আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও তিস্তার পানি ইচ্ছেমতো আটকে রাখে বা প্রত্যাহার করে ভারত। তারা নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে; কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকেরা পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারেন না। আবার বর্ষার মৌসুমে পানি ছেড়ে দিলে ভাঙে বসতবাড়ি, নষ্ট হয় ফসল। নদী ও নদীপারের বাসিন্দাদের রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে।‌ ভারতকে বলতে হবে, ‘আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই।’

গতকাল সোমবার বিকেলে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ডাকা অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তিস্তা নদীবেষ্টিত পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে একসঙ্গে এ কর্মসূচি চলছে।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এ অবস্থান কর্মসূচি চলছে লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জের দুটি স্থানে ও আদিতমারী; রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া; কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর; নীলফামারীর ডিমলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নদীপারের হাজারো বাসিন্দা কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে তিস্তাপারের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে

ভারতকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিএনপি নেতারা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে ‘বন্ধু’ বললেও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানান দলটির নেতারা।

‘তিস্তা বাঁচাও স্লোগান নয়, মানুষের আহাজারি’

গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় রংপুর-লালমনিরহাটের সীমানায় অবস্থিত তিস্তা রেলসেতু ও তিস্তা সড়কসেতুর মাঝখানের চরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন মির্জা ফখরুল। তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অনেকে আওয়ামী লীগকে ভারতের বন্ধু ভাবতেন; কিন্তু গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশকে বেঁচে দিলেও তিস্তার এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি।’

নদীভাঙনের শিকার হাজারো মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কী করুণ অবস্থা তাঁদের। একদিকে ভারত পানি ছেড়ে দেয়, পানির তোড়ে ঘরবাড়ি, সম্পদ ভেসে যায় ও নষ্ট হয়। আবার বাঁধের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে এই এলাকা শুকিয়ে যায়। তিস্তাপারের মানুষের দুঃখ আর যায় না।

শুধু তিস্তা নয়, ভারত আন্তর্জাতিক ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারত বাঁধ দিয়ে পানি নেয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আমাদের দেশের মানুষ পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারেন না। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারেন না। এ সময়ে তিস্তা বাঁচানোর ডাক আমাদের অন্তরের সবার দাবি। লড়াই করেই আমরা তিস্তার পানি আনব।’

ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ‘ফারাক্কা লংমার্চ’-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই কিন্তু কোনো স্লোগান নয়, এটা তিস্তাপারের মানুষের বাঁচার আহাজারি। এই সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আপনারা কথায় তো বলেন নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো যে আচরণ, সেটা বন্ধ করেন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু) বলেন, তিস্তা পাড়ের পাঁচ জেলার লাখো হতভাগ্য মানুষ এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ অঞ্চলকে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে গৃহহীন ও দেশান্তরি হয়েছেন। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

অন্তত তিস্তার ভাঙন ঠেকান

লালমনিরহাটে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া দিনমজুর আজহার আলী ও সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর নিচে। সত্তরোর্ধ্ব এই দুই ব্যক্তি তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, নদীর ভাঙনে দুবার বসতভিটা হারিয়েছেন। জমিজিরাত হারিয়ে এখন‌ দিনমজুর। অন্তত তিস্তার ভাঙন বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটাই তাঁদের দাবি।

আজহার ও সিরাজুলের মতো তিস্তাপারের হাজারো মানুষ দুই দিনব্যাপী এ অবস্থান‌ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। গতকাল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংগীত ও থিম সংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

হেঁটে, ভ্যানে, রিকশায়, বাসে ও নৌকায় করে লোকজন কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন। বিভিন্ন এলাকার জন্য আলাদা আলাদা প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্রতিটি প্যান্ডেলের পাশে রান্না চলছে। রাত আটটার দিকে দেখা যায়, নদীর চরে প্যান্ডেল ও তাঁবু করে অবস্থান করছেন হাজারো মানুষ।

একটি প্যান্ডেলে কথা হলো মানিক মিয়া নামের এক কৃষকের সঙ্গে। ২০ বিঘা জমি গত ২০ বছরে তিস্তার ভাঙনে সব নদীগর্ভে চলে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন অন্যের জমিতে ঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর মতো তিস্তাপারের হাজারো মানুষ নদীভাঙনের শিকার; কিন্তু সরকার নদীভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

নতজানু পররাষ্ট্রনীতিই দায়ী

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা সেতু পয়েন্টে ‘জনতার সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বলেন, ‘আমরা যতই স্লোগান দিই, লাখো মানুষ তিস্তার পাড়ে শুয়ে থাকে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া তিস্তার মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আগামী দিনে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তাদেরই বিভিন্ন দেশ সাহায্য দেবে, তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাটে তিস্তা তীরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, গত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তাপারের মানুষ পানির ন্যায্য হিস্যা পাননি।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহীপুরে তিস্তা সেতুর নিচে অবস্থান কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাঁধ দিয়েছে। তারা একবার পানিতে শুকিয়ে মারে, একবার ডুবিয়ে মারে।

এ ছাড়া কুড়িগ্রামের উলিপুর পাকার মাথায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু

মাহমুদ চৌধুরী, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীতীরে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, রংপুরের কাউনিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বক্তব্য দেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিস্তা সেতু থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত গণপদযাত্রা, তিস্তার পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও সংগীত পরিবেশন করা হবে। বিকেল পাঁচটায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব অবস্থান কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ব এনপ র উপজ ল ফখর ল গতক ল সরক র ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে নিহত হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নিহতের সরকারি সংখ্যা ১০০২ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর-বিবিসি

নিহতদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের। মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর।

ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ২,৩৭৬ জন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৩০ জন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।

ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। 

থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। 

সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’ 

থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। 

মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। 

মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’ 

বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।
 

 

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ