ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট
Published: 18th, February 2025 GMT
ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার রাত দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে যানজট শুরু হয়ে ধীরে ধীরে তিন দিকে যানজট বাড়তে থাকে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে যানজট তুলনামূলকভাবে কমলেও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।
এর আগে আজ সকাল ছয়টার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর থেকে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এ জট ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের কয়েক হাজার যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে তৃতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী যাত্রীবাহী একটি বাস গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ইসলামাবাদ এলাকায় কাত হয়ে মহাসড়কের ওপর আছড়ে পড়ে। এরপর ওই এলাকা থেকে যানজট শুরু হয়। ধীরে ধীরে যানজট ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়ে।
সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ভারতকে ট্রানজিট–সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ পাঁচ বছর ধরে চলছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানে ধীরগতিতে কাজ চলছে। এটিকেও যানজটের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এর মধ্যে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারদিকে আছে ছোট–বড় অসংখ্য গর্ত। এ গর্তের ওপর দিয়ে যানবাহন চলে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে। এতে একদিকে ঢাকা-সিলেট ও অন্যদিকে চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরে এসে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকার ছোট-বড় গর্ত অতিক্রম করতে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে ৮ থেকে ১০ দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। হাইওয়ে পুলিশ ও সরাইল থানার পুলিশ যানজট নিরসনে তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে কিছুটা থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
সকাল ৯টার দিকে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মোস্তফা (৩৩) বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকায় বলেন, বগুড়া থেকে আলু নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এসেছেন। ভোরবেলা সরাইল বাজারের দিকে যাচ্ছেন। এই সামান্য পথটুকুই এগোতে পারছেন না। সকাল নয়টার আগে মাল নামানোর করার কথা। কিন্তু কখন যেতে পরবেন, তা জানেন না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একদিকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকায় মহাসড়কে অসংখ্য গর্ত, অন্যদিকে গোলচত্বরের আশপাশের ফুটপাত ও সড়কের অংশ আছে অবৈধ দখলে। এগুলো উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় এক নেতার বাধা আসে, তাই পারা যায়নি। অবৈধ দখল ও এসব গর্তের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে যানবাহন চলে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে, কিন্তু এই স্থানে এসে যানবাহনগুলোকে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে চলতে হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় দ র ঘ য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ
রৌদ্রকরোজ্জ্বল বৈশাখী দিন ফিরে এল আবার। সুরে-বাণীতে, সাজসজ্জায়, আহারে-বিহারে, আনন্দ-উল্লাসে আজ সোমবার বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নেবে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের সব মানুষ। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেরে ফেলে সবার কল্যাণ কামনায় উদ্যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে আবাহন জানিয়ে বহুকণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...।’
বাংলা নববর্ষের চেয়ে বড় কোনো সর্বজনীন উৎসব দেশে আর নেই। এ কারণে মানুষে মানুষে মহাপ্রাণের মিলন ঘটানোর বর্ষবরণের এই উৎসব গভীর তাৎপর্যময় হয়ে আছে আমাদের জীবনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বর্ষবরণ উৎসব বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য তাই ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
মূল প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয়ভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। উৎসব অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সব জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ছায়ানট।
রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে। এই শোভাযাত্রার যে মোটিফগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্যে
২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামের মোটিফটি শনিবার ভোররাতে কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরও তাদের শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্যভাবেই পথে নামবে পয়লা বৈশাখ সকালে।
পয়লা বৈশাখের উৎসব গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যে উন্মেষ ঘটেছিল, তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার প্রতিবাদে বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব উদ্যাপিত হয়। রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট প্রথমবারের মতো আয়োজন করে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। কালক্রমে বর্ষবরণ উৎসবে যুক্ত হয় আরও অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। চারুকলার শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্য করে তোলে আয়োজন। বহু সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ষবরণ বহু প্রাণের বিপুল উৎসবে পরিণত হয়।
বাংলা বর্ষবরণের উৎসব যত আড়ম্বর, উৎসাহের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়, ব্যবহারিক জীবনে বাংলা সনের প্রয়োগ তেমন ব্যাপক নয়। প্রাত্যহিক জীবনের কাজকর্ম, শিক্ষা, ব্যবসা—সবই গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে বাংলা দিনপঞ্জি পুরোপুরি অব্যবহৃতও নয়। কৃষকেরা চাষাবাদ, ফসল রোপণ, ফসল তোলার ক্ষেত্রে বাংলা সনের হিসাব অনুসরণ করেন। অনেক ধর্ম সম্প্রদায়ও তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে। কাজেই সমাজে নানা ক্ষেত্রে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রয়োগ রয়েছে। সে কারণে নতুন বছর শুরু হলে নতুন প্রত্যাশা নিয়েই মানুষ তাকে বরণ করে নেয়।
নতুন বছরকে বরণ করার রীতি পৃথিবীর বহু দেশের সংস্কৃতিতে বহমান। আমাদের দেশে বছরের পয়লা দিনটিকে কেন্দ্র করে এই উৎসবে তুলে ধরা হয় দেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। রাজধানীতে রমনার বটমূলে এবার ৫৮তম বারের মতো ছায়ানট আয়োজন করবে তাদের বর্ষবরণের প্রভাতি অনুষ্ঠান। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভৈরবীতে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রায় দুই ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান।
এ ছাড়া ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার আয়োজনে সকাল ৬টায় শুরু হবে সহস্রকণ্ঠের গানে গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল নয়টায়। আগেই জানানো হয়েছে, এবার শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকগুলো নিয়ে অংশ নেবেন। শোভাযাত্রাটি টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে।
সকাল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হবে বিসিকের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা। এ ছাড়া বেলা সাড়ে তিনটা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে থাকবে একক ও দলীয় আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেলা তিনটা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে চলবে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় শুরু হবে বর্ণাঢ্য ড্রোন শো।
এসব প্রধান অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেক এলাকাভিত্তিক এবং বহুতল আবাসিক ভবনগুলোতে ছোট ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বরাবরের মতো ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে অনেক সংগঠন শহর ঘুরে সংগীত, আবৃত্তি পরিবেশন করবে।
রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রবাসী বাঙালিরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব অনুষ্ঠানের সঙ্গেও দেশবাসীর এক রকমের সংযোগ ঘটে। এমন নানা আয়োজন উদ্যোগের ভেতর দিয়ে কালক্রমে বাংলা নববর্ষের উৎসব আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। প্রসারিত হচ্ছে বিপুল পরিসরে।