ট্রাম্পের যে বিশ্বাসঘাতকতায় পুতিন এখন আরও সাহসী
Published: 18th, February 2025 GMT
গ্রাহাম গ্রিনের ১৯৫৫ সালের উপন্যাস দ্য কুইয়েট আমেরিকান-এ একজন সিআইএ এজেন্টের নাম অলডেন পাইল। পাইল মনে করে যে ভিয়েতনাম সংঘাতের সমাধান তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু তার অজ্ঞতা, অহংকার ও ষড়যন্ত্র শান্তি আনার বদলে কেবল নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। সে নিজেও মারা যায়। আজকের পৃথিবীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন সেই পাইল। তবে তাঁর শোরগোল অনেক বেশি।
চুক্তি করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প নিজেকে অসাধারণ দক্ষ বলে মনে করেন। আর নিজের এই প্রতিভা নিয়ে অহর্নিশ বড়াই করেন। অথচ তাঁর ‘শতাব্দীর সেরা’ উত্তর কোরিয়া চুক্তি ছিল এক তামাশা।
আফগানিস্তান তিনি তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছেন। ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁকে বারবার বোকা বানিয়েছেন। এখন ট্রাম্প আরও এক ব্যর্থ চুক্তির প্রস্তাব দিচ্ছেন—ইউক্রেনকে বিক্রি করে দেওয়া। আমেরিকার এই প্রেসিডেন্ট যেন এখন পুতিনের হাতের পুতুল।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার আগেই ট্রাম্প রাশিয়াকে যে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা ইউক্রেনের জন্য ভয়াবহ। একই সঙ্গে তা ইউরোপের নিরাপত্তা, ট্রান্সআটলান্টিক জোট এবং তাইওয়ানের মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্যও বিপজ্জনক। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ছাড়গুলোর মধ্যে আছে রাশিয়ার আগ্রাসনে দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড মেনে নেওয়া, কিয়েভের ন্যাটো সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করা, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহায়তা ও সেনা মোতায়েন বন্ধ করা। এগুলোর সবই একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা, একরকম আত্মসমর্পণের শামিল।
তিন বছর আগে বিনা উসকানিতে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী আগ্রাসন চালিয়েছিলেন পুতিন। অথচ ট্রাম্প এখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের সাহসী জনগণকেই দোষারোপ করছেন। তিনি ক্রেমলিনের প্রচারিত মিথ্যাকে পুনরাবৃত্তি করে কিয়েভে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলছেন, যা এক ভয়ংকর ভণ্ডামি। কারণ, রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী নিজেরাই নিয়মিতভাবে অন্য দেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রে ট্রাম্প সানন্দে পা দিচ্ছেন।
পুতিন হয়তো নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এমন ভাগ্য তাঁর কপালে জুটেছে! ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে ৯০ মিনিট ধরে ফোনে আলাপ করে, তাঁকে ‘বুদ্ধিমান’ আখ্যা দিয়ে, সৌদি আরবে এক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে কার্যত একঘরে হয়ে পড়া এই স্বৈরাচার শাসকের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছেন আর ন্যাটো মিত্রদের আস্থায় আঘাত হেনেছেন। বিনিময়ে পুতিন কিছুই দেননি; বরং তিনি এখন আরও আত্মবিশ্বাসী যুদ্ধক্ষেত্রে, রাজনৈতিকভাবে এবং কূটনৈতিক অঙ্গনেও।
এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মস্কো যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির শর্ত হিসেবে ‘গঠনমূলক পরিবর্তন’ দাবি করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ, সামরিক জোটের বাইরে রাখা, তাদের নেতৃত্বকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করা, এমনকি দেশটির স্বাধীন অস্তিত্ব মুছে ফেলার মতো চরম দাবি। পুতিন আসলে ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোকে নতুনভাবে সাজাতে চান। এর অর্থ, ন্যাটোকে দুর্বল, বিভক্ত ও পিছু হটতে বাধ্য করা।
এখনো সব পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। ইউক্রেন ও ইউরোপকে যেকোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সরাসরি যুক্ত করতে হবে। এখন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ধীরে ধীরে এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তবে কিয়েভকে ট্রাম্পের এই আপসকামী নীতির বলি হওয়া থেকে রক্ষা করতে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে ওয়াশিংটনের ওপর চাপ বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো মূল্যে অর্জিত শান্তি আসলে কোনো শান্তি নয়।পাইলের আরেক সংস্করণ মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সম্প্রতি পুতিনের জন্য বড় এক সুযোগ এনে দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে ইউরোপের নিরাপত্তা আর ওয়াশিংটনের ‘প্রধান অগ্রাধিকার’ নয়। ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি ব্যয় করতে হবে। তিনি তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন এই খাতে। বলেছেন, ইউক্রেনকে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থার বেশির ভাগ অংশও তাদেরই বহন করতে হবে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ইউরোপে মোতায়েন মার্কিন সেনার সংখ্যা কমানো হতে পারে।
ট্রাম্পের এই ক্ষতিকর নেতৃত্বে ট্রান্সআটলান্টিক জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ভেঙে দিয়েছে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও তাঁর প্রধান সমর্থক ব্রিটেন, জার্মানির ওলাফ শলৎজ, পোল্যান্ডের ডোনাল্ড টাস্ক, বাল্টিক রাষ্ট্র ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মিত্রদের দুর্বল করে ফেলেছে। এই নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখেছিলেন, কিন্তু এখন স্পষ্ট যে সেটি ছিল এক বড় ভুল।
ট্রাম্প এখন বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলকে উপেক্ষা করে চীন ও ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে। একই সঙ্গে তিনি পুতিনের মতো আচরণ করে কানাডা, পানামা ও ডেনিশ গ্রিনল্যান্ডের মতো সার্বভৌম দেশগুলো আক্রমণের হুমকি দিচ্ছেন। অতীতে ট্রাম্প ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তা করলে ইউরোপ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেতে পারত।
ইউক্রেন ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে মার্কিন অবস্থান বদলাবে, এমন ইঙ্গিত ইউরোপীয় নেতাদের কাছে অনেক আগেই ছিল। ট্রাম্প বরাবরই ইউরোপের সরকারগুলোর প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছেন। এর ব্যতিক্রম শুধু হাঙ্গেরির কট্টর ডানপন্থী নেতা ভিক্টর অরবান।
ইউরোপীয় নেতারা এখন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনায় নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা চাইছেন, কিন্তু শুরুতেই ট্রাম্পকে কঠোর বার্তা না দেওয়ায় আজ এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপ তখনো বিভক্ত ছিল, এখনো আছে। ইতালির জর্জিয়া মেলোনির মতো কেউ কেউ ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চান। কেউ ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার মতো নীরব দর্শক হয়ে আছেন।
এ অবস্থায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর অবস্থান উল্লেখযোগ্য। তিনি বহুদিন ধরেই ন্যাটোর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। গুরুত্ব দিচ্ছিলেন ইউরোপের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন ও সংগ্রহ ব্যবস্থার ওপর। এত দিন তাঁর আহ্বান প্রায় উপেক্ষিত ছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে দ্রুত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নাটকীয় আত্মসমর্পণের প্রতিক্রিয়া বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে অনুভূত হবে। পশ্চিমা জোটের ভেতরকার এই ভয়াবহ বিভক্তি চীনকে আরও সাহসী করে তুলবে। বলা চলে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের তাইওয়ানে সামরিক আগ্রাসনের বহুদিনের হুমকি আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। রাশিয়ার সহযোগী ইরান ও উত্তর কোরিয়াও পশ্চিমা বিশ্বের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে উৎফুল্ল হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব কি না? ইউরোপের বৈশ্বিক প্রভাব খর্ব হয়ে গেছে। শান্তি, নিরাপত্তা এবং জাতিসংঘ সনদভিত্তিক আইনের রক্ষক হিসেবে আমেরিকার ভাবমূর্তি একেবারে ভেঙে পড়েছে। একনায়ক ও স্বৈরশাসকদের জন্য এখন বিজয়ের কাল। ট্রাম্পের নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, শক্তিই সবকিছু নির্ধারণ করে, দুর্বলদের স্থান নেই।
এখনো সব পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। ইউক্রেন ও ইউরোপকে যেকোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সরাসরি যুক্ত করতে হবে। এখন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ধীরে ধীরে এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তবে কিয়েভকে ট্রাম্পের এই আপসকামী নীতির বলি হওয়া থেকে রক্ষা করতে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে ওয়াশিংটনের ওপর চাপ বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো মূল্যে অর্জিত শান্তি আসলে কোনো শান্তি নয়।
সাইমন টিসডাল, দ্য অবজারভার-এর পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাষ্যকার
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউর প র ন ইউক র ন ইউর প য় কর ছ ন র জন য অবস থ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মদ্যপানে কেন ডুবে থাকতেন আমির?
ব্যক্তিগত জীবনে ভালোবেসে অভিনেত্রী রিনা দত্তর সঙ্গে প্রথমবার সংসার বাঁধেন বলিউড তারকা আমির খান। এ সংসার ভাঙার পর ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ‘দিল’ তারকা। কেবল তাই নয়, মদ্যপান করে নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টাও করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আমির নিজেই।
ইনস্ট্যান্ট বলিউডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, “রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর প্রায় দুই-তিন বছর শোকগ্রস্ত ছিলাম। আমি কোনো কাজ করিনি, কোনো চিত্রনাট্যও শুনিনি। আমি বাড়িতে একা থাকতাম। প্রায় দেড় বছর প্রচুর মদ্যপান করেছি।”
আমির খান নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন। তা জানিয়ে ‘দঙ্গল’ তারকা বলেন, “বিচ্ছেদের পর বুঝতে পারছিলাম না কী করব! আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। ফলে মদ্যপান শুরু করেছিলাম। যে মানুষটি একেবারেই মদ্যপান করত না, সেই আমি এমন হয়ে গেলাম যে, দিনে পুরো এক বোতল মদ পান করতাম। একেবারে দেবদাসের মতো ছিলাম। নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলাম। টানা দেড় বছর এটা করেছি। আমি গভীরভাবে বিষণ্ণতায় ভুগছিলাম।”
১৯৮৬ সালে কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন রিনা ও আমির। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তান— জুনায়েদ ও ইরা। ২০০২ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে আমিরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এই অভিনেতার ‘লগান’ সিনেমার শুটিং সেটেই তাদের পরিচয় হয়। এক সময় বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং ২০০৫ সালে এই জুটির বিয়ে হয়। এ সংসারে আজাদ রাও খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ জুলাই যৌথ বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন এই যুগল।
কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কয়েক বছর সিঙ্গেল ছিলেন আমির খান। তারপর বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা গৌরির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ১৮ মাস গোপনে প্রেম করেন তারা। কয়েক দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমিকা গৌরিকে পরিচয় করিয়ে দেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট।
তথ্যসূত্র: লাইভ মিন্ট
ঢাকা/শান্ত