সওজের কম্পিউটার অপারেটর সম্পদ কোটি টাকার
Published: 17th, February 2025 GMT
তিনি সরকারি একটি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর। অথচ তাঁর রয়েছে ফ্ল্যাট-প্লটসহ কোটি টাকার সম্পদ। ২২ বছর একই দপ্তরে থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সৈয়দ মাকছুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের সরকারি বাসভবনের জায়গায় বিভিন্ন জনের নামে বরাদ্দ নিয়ে মাকছুদুর দোকান ও আবাসিক ঘর ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। সওজের ঠিকাদারি বিলের আইপিসি, পেমেন্ট সার্টিফিকেট প্রস্তুতসহ তাঁর হাতে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেনের কাগজ প্রস্তুতের কাজ রয়েছে। ঠিকাদারি বিলের কাজসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কারণে সবাই তাঁর কাছে জিম্মি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্ধারিত হারে তিনি ঘুষ নেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসিয়াল পাসওয়ার্ডও মাকছুদুরের কাছে রয়েছে। তাঁর আলগানী নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আট বছর আগে তিনি সওজের দেয়াল ভেঙে শিমরাইল-আদমজী সড়কের শিমরাইল মোড়ে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি তাঁর নিজ এলাকা নোয়াখালীর রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন বলে পরিচয় দিতেন। সওজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বি-১৮৭০ (শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত) নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে ২০২৩-২০২৪ সালে নির্বাচন করে পরাজিত হন মাকছুদুর। এখন বিএনপি সমর্থিত ইউনিয়নে পদ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় আছেন তিনি।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লীর ৭
নম্বর সড়কের এ-৮৭ নম্বর প্লটে ১০ তলা ভবনে ১৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। হিরাঝিলের মসজিদ গলিতে যৌথ মালিকানায় রয়েছে একটি প্লট। এ ছাড়া তাঁর গ্রামের বাড়িতেও রয়েছে বিপুল সম্পদ।
নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের সৈয়দ আলী আকবরের ছেলে মাকছুদুর ২০০২ সালের ২ জুলাই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করেন।
নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের শিমরাইলের অফিসে গিয়ে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান। তারা বলেন, মাকছুদুরকে সরকারিভাবে আবাসিক বাসভবন দেওয়া হয়। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম নিয়ে বাসভবনটিতে আবাসিক ঘর ও ১০টি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। বহিরাগতরাও আবাসিক ভবনে বসবাস করছে। বাসভবনের রান্নার জন্য গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে ভাড়া দেওয়া বেকারি ও বাসায়। এসব দোকান ও বাসা থেকে মাসিক ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি সওজ কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে অস্থায়ীভাবে প্রায় ৩০টি টং দোকান বসিয়েছেন। মসজিদের নাম বলে প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ৫০-১০০ টাকা করে চাঁদা নেন। গোপন সূত্রে জানা যায়, এ চাঁদাবাজির টাকা তিনিসহ সওজের বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ভাগাভাগি করে নেন।
এসব অভিযোগ বিষয়ে সৈয়দ মাকছুদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ চাকরিজীবনে একটি ফ্ল্যাট করেছেন মাত্র। এ ছাড়া তাঁকে দেওয়া বাসভবন শুধু ভাড়া দিয়েছেন, অন্যগুলো তাঁর নয় বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর দাবি, এসব অপকর্মে তিনি জড়িত নন।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসান উল্ল্যাহ মজুমদার বলেন, মাকছুদুর রহমান কীভাবে একই দপ্তরে ২২ বছর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তা তিনি জানেন না।
নারায়ণগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, তিনি এ দপ্তরে নতুন এসেছেন। কারও বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের অভিযোগ থাকে তাহলে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব সভবন সওজ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লাশ পুতে রেখে জায়গাটি ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয় ইয়াসিন: পুলিশ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজিতে স্ত্রী-সন্তানসহ তিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার ইয়াছিন। বুধবার পুলিশ চার দিনের রিমান্ডের পর তাকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ শামসুর রহমানের আদালতে হাজির করে। এ সময় ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ইয়াছিন জবানবন্দী দিয়েছেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানিয়েছেন।
স্ত্রী লামিয়া আক্তার, চার বছরের সন্তান আব্দুল্লাহ লাবীব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে ইয়াছিন একাই হত্যা করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের রাস্তায় ইট-সুরকির নিচে চাপা দেন তিনি।
ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের পর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার তাকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠায় পুলিশ। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার বাড়ির কাছের একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা বটি উদ্ধার করে পুলিশ। একই পুকুর থেকে রক্তমাখা জামা-কাপড় ভরা একটি ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মাদ শাহীনুর আলম বলেন, ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া, তাদের সন্তান আব্দুল্লাহ ও স্বপ্নার লাশ গত ১১ এপ্রিল উদ্ধার করা হয়। একই দিন গ্রেপ্তার করা হয় ইয়াছিনকে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলেও আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াছিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি একাই স্ত্রী সন্তানসহ তিনজনকে হত্যা করেছেন। মাদকের টাকার জন্য উচ্ছৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে সৎ মায়ের মামলায় ইয়াছিনকে গত ২৭ রমজানের দিন গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঈদুল ফিতরের দুদিন আগে ইয়াছিন জামিনে ছাড়া পান। পুলিশ জানিয়েছে, তার স্ত্রী লামিয়া, সন্তান আব্দুল্লাহ এবং স্বপ্না মিজমিজি পুকুরপাড় এলাকার আক্তার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ইয়াছিন জামিনে আসার পর গত ৮ এপ্রিল বাসায় যান। এ সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এ সময় লামিয়ার বোন মানসিক রোগী স্বপ্না বটি নিয়ে তেড়ে আসেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, স্বপ্নার কাছ থেকে ইয়াছিন বটিটি কেড়ে নিয়ে স্ত্রী লামিয়ার গলায় কোপ দিলে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় স্বপ্না চিৎকার দিলে তাকেও কুপিয়ে গলা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করেন। শিশু আব্দুল্লাহর গলায় থাকা তাবিজের সুতা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তাকে। এরপর লামিয়া ও স্বপ্নার মাথা ও হাত-পা একটি বস্তায় এবং দেহ দুটি আরেকটি বস্তায় ভরে কাথা কম্বলে পেঁচিয়ে নেয়। পরে আব্দুল্লাহরসহ তিন লাশ রাস্তার পাশে ইট-সুরকির নিচে চাপা দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, লামিয়া ও স্বপ্নার রক্তমাখা জামা-কাপড় একটি ব্যাগে ভরে সেটিসহ বটি বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে দেন। এরপর অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় লামিয়ার বাসায় ছিলেন। ঘুরে ঘুরে লাশ চাপা দেওয়া স্থান পর্যবেক্ষণে রাখেন। গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, আদালত ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড দিলেও হত্যার দায় স্বীকার করায় চতুর্থ দিনেই তাকে আদালতে জবানবন্দি দিতে পাঠানো হয়েছে। তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় লামিয়া ও স্বপ্নার বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে গত ১১ এপ্রিল হত্যা মামলা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা মামলায় লামিয়ার স্বামী ইয়াছিনকে প্রধান আসামি করা হয়। তার বাবা মো. দুলাল ও বোন শিমুকেও আসামি করা হয়েছে।