বান্দরবানে লামা ফাঁসিয়াখালী এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া ২৬ রবার শ্রমিক মুক্তি পেয়েছেন। ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৩টার দিকে ফাঁসিয়াখালী মুরুংঝিরি পাড়া এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে, গত রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফাঁসিয়াখালীর ছয়টি রাবার বাগান থেকে ২৬ শ্রমিককে অপহরণ করা হয়েছিল। 

আরো পড়ুন: লামায় ২০ রাবার শ্রমিককে অপহরণের অভিযোগ 

আরো পড়ুন:

বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় জেলেকে সাগরে নিক্ষেপ, আটক ৬

অপহৃত স্কুলছাত্রী উদ্ধার, গ্রেপ্তার এক

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে অপহরণের শিকার ২০ জন শ্রমিকের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- মো.

ফারুক (২৬), মো. আইয়ুব আলী (২৬), মো. সিদ্দিক (৪০), মো. আব্দুল খালেক (২০), আব্দুল মাজেদ (১৭), মনিরুল ইসলাম (৩০), জিয়াউর রহমান (৪৫), মো. মোবারক (২৫), মো. হারুল (৩০), সৈয়দ নুর (২৮), রমিজ উদ্দিন (৩০), মো. কায়ছার (৩৮), মো. মনির হোসেন (৩৫), মো. ইমরান (১৭), মঞ্জুর (৩০), আফসার আলী (২৫), মো. খাইরুল আমিন (৩০), আবু বক্কর (২৯), আবদুর রাজ্জাক (৩৩) ও মো. মবিন (২৫)। তারা সবাই কক্সবাজার জেলার রামু, ঈদগাহ এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। মুক্তি পাওয়া বাকি ছয়জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

এলাকাবাসী জানান, ছয় বাগানের মালিক অপহৃত ২৬ জন শ্রমিকের জন্য অপহরণকারীদের ১০ লাখ টাকা দেন।

মো. ফোরকান নামে রাবার বাগানের এক মালিক বলেন, “দশ লাখ টাকা মুক্তিপণে শ্রমিকদের ছেড়ে দিয়েছে। অপহৃতদের মুক্তি দেওয়ার আগে অনেককে মারধর করা হয়েছে। বর্তমানে তারা কক্সবাজার জেলার ঈদগাহ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।” 

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল করিম বলেন, “অপহৃত শ্রমিকদের উদ্ধারে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছিল। মঙ্গলবার ভোরে অপহরণকারীরা শ্রমিকদের ছেড়ে দেয়। মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

ঢাকা/চাইমং/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপহরণ অপহ ত

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের জন্য কাঁদছিল শিশুটি, অপহরণকারী ভেবে বাবাকে পেটালেন জনতা

কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া সওদাগরপাড়ার সোহেল মিয়ার (৩০) সঙ্গে প্রতিবেশী সাবিনা আক্তারের (২৫) বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে। এই দম্পতির তিন সন্তান। কিছুদিন আগে সোহেলকে তালাক দেন সাবিনা। সন্তান রয়ে যায় বাবার কাছে। তিন বছর বয়সী রাইসা মায়ের কাছে যেতে অস্থির।

রাইসার জন্য স্ত্রীর খোঁজে বের হন সোহেল। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে রাইসাকে নিয়ে সোহেল একই জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করার সময় মায়ের জন্য কান্না করছিল রাইসা।

শিশুটির কান্না দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে অপহরণকারী ভেবে সোহেলকে বেঁধে বেধড়ক পেটান তাঁরা। এ সময় রাইসা আব্বা আব্বা বলে কান্না করলেও জনরোষ থেকে রক্ষা পাননি সোহেল। ‘এই ভাই, এই ভাই আমার কথা হুনুইন’ বলে বারবার ক্ষুব্ধ জনতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান সোহেল। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রমাণ হয় সোহেল অপহরণকারী নন। কোলে থাকা শিশুটি তাঁরই মেয়ে।

শিশুকন্যার সামনে বাবাকে পেটানোর ঘটনাটি ঘটে গতকাল রোববার বিকেলে কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের তাতারকান্দিতে। পুলিশ রাত ১০টার দিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে সোহেলকে তুলে দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, খুবই দুঃখজনক, কষ্টদায়ক। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হতেই পারে। সন্দেহ হলেই প্রমাণ ছাড়া বিচার শুরু করে দেওয়া বড় অন্যায়, বড় ভুল। সোহেলের ক্ষেত্রে তা–ই হয়েছে। রাতেই সোহেলের মা, ভাইসহ আরও অনেকে থানায় এসে দুজনকে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মায়ের সঙ্গ বঞ্চিত রাইসাকে শান্ত রাখার জন্য সোহেল তাকে বেশি বেশি আদর করতেন। তাতেও কাজ হচ্ছিল না। এ কারণে রাইসাকে সঙ্গে নিয়েই সাবেক স্ত্রীর খোঁজে বের হয়েছিলেন সোহেল। ভৈরবে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাইসার মা থাকতে পারেন ভেবে কয়েক দিন আগে রাইসাকে নিয়ে সেখানে যান সোহেল; কিন্তু তাঁকে পাননি। গতকাল ভৈরব থেকে বাড়ি ফেরার সময় আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।

সোহেলের মা নিয়া শাহ বেগম থানায় এসে আহত সোহেলকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি হুনছি নাতি আমার আব্বা আব্বা করছিল। আব্বার কাছে যাইতে চাইছিল।’ নিয়া শাহর প্রশ্ন, ‘তাতেও কি মানুষের বুদ্ধিতে কিছু ধরে নাই! নাতির কথা না হুইনা সবাই আমার পুতেরে মাইরা ফালাইতে চাইল?’

ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথমত শিশুটি হাউমাউ করে কান্না করছিল। দ্বিতীয়ত শিশুটির বাবার চেহারা দেখে স্বাভাবিক মনে হয়নি। ধরার পর বিশ্বাস করার মতো করে কিছু বলতে পারেননি। শিশুটিও তখন কেবল কান্না করছিল। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। এরই মধ্যে লোকজন ভিডিও করে এবং শিশুর অপহরণকারী ধরা শিরোনাম দিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করতে থাকে। মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন সচেতন কয়েকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত এসে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, বাবাকে মারতে দেখে শিশুটির কান্না করে আব্বা আব্বা বলছিল। তখন বোঝা উচিত ছিল।

মুক্ত হওয়ার পর সোহেল বলেন, ‘তাঁরা (ক্ষুব্ধ জনতা) আমার কোনো কথাই হুনে নাই। রাইসা আমার মাইয়া—এই কথাটা কওয়ার সুযোগ দেয় নাই। যে যেমনে পারছে মারছে আর ভিডিও করছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড়ে শণ কাটতে গিয়েছিলেন যুবক, অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
  • অপহরণকারী আখ্যা দিয়ে বাবাকে পেটাচ্ছিল, পাশে কাঁদছিল শিশু রাইসা
  • মেয়েলি কণ্ঠে সম্পর্ক করে অপহরণ, যুবক গ্রেপ্তার
  • যশোর থেকে অপহৃত যুবক গোপালগঞ্জে উদ্ধার, অপহরণকারী আটক
  • টেকনাফে যুবক অপহরণ, দশ লাখ মুক্তিপণ দাবি  
  • টেকনাফে পাহাড়ি এলাকায় দিনমজুর অপহৃত
  • মায়ের জন্য কাঁদছিল শিশুটি, অপহরণকারী ভেবে বাবাকে পেটালেন জনতা
  • স্কুলছাত্রী অপহরণের মামলা করায় পরিবারকে হুমকি