বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। সোমবার প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ–ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি দেওয়া, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প–সংক্রান্ত বিষয়।

ওমানের রাজধানী মাসকাটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স) ফাঁকে রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, সেগুলোর সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সাক্ষাতের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, আগামী এপ্রিল মাসে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ হতে পারে। এর পরদিন দ্য হিন্দুকে এই সাক্ষাৎকার দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

দ্য হিন্দু: সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে (ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ সম্পর্কে আমাদের বলুন.

..

তৌহিদ হোসেন: খোলাখুলি বললে, সম্পর্ক ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ (যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে)। আমি যেমনটি দেখেছি, শুরুটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। কারণ, ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, সে কারণে সম্পর্কে অনেক বৈরী মনোভাব এবং অস্বস্তি অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় ছয় মাসের মাথায় সেটা আসলেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের এমন একটি পরিবেশের প্রয়োজন, যেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায় অবশ্যই আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি।

দ্য হিন্দু: ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি মাত্রই ওয়াশিংটন সফর করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনি কি জয়শঙ্করের কাছে এসব উদ্বেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলে জিজ্ঞাসা করিনি। কারণ, এটা ভারতের ব্যাপার (তারা অন্য দেশের সঙ্গে কী আলোচনা করেছে)।

আমার মনে হয় না খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে বাণিজ্যের কথা বলা যায়। বাণিজ্যে অল্প সময়ের জন্য মন্দা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু আবার তা চাঙা হয়ে উঠেছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ, অন্তত বেসরকারি খাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আগ্রহ আছে। উভয় দেশেরই একে অপরের কাছে স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের তার প্রতি যত্ন নেওয়া দরকার।

দ্য হিন্দু: ভারত বারবার যেসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা নিয়ে। আপনি কি মনে করেন যে আপনার সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে? এবং ভারত কি তাতে একমত? কারণ, এটা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, আমাকে এটা স্পষ্ট করে বলতে দিন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম–অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে, দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া। দুর্ভাগ্যবশত, ৫ আগস্টের ঠিক পরে (২০২৪ সালে, যখন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছিলেন), ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়, যার বেশির ভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। আমি আপনাকে জাতিসংঘের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যগুলো পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না)। তারা আমাদের অনুরোধে এসেছিল, যাতে আমরা পরিস্থিতির ওপর একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সমীক্ষা পাই।

দ্য হিন্দু: আমি জাতিসংঘের কমিটির প্রতিবেদনটি পড়েছি, যাতে আগের হাসিনা সরকারের কিছু বাড়াবাড়ির কথা বলা হয়েছে। তবে এতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাব সম্পর্কেও কথা রয়েছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আপনার সরকার কি কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: অবশ্যই। এমনকি জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আগেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি মনে করি না এই বিষয়ে কথা বলা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য সঠিক। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে কমপক্ষে চারজন সদস্য আছেন, যাঁরা মানবাধিকারকর্মী এবং তাঁরা বহু বছর ধরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে আসছেন। তাঁরা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

দ্য হিন্দু: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে, ভারত কী করবে বলে আপনারা আসলে আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা ভারতকে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার সেটা না করছে, আমরা আশা করব, তারা অন্তত তাঁর ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, যাতে তিনি এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন, যেটা মানুষকে উসকে দেওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কারণ, বিষয়গুলো এখনো খুবই তরতাজা। ১৫ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় ছিলেন এবং মানুষ তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। তাই তাঁরা দেখতে চান যে তিনি যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না করেন।

দ্য হিন্দু: এরপরও শেখ হাসিনার বক্তৃতার কারণে একটি ‘মবকে’ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি তছনছ করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে কীভাবে আপনি যুক্তি দেবেন?

তৌহিদ হোসেন: একটি মব (বিশৃঙ্খল জনতা) কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট পরর ষ ট র সরক র র বল ছ ন র জন য আম দ র অপর র আপন র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মদ্যপানে কেন ডুবে থাকতেন আমির?

ব্যক্তিগত জীবনে ভালোবেসে অভিনেত্রী রিনা দত্তর সঙ্গে প্রথমবার সংসার বাঁধেন বলিউড তারকা আমির খান। এ সংসার ভাঙার পর ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ‘দিল’ তারকা। কেবল তাই নয়, মদ্যপান করে নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টাও করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আমির নিজেই।

ইনস্ট্যান্ট বলিউডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, “রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর প্রায় দুই-তিন বছর শোকগ্রস্ত ছিলাম। আমি কোনো কাজ করিনি, কোনো চিত্রনাট্যও শুনিনি। আমি বাড়িতে একা থাকতাম। প্রায় দেড় বছর প্রচুর মদ্যপান করেছি।”

আমির খান নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন। তা জানিয়ে ‘দঙ্গল’ তারকা বলেন, “বিচ্ছেদের পর বুঝতে পারছিলাম না কী করব! আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। ফলে মদ্যপান শুরু করেছিলাম। যে মানুষটি একেবারেই মদ্যপান করত না, সেই আমি এমন হয়ে গেলাম যে, দিনে পুরো এক বোতল মদ পান করতাম। একেবারে দেবদাসের মতো ছিলাম। নিজেকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলাম। টানা দেড় বছর এটা করেছি। আমি গভীরভাবে বিষণ্ণতায় ভুগছিলাম।”

১৯৮৬ সালে কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন রিনা ও আমির। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তান— জুনায়েদ ও ইরা। ২০০২ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে আমিরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এই অভিনেতার ‘লগান’ সিনেমার শুটিং সেটেই তাদের পরিচয় হয়। এক সময় বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং ২০০৫ সালে এই জুটির বিয়ে হয়। এ সংসারে আজাদ রাও খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ জুলাই যৌথ বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন এই যুগল।

কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কয়েক বছর সিঙ্গেল ছিলেন আমির খান। তারপর বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা গৌরির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ১৮ মাস গোপনে প্রেম করেন তারা। কয়েক দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমিকা গৌরিকে পরিচয় করিয়ে দেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট।

তথ্যসূত্র: লাইভ মিন্ট

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ