তিস্তা বাঁচানোর পদযাত্রায় হাজারো মানুষ
Published: 18th, February 2025 GMT
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে পদযাত্রা শুরু করেছে তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি। নদীপারের ১১টি পয়েন্টে সোমবার থেকে অবস্থান নেওয়া মানুষজন এ পদযাত্রা করছেন। এ পদযাত্রায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ তিস্তাপাড়ের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রায় সংহতি জানিয়ে এতে অংশ নিয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। গণপদযাত্রাটি লালমনিরহাট প্রান্তের তিস্তা ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে রংপুরের কাউনিয়া বাজারে গিয়ে শেষ হবে।
আয়োজক কমিটি জানায়, বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলায় তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ব্যতিক্রমধর্মী এ আন্দোলনে তিস্তাপারের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দাবি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগসহ বিশ্ব পরিমণ্ডলে তিস্তার দুঃখ তুলে ধরা হচ্ছে।
শেষ দিনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আগের দিন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে তিস্তা রেল সেতুর লালমনিরহাট প্রান্তে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া তিস্তার পয়েন্টের গণসমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ অশ নেন।
আয়োজক সূত্র জানায়, কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিস্তা নদীবেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এটি রংপুর অঞ্চলের তিস্তাপারের বঞ্চিত মানুষের আন্দোলন। এই আন্দোলন জনদাবিতে পরিণত হওয়ায় এতে নদীপারের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। আশা করছি এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারবো, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদয ত র পদয ত র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সংঘাতের পুরাতন সংস্কৃতি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে মঙ্গলবার ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে যেই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। পূর্বের ন্যায় শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের মহড়া কেবল নিন্দনীয়ই নহে, একই সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশের জন্যও মন্দ বার্তাবহ।
ইতোপূর্বে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যেইরূপ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করিয়াছিল, সেই কারণে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনরূপে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। গণঅভ্যুত্থানের ‘স্পিরিট’ হইল শিক্ষাঙ্গনে সকল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহাবস্থান বজায় থাকিবে এবং প্রত্যেকে স্বীয় কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করিতে পারিবে। কিন্তু বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করিয়া কুয়েটে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটিয়াছে। আমরা মনে করি, শিক্ষাঙ্গনকে এই ধরনের সংঘাতমুক্ত করিতেই হইবে।
ইতোমধ্যে কুয়েটের ঘটনার প্রভাব দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়িয়াছে, যেইখানে মঙ্গলবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরস্পরকে দায়ী করিয়া বিক্ষোভ করিয়াছেন ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী। সামাজিক মাধ্যমেও এই ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হইয়াছে। কুয়েটের সংঘর্ষে প্রকাশ্যে অস্ত্র বহনের ছবি যদ্রূপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হইয়াছে, তদ্রূপ সমকালসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও আসিয়াছে। অস্ত্রের ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করিয়াছে। স্বস্তির বিষয়, অস্ত্র হস্তে থাকা ব্যক্তি যুবদল নেতারূপে চিহ্নিত এবং তাহাকে দল হইতে বহিষ্কার করা হইয়াছে। তবে কুয়েটের সংঘাতে যেইভাবে বহিরাগতরাও যুক্ত হইয়াছে, উহাও বড় উদ্বেগের বিষয়।
মঙ্গলবারের সংঘাতের পর সেইখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ও সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ পাঁচ দফা দাবি জানাইয়াছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবির মুখে অবশেষে বুধবার কুয়েটের সিন্ডিকেটের সভায় সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের যেই সিদ্ধান্ত লইয়াছে, উহাকেও আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ফিরাইতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তৎসহিত ছাত্র সংগঠনগুলিরও দায়িত্ব রহিয়াছে।
বিশেষত মঙ্গলবারের কুয়েটের ঘটনার পর ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে পরস্পরকে দোষারোপ করিয়া যেই ধরনের তৎপরতা দেখা গিয়াছে, উহাতে তিক্ততা বৃদ্ধি বৈ হ্রাস পাইবে না। বরং এই ঘটনা হইতে শিক্ষা লইয়া ছাত্র সংগঠনগুলির উচিত হইবে পরস্পর আস্থাশীল হইয়া শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখা। ইতোপূর্বে আমরা দেখিয়াছি, সংঘাতের ফলে শিক্ষাঙ্গনে জীবনহানি ঘটিয়াছে। এমনকি যেই প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়া থাকে, উহা দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কেও প্রশাসন বন্ধ করিয়া দিয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার পরিবেশ ফিরাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলিয়া দিতে হইবে।
স্মরণে রাখিতে হইবে, শিক্ষাঙ্গনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পূর্বের ধারার ছাত্র রাজনীতি আর দেখিতে চায় না। লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতির কারণে ইতোপূর্বে অধ্যয়নের পরিবেশ বিনষ্ট হইয়াছিল। আবাসিক হলগুলি পরিণত হইয়াছিল ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে। গণকক্ষ, নির্যাতন কক্ষ তৈয়ারের কারণে হলগুলিতে ছাত্রদের প্রাণহানির অঘটনও ঘটিয়াছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে সেই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসিয়াছে।
বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে যেই পরিবেশ বিরাজমান, উহা কোনোভাবেই বিনষ্ট করা চলিবে না। এই ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম বৃহৎ সংগঠনরূপে ছাত্রদলকে দায়িত্বশীল হইতে হইবে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবিরসহ সকলকেই অগ্রসর হইতে হইবে। সহাবস্থান ও প্রত্যেকের কার্যের স্বাধীনতা পরস্পরকে নিশ্চিত করিতে হইবে। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলিও সেই বাস্তবতা মানিয়া লইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।