বিনা বেতনের বিদ্যালয়টিতে দূরের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় সাইকেলও
Published: 18th, February 2025 GMT
বিনা বেতনের বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের পোশাক দেওয়া হয় বিদ্যালয় থেকে। কেবল তা–ই নয়, দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য সাইকেলও দেওয়া হয়। এমন বিদ্যালয়ের দেখা মিলবে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নের বারোমাসিয়া গ্রামে।
বিদ্যালয়ের কথা শুরুর আগে বারোমাসিয়া গ্রাম সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। প্রত্যন্ত জনপদ। আশপাশে কোনো উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার পরেই থেমে যেত এখানকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন। ২০২০ সালে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বদলে যায় বারোমাসিয়া গ্রামসহ আশপাশের পাঁচ গ্রামের দৃশ্যপট।
বিনা বেতনের এই বিদ্যালয়ের নাম তৌহিদুল আনোয়ার হাইস্কুল। ভিন্ন ধরনের পাঠদান ব্যবস্থা, খেলাধুলা আর সাহিত্য–সংস্কৃতিতে জোর দেওয়া হয় এখানে। এসবের জন্য আছেন আলাদা শিক্ষকও। দিন কয়েক আগের এক সকালে বারোমাসিয়া গ্রামে গেলে চোখে পড়ে সার বেঁধে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী। কেউ কেউ সাইকেলে চেপেও যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দিকে যাত্রা করা শিক্ষার্থীরাই জানাল, বিদ্যালয় থেকে সাইকেল দেওয়া হয় তাদের। দূরে থাকে, এমন ৪০ জন শিক্ষার্থী এবার সাইকেল পেয়েছে।
সম্প্রতি বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, কোলাহলমুক্ত সবুজ ক্যাম্পাসে দৌড়ে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এক পাশে প্রশিক্ষকের কাছে কারাতে শিখছে একদল মেয়ে শিক্ষার্থী। সিঁড়ি বেয়ে তিন তলার হলরুমের দিকে পা বাড়াতেই কানে ভেসে আসে শিক্ষার্থীদের সমবেত সংগীতের সুর।
পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলার ওপর জোর দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে কারাতে শিখছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির তৌহিদুল আনোয়ার হাই স্কুলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার সেবা দেওয়া দ্রুত ও কার্যকর নিশ্চিত করাই লক্ষ্য: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, “জনগণকেন্দ্রিক বিচার সেবা প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সাধারণ জনগণের জন্য দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই সেমিনারের সময়সূচি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের সেমিনার সিরিজের পঞ্চম এবং রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সেমিনার।”
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থিদের জয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি
তিনি বলেন, “সেমিনারটি এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দেশ ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক ঐক্যমত্য গঠনের প্রচেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে, যা সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিচার বিভাগের বিস্তৃত এবং বিশদ খাতভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাবসমূহ প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবে সেগুলোর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির সহযোগিতায় আয়োজিত সংস্কার রোডশো এখন একটি শক্তিশালী গতি অর্জন করেছে। ফলে জেলা আদালত এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেসি নিজেদের সংস্কার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “২০২৫ সালের ১০ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী জেলা আদালত, মেট্রোপলিটন সেশন আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালু হওয়া হেল্পলাইন, যা সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন অনুসরণ করে চালু করা হয়েছে। রাজশাহীর এই উদ্যোগটি সুপ্রিম কোর্টের ১২ দফা নির্দেশনার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো জনগণকেন্দ্রিক বিচারসেবা প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সাধারণ জনগণের জন্য দ্রুত ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “এখন ময়মনসিংহ সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য হবে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের এখন সময় এসেছে, আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার।”
জেলা বিচার বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেসিকে তাদের নিজ-নিজ অবস্থান থেকে সংস্কারক এবং উদ্ভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির অভিভাষণে উপস্থাপিত সংস্কার কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স-স ক্ষেত্রে আন্তরিক হতে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলো জেলা বিচার বিভাগ এবং ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময় আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন এবং ভবিষ্যৎ সংস্কারের পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এই সংস্কার রোডশোগুলোর মাধ্যমে আমরা সঠিক প্রক্রিয়া এবং চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার কার্যকর পথ খুঁজে পেয়েছি।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমার বার্তা খুবই স্পষ্ট দায়িত্ব নিন। আমি আশা করি, এই বার্তা সারাদেশে শক্তিশালীভাবে প্রতিধ্বনিত হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার। সেমিনারে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তৃতায় ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস দেয় ইউএনডিপি।
ঢাকা/মিলন/সাইফ