গুলিবিদ্ধ চার যুবকের উন্নত চিকিৎসা দাবি, ফিরতে চান স্বাভাবিক কর্মজীবনে
Published: 18th, February 2025 GMT
মোটরসাইকেল মেকানিকের কাজ করেন আবদুল মজিদ আকন্দ (২৫)। দোকানের সামনে ফাঁকা জায়গায় রোদে তাঁকে কাজ করতে হয়। কিন্তু গায়ে রোদ লাগলেই শরীরের ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া করে। তখন অবস্থা এমন হয়, তাঁর শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। রাতে ঘুমাতে গেলেও সারা গায়ে ব্যথা শুরু হয়।
বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন আবদুল মজিদ আকন্দ ওরফে বাবু। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরেছেন। সংসার চালাতে কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু শরীরের সমস্যা দূর হয়নি। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না তাঁর।
একই অবস্থা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত নাসির উদ্দিন (৩০), শাকিল রেজা (২৭) ও আবদুল মজিদ শেখের (২৭)।
গত বছরের ১৭ জুলাই দুপুরে শেরপুর পৌর শহরের ধুনট রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হন আবদুল মজিদ, নাসির উদ্দিন ও শাকিল রেজা। আর ৪ আগস্ট বিকেলে শেরপুর থানার সামনে দিয়ে মিছিল করে যাওয়ার সময় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হন আবদুল মজিদ শেখ।
মজিদ আকন্দের বাড়ি উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। শাকিল ও নাসিরের বাড়ি ওই ইউনিয়নের শুবলী গ্রামে। নাসির মোটরসাইকেল মেরামত করেন এবং শাকিল ইজিবাইক চালান। মজিদ শেখের বাড়ি শেরপুর পৌর শহরের খেজুরতলা এলাকায়। তিনি পানের দোকানি।
সম্প্রতি শেরপুর শহরের ধুনট রোড বাসস্ট্যান্ডে ওই চারজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, শরীরে ছররা গুলির যন্ত্রণায় প্রতিদিন অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। এর মধ্যেই সংসার চালাতে কষ্ট করে কাজ করতে হয়। যে টাকা আয় করেন, তা সংসার চালাতে শেষ হয়ে যায়; ওষুধ কেনার টাকা থাকে না।
কাজ করার সময় রোদ গায়ে লাগে। শরীরের যেগুলা জাগাত গুলি লাগিছিল, সেগুলা জাগাত চুলকায় আর জ্বালাপোড়া করে। আবার রাতের বেলায় বিছানায় শুইতে গেলে শরীরের এই গুলি লাগার জায়গাত ব্যথা শুরু হয়ে যায়। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। প্রতিদিনের জীবন কাটে অতিকষ্টে।মজিদ আকন্দ, গুলিবিদ্ধ যুবকমজিদ আকন্দ বলেন, ‘কাজ করার সময় রোদ গায়ে লাগে। শরীরের যেগুলা জাগাত গুলি লাগিছিল, সেগুলা জাগাত চুলকায় আর জ্বালাপোড়া করে। আবার রাতের বেলায় বিছানায় শুইতে গেলে শরীরের এই গুলি লাগার জায়গাত ব্যথা শুরু হয়ে যায়। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। প্রতিদিনের জীবন কাটে অতিকষ্টে।’
নাসির উদ্দিন জানান, তাঁর শরীরে ১৫০টি ছররা গুলি লেগেছে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বেশ কিছু ছররা গুলি বের করা হয়েছে। তবে শরীরে এখন অনেক গুলি আছে। প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।
আহত চারজন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে তালিকভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শাকিল রেজা, নাসির উদ্দিন ও মজিদ শেখ ১ লাখ ৭০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। মজিদ আকন্দ এখনো ফাউন্ডেশন থেকে টাকা পাননি। এর বাইরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি তাঁরা।
আহত চারজন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে তালিকভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শাকিল রেজা, নাসির উদ্দিন ও মজিদ শেখ ১ লাখ ৭০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। মজিদ আকন্দ এখনো ফাউন্ডেশন থেকে টাকা পাননি।শাকিল রেজা বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন ওষুধ কিনতে ২৫০–৩৫০ টাকা লাগবে, কিন্তু ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। তখন তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকেও ওষুধ দেয় না।
স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে চান শাকিল রেজা। তিনি বলেন, তাঁরা বেঁচে থাকার সুযোগ চান। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয় তাহলে তাঁরা ছররা গুলির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। স্বাভাবিকভাবে কর্মজীবনে ফিরে যেতে পারবেন।
শেরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন মন্ত্রী
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ভাঙা সিটের টিকিট বিক্রি করেছে এয়ার ইন্ডিয়া।
গতকাল শনিবার এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, এয়ার ইন্ডিয়া ‘যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা’ করছে।
তিনি জানান, ভাঙা সিটের ব্যাপারে বিমানের এক ক্রুকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁকে বলা হয়, সিটটিতে যে ত্রুটি রয়েছে, সেটি সংস্থাকে জানানো হয়েছিল। এর টিকিট বিক্রি না করতেও বলা হয়েছিল।
এক্সে শিবরাজ সিং লেখেন, ‘পুসার কিষাণ মেলা উদ্বোধন করতে আজ আমার ভোপাল থেকে দিল্লি আসতে হয়। সেখানে বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়। আমি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নাম্বার এআই৪৩৬ এ একটি টিকিট বুক করি। আমাকে ৮সি সিটটি দেওয়া হয়। বসতে গিয়ে দেখি সিটটি ভাঙা; নিচু হয়ে আছে। সেখানে বসতে অস্বস্তি হচ্ছিল।’ এনডিটিভি।