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আক্কাস হোসেন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন।

পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, ফুটফুটে পুত্র সন্তান উপহার পেয়ে তারা অনেক খুশি। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে জন্ম হওয়ায় নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে তার নাম রাখবো।

বাবা রাজিব বলেন, আমি গাড়ির ব্যবসার কাজে বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকি। এজন্য বাসায় ফিরেই আগে স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ নিতাম। তবে আমার স্ত্রীর ওপর আমার ভরসা অনেক। তার সক্ষমতাও অনেক। আমার পরিবারের লোকজন সবসময় তার কেয়ার নিতেন। সেই সাথে তানিয়ার মা বোন কাছাকাছি থাকায় তারাই সব সময় সাহস দিয়ে থাকতেন আমার স্ত্রীকে। এজন্য বলতে পারেন আমি অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতাম। 

তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতিনীতি সব সময় পালন করেছি, করবো। তবে কোন প্রকার কুসংস্কার নিয়ে আমরা ভাবি না। ১১ বছর আগে তানিয়ার সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় আমাদের। আমাদের বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদি এলাকায়। আমি ফরিদপুর শহরে প্রায় ২০ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করি। পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। যদিও ৩য় সিজার নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টার পরে নার্স এসে ছেলেকে কোলে তুলে দিলে প্রথমেই আমি আযান দেই। তারপর তার নানীর কোলে তুলে দেই। পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিনে জন্ম গ্রহণ করাটা আমাদের কাছে আনন্দের তবে সেটা দিনক্ষণ ঠিক করে নয়। ডাক্তারের পরামর্শে আজ সিজার অপারেশন হয়। সন্তানের আগমন ও মায়ের সুস্থতা নিয়ে আমাদের বেশি চিন্তা ছিল। পহেলা বৈশাখ আমাদের মাথাতেই ছিল না। আপনারাই বরং আমাদের বিশেষ উপলক্ষ করে দিলেন, স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমার নবাগত সন্তানকে পহেলা বৈশাখের আনন্দের স্বাদ পাইয়ে দিলেন। এজন্য সমকাল কর্তৃপক্ষকে আমি আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে সন্তান যখন তার জন্মদিন ও বৈশাখ নিয়ে আনন্দ করবে সেটাই আমার কাছে বেশি আনন্দের হবে।

শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আক্কাস হোসেন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন। আমাদের নার্স ও ডাক্তাররা নিয়মিত দেখভাল করছেন। তিনি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে ওই শিশুটিকে কোন প্রকার আয়োজনে অংশগ্রহণ করাতে পারিনি। হাসপাতালেও বৈশাখ উপলক্ষে কোন আয়োজন করা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ একজন আরেকজনকে উইশ করে থাকতে পারে। একই দিনে আমাদের হাসপাতালে আরও ৪টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন। রাত্রি নাগাদ আরও একটি বা দুটি শিশু জন্ম নিতেও পারে। আপনারা এসে হাসপাতালে নববর্ষ উৎসবকে মনে করিয়ে দিলেন। আগামীতে এ বিষয়গুলো নিয়ে কিছু করা যায় কিনা সেটা ভাবনায় রাখলাম।

নবজাতকের নানী বাবলী বেগম সমকালকে জানান, আমরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি কোন কুসংস্কার নয়। রোববার ডাক্তারের কাছে মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করাতে আসলে ডাক্তার পরামর্শ দেন সিজারের সময় হয়ে গেছে আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। ভর্তি হয়ে ডাক্তারকে জানালে তিনি সকালে অপারেশন করবেন বলে সময় দিয়ে যান। আল্লাহ আমাদের একটি সুস্থ পুত্র সন্তান দান করেছেন। এই সন্তানকে ভবিষ্যতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ। তবে তার জন্য এখন থেকেই কোনো লক্ষ্য ঠিক করে দিতে চাই না, যে তোমাকে এটা বানাবো বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাবো, বা এটা হতে হবে বা ওটা হতে হবে এরকম টা নয় আমাদের কাছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ