‘বিএনপি কোনো পোস্ট দিলেই তারা লিখেন, এত দিন তো কিছুই করতে পারেননি। ওনাদের বলি, ভাইয়েরা আমার আইসেই তো গরম ভাত পাইছেন। গরম ভাত কিন্তু এত সহজেই তৈরি হয় না। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।’ আজ সোমবার জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এ কথা বলেন।

দেওয়ানগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে পাঁচ বছর পর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতা এবং স্থানীয় নেতারা বিকেল পর্যন্ত বক্তব্য দেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিব উন নবী খান বলেন, ‘একটা গোষ্ঠীর কথা বলি। বিএনপি কোনো পোস্ট দিলেই। তাঁরা লিখেন, এত দিন তো কিছুই করতে পারেননি। ওনাদের বলি, ভাইয়েরা আমার আইসেই তো গরম ভাত পাইছেন। গরম ভাত কিন্তু এত সহজেই তৈরি হয় না। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখনো রাতে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। এই বুঝি দরজায় কেউ আঘাত করল, কেউ এসে ধরে নিয়ে যাবে, জেলে নিয়ে যাবে, কেউ আমাদের ধরে নিয়ে হত্যা বা গুম করবে। আমাদের মা–বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের কী হবে? এখন এটি দুঃস্বপ্ন হলেও কয়েক মাস আগেও এটাই ছিল বাস্তবতা। এই সুন্দর পৃথিবীটাকে সবাই ভালোবাসে। আমরাও ভালোবাসি। আমরাও বেঁচে থাকতে চাই। শুধু বিএনপি করার অপরাধে এবং হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করার অপরাধে আমাদের অনেকের মা–বাবা, স্ত্রী–সন্তানদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গুম ও হত্যা করা হয়েছে।

হাবিব উন নবী খান বলেন, ‘আপনারা যাঁরা আজকে বলেন, জানের ভয়ে ছাত্রলীগ করেছি। আমরা কিন্তু বিএনপি করেছি এবং হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছি। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমেই কিন্তু হাসিনা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ছিল। যখনই আমাদের তারেক রহমান ও নেত্রী জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন, তখনই কিন্তু বাংলার জনগণ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নাই। ভোটার দেখা যেত না আমাদের আহ্বানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন সরকার পুরো জনবিচ্ছিন্ন, তখন ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দিলেন সাধারণ মানুষ, অন্য দলগুলো এবং পরিশেষে অভিভাবক ও তাঁদের সন্তানেরা। সবাই মিলে যখন রাজপথে নামল, তখন হাসিনার পতন হলো। সুতরাং নিজেরা অনেক কিছু ভাববেন না। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাই। আমরা নিজেদের মধ্যে এমন কিছু যাতে না বলি, নিজেদের মধ্যে যাতে ভুল–বোঝাবুঝি না হয়। যা বাস্তবতা, তা মেনে নিতে হবে।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘যতই বলেন, ছাত্র আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা নেই। আমরা তো সেই দিনও শহীদদের নামের তালিকা দিয়েছি। তাঁরা কি এমনি এমনি জীবন দিয়েছেন? হয়তো আন্দোলনের স্বার্থেই আমরা সংগঠনের ব্যানার বা নাম ব্যবহার করিনি। আন্দোলনের প্রতিটি পরতে পরতে বিএনপি ও এর সহযোগী দল ছিল। সুতরাং এসব প্রসঙ্গ তুলবেন না। আর অযথা বিএনপির বিরুদ্ধে এসব সমালোচনা বন্ধ করুন। এটি কারও জন্যই ভালো নয়।’

জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে হাবিব উন নবী খান বলেন, ‘ফেসবুকে বিএনপির বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার করছে। এই গোষ্ঠীর সবাই যে আওয়ামী লীগ, তা নয়। আওয়ামী লীগ ছাড়াও আরও অনেকেই আছেন, তারা বলছেন, বিএনপি এটা দখল করছেন, ওটা দখল করছে, কিছু একটা করছেন, আমরা সেটার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর বেশির ভাগই অপপ্রচার। এটা কারা করছেন, তাঁদের চিনেন না, ওদের বলি, একটু ভালো হয়ে যান, সারাক্ষণ ফেসবুকে কী করেন?’

আওয়ামী লীগের দুর্নীতির প্রসঙ্গে হাবিব উন নবী খান বলেন, ‘শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। আপনি জানতেন, তিনি (পিয়ন) ৪০০ কোটি টাকার মালিক। এটা তিনি নিজের মুখেই বলেছেন। অথচ এক দিনের জন্যও তিনি (পিয়ন) জেলখানায় যাননি। দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে বছরের পর বছর জেল খাটিয়েছেন। বছরের পর বছর আপনি আমাদের নেত্রীকে আটকিয়ে রেখেছেন। ওনার (খালেদা জিয়া) ৫০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাসা থেকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছেন। এখন আপনি (শেখ হাসিনা) কোথায়? নেত্রীকে বাসা থেকে বের করলেন, আপনি তো দেশ থেকেই বেরিয়ে গেছেন। ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটনায় এবং ঘটাবেই। একজনকে আপনি বাসা থেকে বের করলেন, অনিবার্য পরিণতি আপনাকেও দেশ থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে।’

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো.

শরিফুল আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ, জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ ন বল ন ব এনপ র গরম ভ ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গণহত্যার প্রতিবাদ করে গাজাবাসীর জন্য রাইখানদের প্রার্থনা

গণহত্যার প্রতিবাদ করে জালিম ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে মজলুম গাজাবাসীর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছে পটুয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায়।

গাজায় গণহত্যা ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য কুয়াকাটায় মাহা সাংগ্রাই জলকেলি উৎসবে এক মিনিট নীরাবতা পালন করে রাখাইন সম্প্রদায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুক্রবার রাখাইন জলকেলি উৎসবের শুরুতে গাজায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: রাইজিংবিডি 

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে

অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি

শুক্রবার দুপুরে (১৮ এপ্রিল) কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার-সংলগ্ন রাখাইন মাঠে জলকেলি উৎসবের প্রারম্ভে সবাই দাঁড়িয়ে এই নীরবতা পালন করেন।

রাখাইনদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গাজাবাসীর জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয় বলেও জানিয়েছেন সম্প্রদায়টির ধর্মগুরুরা।

গণহত্যা অভিযানে গাজা ও ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাখাইনদের এসব উদ্যোগ মানবতার জন্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ।

রাখাইন জলকেলি উৎসব দেখতে আসা কলাপাড়ার আলীপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হোসেন মিয়া বলেন, “আজ জলকেলি দেখতে রাখাইন মাঠে এসেছি। এখানে এসে একেবারেই অবাক হয়েছি। তারা অনুষ্ঠানের শুরুতেই গাজাবাসীর জন্য নীরবতা পালন করেছে।”

“নিপীড়িত গাজাবাসীর জন্য তাদের সহমর্মিতা আমাকে আপ্লুত করেছে,” বলেন হোসেন মিয়া।

মহিপুর থেকে আসা মো. আবদুস সালাম বলেন, “এমনিতেই রাখাইনদের সঙ্গে আমাদের একটি সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আজ তারা গাজাবাসীর জন্য প্রার্থনা করেছে। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আরো বেড়ে গেল।”

মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের উপাধ্যক্ষ উত্তম মহাথের বলেন, “আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে গাজাবাসীর জন্য প্রায়ই বিশেষ প্রার্থনা করি। শুধু গাজাবাসীই নয়, পৃথিবীর সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ যুদ্ধ বন্ধ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।”

“ আমরা মানুষ হিসেবে সবাইকে সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন উত্তম মহাথের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “গাজাবাসীর প্রতি রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এক মিনিট নীরবতার মাধ্যমে মানবতার সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি তারা দেখিয়েছেন, এ জন্য তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

“রাখাইন সম্প্রদায় ভিন্ন ধর্মালম্বী হলেও মানবতার ধর্ম সবার এক। তাই রাখাইন সম্প্রদায় এই নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের সম্প্রীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল।”

শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাখাইন জলকেলি উৎসব, যাতে শামিল হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বিদেশিরাও।

উৎসব শুরুর দিন ঐতিহ্যবাহী জলকেলিতে মেতে উঠতে দেখা যায় রাখাইনদের। তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ করতে দেখা যায়। উৎসবে সহায়তা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঢাকা/ইমরান/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ