রাতে জেগে ওঠে বালুমহল, প্রতিদিন বিক্রি হয় কোটি টাকার বালু
Published: 18th, February 2025 GMT
দিনের বেলায় খুব একটা দেখা না গেলেও, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেই জেগে ওঠে পাবনার সব অবৈধ বালুমহল। সারারাত ধরে চলে নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। যত্রতত্রভাবে বালু তোলার কারণে প্রতি বছর নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় চলা বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা জানান, আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে বালু উত্তোলন চললেও এখন এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এলকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা নদীর পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ভবানীপুর, দোগাছী ইউনিয়নের চর বলরামপুর, ভাঁড়ারা ইউনিয়নের দড়ি ভাউডাঙ্গি, চরতারাপুর ইউনিয়নের দিঘী গোয়াইলবাড়ি, শুকচর, সুজানগর উপজেলার চর ভবানীপুর, বরখাপুর, উদয়পুর, হাট মালিফা, নাজিরগঞ্জ, সাগরকান্দি, বেড়া উপজেলার ঢালারচর, নগরবাড়ি, চাকলা, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, লক্ষীকুণ্ডা এলাকাসহ জেলার অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। বালুবাহী ট্রাকগুলো জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের সামনে দিয়েই বাধাহীনভাবে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
আরো পড়ুন:
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অবরুদ্ধ
নোয়াখালীতে ইউপি সদস্যকে মারধর করল যুবদল-ছাত্রদল
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, “গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে আবার শুরু হয়েছে। কৌশল পাল্টিয়ে এখন দিনের বদলে রাতে তোলা হচ্ছে বালু। আগে এইসব বালু মহলে নেতৃত্ব দিতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে যাওয়ার পর এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় চলছে বালু উত্তোলন।”
রাতে বালু পরিবহন করা হয় ট্রাকে
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতিদিন একেকটি পয়েন্টে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বালু বিক্রি হয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার বালু বিক্রি হয়। বালু বিক্রির টাকার একটি অংশ চলে যায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন মহলের পকেটে। ফলে মাঝে মধ্যে জেলা বা উপজেলা প্রশাসন দুই-একটি লোক দেখানো অভিযান চালালেও বেশিরভাগই থাকে নজরের বাইরে।
চর ভবানীপুর এলাকার কৃষক সাঈদ প্রামাণিক ও এস্কেন্দার হোসেন জানান, আগে নদী শুকিয়ে গেলে জেগে ওঠা চরে বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করতেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে তারা ফসল আবাদ করতে পারছেন না। নদী শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বালু উত্তোলন শুরু হয়। ফসলি জমি নষ্টের পাশাপাশি রাস্তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন সবাই। কিছু বলতে গেলে বালু উত্তোলনকারীরা হুমকি দেন। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন প্রশাসনকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ প্রশাসনই যদি তাদের (বালু উত্তোলনকারী) সহযোগিতা করে তাহলে কে সহযোগিতা করবে?
এ বিষয়ে জানতে চর তারাপুর ও ভাঁড়ারা এলাকার কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বালু উত্তোলনে দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, “এটা তো বহুদিন ধরেই চলে আসছে। এখন হয়তো লোকালি ওরা করে, কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তো হচ্ছে না। এ বিষয়ে এতো ব্যস্ত হওয়ার কি আছে।”
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে কি বালু তোলা হয়নি? তখন কি সাংবাদিকরা নিউজ করেছে? তখন কোথায় ছিল তারা? তারপরও এগুলো তো প্রশাসন দেখে, আমরা হয়তো ওইভাবে দেখি না বা করিও না।”
নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান বলেন, “এটা তো লোকজনের বক্তব্য। আপনাদের এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও নৌ-পুলিশকে ধরতে হবে। এসব বিষয়ে মূল কাজটা তাদের। অভিযানের জন্য যদি জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে আমাদের কাছে ফোর্স চায়, আমরা ফোর্স দিয়ে দেই। আমার জানা মতে, আগে যেভাবে বালু উত্তোলন হতো, এবার তা হচ্ছে না।”
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আপনার মাধ্যমেই জানলাম। এছাড়া দুই-একটা মাধ্যমেও শুনেছি যে রাতে বালু তোলা হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বলে দিয়েছি। তারা ইতোমধ্যে কয়েকটি মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনা করেছে। আরো মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন ত কর ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েটে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণের পর আবার ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে এসে শেষ হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্ররাজনীতির কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ছাত্ররাজনীতির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, বিএনপির দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস একসাথে, চলে না চলে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, হামলার ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। সরকারের একজন প্রতিনিধি আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেননি। ছয় দফার প্রতিটি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘোষণা দেন।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের উপাচার্য রাজনীতিমুক্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতির অনুপ্রবেশের অপচেষ্টায় জড়িত। ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে তিনি আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পরও ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন তিনি। যথোপযুক্ত প্রমাণ থাকার পরও কুয়েট ছাত্রদল, স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে তিনি স্বীকার করেননি।’
সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে আরেকজন বলেন, হামলার ঘটনায় যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে হামলার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো না। তাঁরা স্বাভাবিক শিক্ষাক্রমে ফিরে যেতে চান। প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ সমস্যার সমাধানের দাবি জানান তিনি।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তার আগে বিকেলে ‘রক্তাক্ত কুয়েট ১৮.০২.২৫’ শিরোনামে ছবি প্রদর্শনী করা হয়। ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীতে আহত শিক্ষার্থীদের ছবি ও শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করা হয়। গতকাল নতুন করে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেন শিক্ষার্থীরা।
গত মঙ্গলবার ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতে সংবাদ সম্মেলন করে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার বেলা একটার মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দেন তাঁরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। সভায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ওই ঘটনার তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই ঘটনায় বুধবার রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন।