প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেদিন ডিসিদের সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শক্ত হাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন, পরদিন প্রথম আলোয় ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতায় চালক ও যাত্রীরা’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলো। কিছুদিন ধরেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির খবর প্রকাশিত হয়ে আসছিল। ধারণা করি, এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের মতো এখানেও সরকারপ্রধানের সদিচ্ছা ও মাঠের বাস্তব চিত্রের বিরাট ফারাক আছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। দিনের বেলায়ও মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও চলছে ডাকাতি।

মহাসড়কে চলাচলকারী কুমিল্লা অঞ্চলের হালকা যানবাহনের চালকেরা নিজেদের ভার্চ্যুয়াল গ্রুপে শেয়ার করা তথ্যের বরাত দিয়ে বলেছেন, গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে মামলা হয়নি। অপর দিকে শেষ ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কেওঢালা এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে একদল লোক বাস থামিয়ে প্রবাস থেকে আসা দুই যাত্রীকে নামিয়ে দেয় এবং মাইক্রোবাসে তুলে তঁাদের সর্বস্ব লুট করে। এই পথের ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের প্রধান লক্ষ্য বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে ৫ আগস্টের পর বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের কথা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা র‍্যাবের পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা। এ ক্ষেত্রে যে সড়ক–মহাসড়কে টহলের ঘাটতি আছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

রাজনৈতিক সরকারের আমলে অপরাধ কম দেখানোর জন্য থানা পুলিশ মামলা নিত না। সরকারের ওপর মহলকে দেখানো হতো সবকিছু ঠিক আছে। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও কেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে? এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা কী। সারা দেশে চলমান বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্টে এ পর্যন্ত কতজন চিহ্নিত ডাকাত ও ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে, সেই সংখ্যাও জানানো হোক। শুধু বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের ধরা যদি এই অভিযানের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাতে আটকের সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, অপরাধ কমবে না।  

কেবল ঢাকা–চট্টগ্রাম সড়ক নয়, দেশের প্রায় সব সড়ক–মহাসড়কের নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। বিশেষ করে দূরের পথে যাঁরা প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস নিয়ে চলাচল করেন, তাঁদের জন্য ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। গণপরিবহন বা বাস চলাচলের ক্ষেত্রে কিছুটা নজরদারি আছে। কিন্তু এসব পরিবহনে একেবারেই নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে।

ছয় মাস পর এসে পুলিশ নিষ্ক্রিয় বা বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় নেই —এ ধরনের অজুহাত দেওয়ার সুযোগ থাকে কি? আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার সড়ক–মহাসড়কে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করবে।  বিশেষ করে অপরাধপ্রবণ এলাকায় সার্বক্ষণিক টহল দিতে হবে। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ত্বকী হত্যা মামলা: আজমেরী ওসমানের গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর

নারায়ণগঞ্জে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাসুম শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশ দেন। এ ছাড়া আজ মামলার অন্য আসামিরাও আদালতে হাজিরা দিয়েছেন।

মামলায় হাজিরা দেওয়া আসামিরা হলেন আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুন, গাড়িচালক জামশেদ চৌধুরী, সহযোগী মামুন মিয়া, কাজল হাওলাদার, পারভেজ, শিপন মিয়া, ইউসুফ হোসেন লিটন, রিফাত বিন ওসমান ও তায়েব উদ্দিন (জ্যাকি)। কারাবন্দী আসামি কাজল হাওলাদার ছাড়া অন্য আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম প্রথম আলোকে বলেন, জামশেদ চৌধুরী গাড়িতে করে নিয়ে ত্বকীর লাশ ফেলে দিয়েছিলেন বলে জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আইনজীবীর উপস্থিতিতে আসামিকে ধার্য তারিখের আগে যেকোনো দিন র‍্যাব কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদ চৌধুরীকে এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁর গাড়িতে লাশ নিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। জামশেদ চৌধুরী উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আদালত আগামী ২৬ মে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত (ভ্রমর) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদের টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। তবে গত ১২ বছরেও অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়নি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মামলায় তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব ত্বকী হত্যা মামলায় নতুন করে আরও ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুন, গাড়িচালক জামশেদ চৌধুরী, সহযোগী মামুন মিয়া, কাজল হালদার, পারভেজ ও শিপন মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর চড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা সেলিম মাহমুদকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
  • ত্বকী হত্যা মামলা: আজমেরী ওসমানের গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির
  • যে প্রলোভনে মিয়ানমারে দুই বছর জেল খাটলেন ২০ কিশোর–তরুণ
  • সিরাজগঞ্জে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পুরোহিত গ্রেপ্তার
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা হতাশাজনক