পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ নিয়ে অযথাই বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে মনে করছেন হরভজন সিং। সাবেক এ ভারতীয় স্পিনারের মতে, ২৩ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে একপেশে ম্যাচ হবে। যেখানে পুরোপুরি দাপট থাকবে ভারতের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উপমহাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ দু’দল একই গ্রুপে খেলছে।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এ লড়াইয়ে ভারতের আধিপত্যের পুরোপুরি নিশ্চয়তা দিয়েছেন হরভজন। তাঁর এই আত্মবিশ্বাসের কারণ, দু’দলের শক্তির ব্যবধান ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অধারাবাহিক পারফরম্যান্স। তাঁর মতে, ম্যাচে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে না, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে অযথাই হাইপ তোলা হচ্ছে। কারণ, এখানে আসলে কিছু হওয়ার নয়। ভারত বেশ শক্তিশালী একটি দল। আর পাকিস্তান সম্প্রতি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে। পাকিস্তান ভীষণ অধারাবাহিক একটি দল। আপনি যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকান এবং ভারতের ব্যাটার ও বোলারের সঙ্গে তাদের তুলনা করেন, তাহলে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়।’ 

ক্রিকেটে অতীতে ভালো খেলার রেকর্ড ভবিষ্যতে জেতার নিশ্চয়তা দেয় না। তার পরও ভারতকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হরভজন, ‘আসলে দুই দলের পার্থক্যটা বিশাল। ভারত অনেক শক্তিশালী একটি দল। আর বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়া পাকিস্তান তো একটি দুর্বল দল। তাদের বলার মতো আর কোনো ব্যাটার নেই। তাদের বোলিং ইউনিটও ফর্মে নেই। কিউইদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে তাদের বোলিং।’

তবে ফখর জামানকে ভারতের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন হরভজন, ‘পাকিস্তানের প্রধান ব্যাটার হলেন বাবর আজম। ভারতের বিপক্ষে তাঁর গড় ৩১। ভারতের বিপক্ষে রিজওয়ানের গড় ২৫। একজন ভালো ব্যাটারের গড় ৫০-এর আশপাশে থাকা উচিত। একমাত্র ফখর জামানের গড় ৪৬। সেই কেবল ভারতের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে পারে। সে ছাড়া বলার মতো আর কেউ নেই। ফাহিম আশরাফের গড় ১২.

৫, সৌদ শাকিলের ভারতের বিপক্ষে গড় মাত্র ৬। এমন ব্যাটিং লাইনআপ দেখে আমার বিশ্বাস হয় না যে তারা ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।’ 

আর রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল রানে ফিরেছেন বলে ভারত আরও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বলেও মনে করছেন হরভজন। আর বড় টুর্নামেন্টে বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলরা সব সময় রান করেন বলেও আত্মবিশ্বাসী তিনি।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আধিপত্যের দ্বন্দ্বে নষ্ট হওয়ার পথে ২৫০ বিঘার পাকা ধান

মাঠে বোরো ধানের ক্ষেত সোনালি রং ধারণ করতে শুরু করেছে। কৃষক কাটতে শুরু করেছেন কষ্টের ফসল। গ্রামাঞ্চলে রীতিমতো শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। কিন্তু নড়াইলের কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার কয়েকজন কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ পরিশ্রম করে ফলানো ফসলই যে ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি হত্যাকাণ্ডের জেরে প্রায় ২৫০ বিঘা জমির ধান নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দ্রুত কাটতে না পারলে ফসল নষ্ট হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
গত ১৫ মার্চ কালিয়ার হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামে হাসিম মোল্যা খুন হন। সিলিমপুর ও গাজীরহাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধ ছিল। এর জেরে স্থানীয় হাসিম মোল্যা ও মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু পক্ষের সঙ্গে জনি মোল্যা গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত হাসিমের বাবা কাদের মোল্যা নড়াইল-১ আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল হক মুক্তিকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গাজীরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম ঠান্ডুকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিপক্ষের প্রায় ২৫টি পরিবারের ১০টি বাড়িতে আগুন এবং ৩০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আসামিপক্ষের দাবি, এখন ধান কাটতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। কাটতে হলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হবে। একই অবস্থা লোহাগড়ার লাহুড়িয়ায়। মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক পরিবার বাড়িছাড়া। এলাকায় আসামিপক্ষের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
সিলিমপুরের ঘটনায় আসামি রউফ শেখের ছেলে আউলিয়া শেখ বলছিলেন, তাদের বংশের অন্তত ২০ একর জমির পাকা বোরো ধান কাটতে পারছেন না। শ্রমিক পাঠালে বাদীপক্ষের মুস্তাক মোল্যাসহ অনেকে তাদের জমি থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। বলছে, প্রতি বিঘার ধান কাটতে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমির পাকা ধান ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলিমপুর ও গাজীরহাটের প্রায় ৪০টি মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ লুট করেছে। এর মধ্যে তাদেরই ১০টি ঘের রয়েছে।
নিহত হাসিমের বাবা মামলার বাদী কাদের মোল্যার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেটে দেন। ফের ফোন করলে এক নারী রিসিভ করে পরে কথা বলবেন বললেও তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কালিয়া থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জমি থেকে ধান কাটা কি আমাদের দেখার বিষয়? এ বিষয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়।’
লোহাগড়ায় ঈদুল ফিতরের দিন গত ৩১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখ (৭৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর, বিভিন্ন সামগ্রী ও গবাদি পশু লুটপাট হয়। এখন বোরো ধান কাটা শুরু হলেও আসামিপক্ষের কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের অন্তত ৬০ বিঘা জমির ধান কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৬০ বিঘা জমির পাট পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের মনিরুল জমাদ্দার ও মিল্টন জমাদ্দার পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে লাহুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরান সিকদারকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন। লাহুড়িয়া পশ্চিমপাড়ার নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁর ভাই মামলার আসামি জাকির হোসেনের ৫০ শতাংশ জমির ধান পাকলেও কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দুই একর পাট সেচ ও পরিচর্যার অভাবে নষ্টের পথে। এক প্রতিবেশী তাঁর ভাইয়ের ৫ শতাংশ জমির গাছ কেটে ঘর তৈরি করবে বলে শুনেছেন।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হান্নান সিকদার রুনুর ভাষ্য, আসামিপক্ষের কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, ধান কাটবে কীভাবে? হত্যাসহ চারটি মামলা করেছে। আসামির সংখ্যা দেড় শতাধিক, তারা বাড়িছাড়া। ফলে ২০০ বিঘা জমির ধান কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
নিহত মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখের ভাতিজা শরিফুল ইসলাম বললেন, ‘আমাদের পক্ষের কেউ বাড়ি ভাঙচুর বা লুটের সঙ্গে জড়িত নয়। এলাকায় আসতে কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। যার ধান সেই কাটবে। সেখানে আমাদের বাধা দেওয়ার কী আছে।’
এলাকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো বলে দাবি লোহাগড়া থানার লাহুড়িয়া ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক তুহিনের। তিনি বলেন, যাদের নামে মামলা রয়েছে, তারা এলাকায় ঢুকতে পারছে না। আসামিপক্ষের এলাকায় প্রবেশ এবং জমির ধান কাটার বিষয়ে সমঝোতা হলে ভালো হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ