বন্ধ পাটকলের কর্মজীবীদের বেতন দিতে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ
Published: 18th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) ও এর আওতাধীন উৎপাদন বন্ধ ঘোষিত মিলসমূহের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২০২৪ সালের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৩৫ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
২০২৪ সালের আগস্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ মাসের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩.
২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে বিজেএমসি'র অধীন ২৫টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর ১০৪৭ জন কর্মকর্তা ও ১৬৫২ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি বিজেএমসি এবং মিলসমূহের নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়। পরবর্তীতে বিজেএমসি'র তহবিলে নগদ টাকার স্থিতি কম থাকায় ও যথাসময়ে বেতনভাতা না পাওয়ায় ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনসহ ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে শিল্প কলকারখানাসমূহে শ্রমিক অসন্তোষ ও ক্ষোভ নিরসনের লক্ষ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা পরিচালন ঋণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বিজেএমসি'র জনবল যৌক্তিকীকরণসহ অতিরিক্ত জনবলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ বা করপোরেশনে আত্মীকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন করে অর্থ বিভাগকে অবহিত করার শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেএমসি'র জনবল বিষয়ে মতামত সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়।
অর্থ বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সারসংক্ষেপটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন ছিল। বন্ধ ঘোষিত কারখানার উৎপাদন না থাকার পরও ২৬৯৯ জনবলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তখনও হয়নি।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে এর আগে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ ও অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে বিজেএমসি'র অধীন ২৫টি পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে মিলের শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে মিলগুলো ইজারা ভিত্তিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে বিজেএমসি'র অধীন ১৪টি মিল ইজারা প্রদান করা হয়েছে যার মধ্যে ৭টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বন্ধ ঘোষিত ২৫টি জুটমিলের শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন পাওনাদি পরিশোধ বাবদ অর্থ বিভাগ থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৯০৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৯৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৯ হাজার ২০৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। এছাড়া, বিদ্যমান বিভিন্ন পাটকলগুলোর বকেয়া বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বিজেএমসি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদেরকে সরাসরি রাজস্ব বাজেটের অর্থ প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিজেএমসির'র বিদ্যমান জনবল আত্মীকরণ বা অন্য কোনোভাবে প্রক্রিয়া গ্রহণ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন থাকায় আগের মত তাদেরকে অর্থ বিভাগের বাজেটের অধীন পরিচালন ঋণ' খাত থেকে বেতন-ভাতার বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বিজেএমসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো—বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না; অর্থ ব্যয়ে সরকারের বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ বিজেএমসি'র অনুকূলে ‘পরিচালন ঋণ; হিসেবে গণ্য হবে, যা আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে ষান্মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র বন ধ ঘ ষ ব জ এমস
এছাড়াও পড়ুন:
আমদানি-রপ্তানি কমলেও রাজস্ব বেড়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কমলেও বেড়েছে রাজস্ব আদায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) বিগত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৬৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জানা গেছে, আইআরএম ও আনস্টপিং দলের কঠোর নজরদারির কারণে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা রোধ করায় এই সফলতা এসেছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ বন্দরের ১৭ নম্বর শেডে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানি করা প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ফেব্রিক্স আটক করা হয়। গত ৫ জানুয়ারি অর্ধকোটি টাকার অবৈধ পণ্য আটক করা হয়। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স বাতিলসহ আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা। আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে পাসপোর্ট যাত্রীদের আনা ১২ হাজার ৩৪২টি চালান (ডিএম) আটক করা হয়। যা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। এখান থেকে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুল গনি।
চলতি অর্থবছরের ওই ৯ মাসে ভারতে প্রায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ টন পণ্য রপ্তানি হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ টন পণ্য। এবার ১০ হাজার ২৭২ টন পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ভারত থেকে প্রায় ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ২৯ টন পণ্য আমদানি হয়। গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় ১২ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২৯ টন পণ্য। হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ টন কম আমদানি হয়েছে।
সূত্র জানায়, পণ্য আমদানি কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩৬৬ দশমিক ১৫ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সেই আলোকে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৩২ দশমিক ৩ কোটি টাকা; সেখানে আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা।
যার মধ্যে জুলাই মাসে ৪১৩ দশমিক ২২ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৪০১ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৮৯ দশমিক ১১ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৫২৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ৬১৪ দশমিক ৭১, ডিসেম্বর মাসে ৭৭৮ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা, জানুয়ারি মাসে ৬২১ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮১৮ দশমিক ৫ কোটি টাকা এবং মার্চ মাসে ৭৭০ দশমিক ১১ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খাইরুজ্জামান মধু বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে ভারত থেকে আমদানি কিছুটা কমলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, গত তিন মাস বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল চালু ও বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও বাণিজ্য সহজীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এতে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেকটা গতি ফিরেছে।
তিনি জানান, হাসিনা সরকারের শেষ দিকে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে পণ্য কম আমদানি হয়েছে। সম্প্রতি ডলার সংকট কেটে যাওয়ায় আমদানি আগের মতো স্বাভাবিক হচ্ছে।