বন্ধুত্ব করতে হলে ভারতকে তিস্তার পানি দিতে হবে
Published: 18th, February 2025 GMT
পানির ন্যায্য হিস্যা দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে ভারতকে তিস্তার পানি দিতে হবে। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে দাদাগিরি আচরণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেন। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই– তাহলেই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে তিনি তিস্তা রেলসেতুর লালমনিরহাট প্রান্তে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। লালমনিরহাট ছাড়াও রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর নদীপারের ১১ পয়েন্টে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার এ কর্মসূচির শেষ দিন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু, তাঁকে দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রাখছে। আর সেখান থেকে তিনি হুকুম জারি করেন। আজকের এই সংগ্রাম আামাদের বাঁচা-মরার লড়াই।
এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি নিরপেক্ষতার কথা বলেন, তাহলে ভারতের কাছে থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা চান। আমরা সবসময় তিস্তার পানির কথা বলেছি।
পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান বলেছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো, সবাই ভাবল ভারতের বন্ধু যখন ক্ষমতায় এসেছে, পানি এবার পাওয়া যাবে। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। ১৫ বছরে তারা দেশকে বেচে দিয়েছে; কিন্তু এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি। শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন ৫৪টি নদীর সবগুলোর উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। তারা তিস্তায় বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ফসল ফলাতে পারে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। প্রতিটি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে তারা।
এর আগে কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আন্দোলনের সমন্বয়কারী সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
গতকাল বিকেলে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহিপুর তিস্তা সেতুর নিচে সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে আমরা গঙ্গার পানির হিস্যার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়েছিলাম। ভাসানী যখন লংমার্চ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঙ্গার হিস্যা নিয়ে বিচার দাবি করেন। যার ফলশ্রুতিতে ভারতকে বাধ্য করে ৪৫ হাজার কিউসেক পানির হিস্যা আদায় করা হয়। আজ তেমনি বিএনপি এবং অন্য দল আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিস্তাপারে পানির হিস্যার জন্য হাজির হয়েছে।
একই সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারত একবার আমাদের পানি শুকিয়ে মারে, আরেকবার আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারে– এটাই তাদের নীতি। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের প্রতি নতজানু থেকে নিজেদের গদি রক্ষা করতে চেয়েছে। ভারতের শাসকদের আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যদি আপনারা সুসম্পর্ক রাখতে চান, তাহলে ন্যায্যতার ভিত্তিতে আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। আর এই ন্যায্যতা হচ্ছে, তিস্তা নদীর পানির সুষম বণ্টন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার। তা না হলে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সম্ভাব হবে না। তাই নির্বাচিত সরকার গঠনে সবাইকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। অবস্থান কর্মসূচির গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা.
গতকাল দুপুরে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নিয়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, তিস্তা নিয়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। আমরা বিদেশিদের কাছে বন্ধুত্ব চাই, প্রভুত্ব চাই না। এ কথাটা প্রমাণ করার জন্যই তিস্তাপারে আজকের এই আয়োজন।
এ সময় কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রমহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে উলিপুরে অবস্থান কর্মসূচিতে হাজারো নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থীসহ নদীপারের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ারে মুখরিত হয় থেতরাই পাকারমাথা এলাকা। বিকেলে তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির উপজেলা সমন্বয়ক হায়দার আলীর সভাপতিতে বক্তব্য দেন ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, আব্দুল বারী, ওবায়দুর রহমান বুলবুল, আবু হানিফ প্রমুখ।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স সমন বয়ক বন ধ ত ব আম দ র প ন ব এনপ ল ইসল ম র রহম ন কম ট র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার হুমকি ইরানের
ইরান ও ইসরায়েলের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক হুমকি বিনিময় মধ্যপ্রাচ্যকে আরো অস্থিতিশীল করার শঙ্কায় ফেলেছে।
সর্বশেষ হুমকিটি এসেছে ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩-এর অংশ হিসেবে ইরান ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেবে।
শনিবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ভারী বোমার চালান পৌঁছাল ইসরায়েলে
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল
ইরান গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে দুই দফায় ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল সেগুলো অপারেশন ট্রু প্রমিজ ও অপারেশন ট্রু প্রমিজ টু নামে পরিচিত।
মেজর জেনারেল জাব্বারি সতর্ক করে বলেছেন, “অপারেশন ট্রু প্রমিজ-থ্রি হবে সঠিক সময়ে; নির্ভুলতার সঙ্গে ও এমন মাত্রায় এটি পরিচালিত হবে, যা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে এবং তেল আবিব ও হাইফাকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে যথেষ্ট।”
আইআরজিসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে এটি তৃতীয় হুমকি। জব্বারির দিন কয়েক আগে আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি ফাদাভি ও আইআরজিসির এরোস্পেস বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেও ইসরায়েলকে ধ্বংসের হুমকি দেন।
এদিকে, এর জবাবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র বলেছেন, “ইতিহাস থেকে যদি ইহুদিরা কিছু শিখে থাকে, তা হলো তোমার শত্রু যদি বলে তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে, তাহলে সেটা বিশ্বাস করো। আমরা প্রস্তুত।”
দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি এ হুমকি বিনিময় এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন আইআরজিসি তাদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান সম্প্রতি চীনের কাছ থেকে রকেটের ১ হাজার টন জ্বালানি বানাতে দরকারি রাসায়নিক পেয়েছে।
আইআরজিসি সম্প্রতি ‘দক্ষিণের কৌশলগত জলসীমায়’ হামলায় সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন একটি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি উন্মোচন করেছে।
মিডল ইস্ট কোয়ার্টারলিতে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআই-তে ৩০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কলিন উইনস্টনের নিবন্ধের উদ্বৃতি দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যদি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ হামলা করতে চায়, তাহলে এটাই সেরা সময়।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এই কমকর্তার মতে, হিজবুল্লাহ ও হামাস এই মুহূর্তে ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষ শক্তির’ অবস্থাও নড়বড়ে। ইরান ও সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে।
উইনস্টন দাবি করেছেন, ইরান একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম উৎপাদনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তিনি যুক্তি দেন, ইরানের ‘পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন’ শনাক্ত করার জন্য গোয়েন্দা তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা এখন আর কার্যকর কৌশল নয়। এখন জেরুজালেম ও ওয়াশিংটনের ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
উইনস্টনের নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সময়সীমাকে নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাও অনুমান করছে, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গত মাসে সতর্ক করে বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যেকোনো ইসরায়েলি বা মার্কিন হামলা এই অঞ্চলে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ডেকে আনবে।”
কাতার সফরের সময় আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক আক্রমণ শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ভুলগুলোর মধ্যে একটি হবে।’
গত মাসে একাধিক মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল চলতি বছরের মাঝামাঝি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় একটি আগাম হামলা চালাতে পারে।
ঢাকা/ফিরোজ