জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের মত নিয়েই ফল ঘোষণা, আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি আছে: উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন
Published: 18th, February 2025 GMT
প্রাথমিকে শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা যোগদানের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবির প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহানুভূতিশীল। এসব প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ কথা বলেছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা এ কথা বলেন ।
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘তাঁদের (আন্দোলনকারীরা) বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রায় হয়েছে। যেটিতে তাঁরা ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে আপিল করা হয়েছে । যেহেতু এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয় তাই প্রশাসনিকভাবে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই।’
তাঁদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন ফল ঘোষণা করা হয়েছে তখন শুধু মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে ফল ঘোষণা করেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েই ফল ঘোষণা করা হয়েছে । ফলে তাঁরা মনে করছেন আইনি কাঠামোতেই কাজগুলো করা হয়েছে । সে হিসাবে তাঁরা (আন্দোলনকারী) যেটা চাচ্ছেন তাদের সঙ্গে সহানুভূতি রয়েছে। কারণ সরকার মনে করছে আইনসম্মতভাবেই করা হয়েছে ।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীরা আজ ১৩তম দিনের মতো শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ফলাফল ও নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর আজ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তাঁরা এই শুনানির দিকে তাকিয়ে আছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁরা দিনে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন, আর রাতে থাকেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। এ কর্মসূচিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের চাকরি ফেরত প্রত্যাশীরা অংশ নিচ্ছেন। আন্দোলন চলাকালে কয়েকবার পুলিশ তাঁদের ওপর জলকামান থেকে পানি ছুড়েছে, লাঠিপেটা করেছে বলেছেন তাঁরা।
তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন।
নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের ফলাফল ও নিয়োগপত্র প্রদান-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট চূড়ান্ত ফলাফল ও নির্বাচিতদের নিয়োগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে গত সপ্তাহে আপিল বিভাগে আবেদন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ ন ভ ত উপদ ষ ট সরক র ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
শ্বশুরপক্ষের কম লোককে দাওয়াত দেওয়ায় জামাতার বাড়িতে হামলা, আহত ৯
‘ধর, ধর’ চিৎকারে গ্রামের অলিগলিতে হঠাৎ মুঠোফোন আর টর্চলাইটে আলোর ঝলকানি। মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন গ্রামবাসী ছুটছেন সুমন হোসেন নামের একজনের (২৫) বাড়িতে। তাঁদের কারও হাতে লাঠিসোঁটা; আবার কেউ কেউ সঙ্গে এনেছেন দা-বঁটি।
সুমনের বাড়িতে গিয়ে গ্রামবাসীরা দেখেন, ভাঙচুরের কারণে ঘরের টেলিভিশন, রান্নার প্রেশার কুকারসহ আসবাবপত্রের তছনছ অবস্থা। সুমনসহ তাঁর পরিবারের অন্তত পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রামবাসীর ভুল ভাঙে এবার। জানতে পারেন, ডাকাত নয়; সুমনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হামলায় বাড়িটিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আকিকার অনুষ্ঠানে শ্বশুরপক্ষের কম লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ার জেরে এ ঘটনার সূত্রপাত।
গতকাল শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন সুমন হোসেন ও তাঁর বাবা সোলায়মান হোসেন, মা আকতারা বেগম, ছোট বোন উম্মে হাবিবা, মামা রাশেদুল ইসলাম ও আবু সাঈদ। গ্রামবাসীর পাল্টা হামলায় সুমনের শ্বশুরপক্ষের অন্তত চার সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সুমনের শ্যালিকা ইয়াসমিন আক্তার ও তাঁর বন্ধু হাবিবুর রহমান, আরিফুল ইসলাম ও আল রিমন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে সুমন হোসেনের ছেলের আকিকার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে তিনি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দেন। কিন্তু তাঁর শ্বশুরপক্ষের কম লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ায় সুমনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে ওই রাতেই স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন সুমন। এটি দেখে জেসমিনের বোন ইয়াসমিন আক্তার তাঁর পরিবারের লোকজনকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। পরে সুমনের শ্বশুর অছিম উদ্দিন প্রায় অর্ধশত মানুষ নিয়ে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে সুমন, তাঁর বাবা, মা, ছোট বোন ও দুই মামাকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া বাড়ির আসবাবও ভাঙচুর করেন তাঁরা। গ্রামের মসজিদের মাইকে তখন ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেন, ডাকাত পড়ার খবরে গ্রামের লোকজন সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শ্বশুরপক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দেন। পরে ছয়-সাতজন যুবককে আটক ও মারধর করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের সমঝোতায় আটক যুবকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। গ্রামবাসীর হাতে আটক যুবকেরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’