বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে আদৌ কোনো অভিভাবক আছে কি না, তা যে একটি বড়সড় প্রশ্ন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনা বাবদ কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার পরও সেটি চালু করা যায়নি। তার কারণ হলো, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ১৪ মাস পার হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে কুষ্টিয়া ও আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ সুলভে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাঁদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছেন।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০১১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ থাকা এবং কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে এবং সেই সঙ্গে ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুরো নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে যেতে হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ ও ২০ শয্যার আইসিইউ রয়েছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা চালু আছে। হাসপাতালটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৪১৪ জন জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না।
প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, এক্স–রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন অস্ত্রোপচারকক্ষে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও আসবাব গুদামবন্দী করে রাখা হয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালকের দাবি, যাঁরা এসব কিনেছেন এবং কেনাকাটা ও রিসিভ করার দায়িত্বে যে কমিটি ছিল, তারা এগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে না। অথচ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক যে অভিযোগ করেছেন, সেটা অত্যন্ত গুরুতর। এসব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি নিয়ে দুই পক্ষের ঠেলাঠেলি চলায় কেউ বুঝিয়েও দিচ্ছে না, কেউ বুঝেও নিচ্ছে না। এই ঠেলাঠেলিতে একমাত্র যে লাভটা হচ্ছে তা হলো, প্যাকেটবন্দী যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর থেকে বড় দায়হীনতার পরিচয় আর কী হতে পারে?
যে মেডিকেল কলেজে ২০১১ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হতে কেন ১৫ বছর লেগে যাবে? কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু করার জন্য কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দুই দফা আন্দোলন করতে হয়েছে। স্বাস্থ্যের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের বধিরতার চিকিৎসা কে করবে? দয়া করে লোকবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালটি চালু করুন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রীকে খুনের পর পালাল স্বামী, পুলিশ বলছে পারিবারিক কলহ
পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর পালিয়েছে স্বামী। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের চাড়ালকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ছুরিকাঘাতে নিহত সীমা আক্তার কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দা মাহমুদুল হক করিমের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সীমা আক্তারকে ছুরিকাঘাত করে তার স্বামী মাহমুদুল হক। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে তিনটার দিকে মারা যান।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, মাহমুদুল হক উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের পিএইচপি গ্লাস তৈরির কারখানায় চাকরি করেন। সেই সুবাদে স্ত্রী সীমা আক্তারকে নিয়ে কারখানা কাছাকাছি চাড়ালকান্দি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন। রাতে কলহের জের ধরে স্ত্রী সীমা আক্তারকে ছুরিকাঘাত করেন মাহমুদুল হক।
আহত সীমার আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মাহমুদুল হক পলাতক রয়েছেন।