ঋণ পুনঃতপশিলের ৯৯% বেসরকারি ব্যাংকে
Published: 17th, February 2025 GMT
বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে ঋণ পুনঃতপশিলের পরিমাণও। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট ৭ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিল হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশই নিয়মিত করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
ব্যাংকিং খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সময় কেবল সরকারি ব্যাংকেই নানা জালিয়াতি হতো। খেলাপি ঋণও হুহু করে বাড়ত এসব ব্যাংকে। তবে গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতের ব্যাংক দখল করে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা ঘটনা হয়েছে। এসব ঋণের বড় অংশই এখন খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের প্রবণতাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যেখানে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ছিল খেলাপি। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিকভাবে বেসরকারি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা থেকে গত সেপ্টেম্বরে ঠেকেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১২ কোটি টাকা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে মূলত জনতা ব্যাংকের প্রভাবে। ব্যাংকটির প্রভাবশালী কয়েকজন গ্রাহক খেলাপি হওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ১৭ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকে ৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পুনঃতপশিলের পরিমাণ ৭ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ওই সময়ে মোট পুনঃতপশিলের যা ৯৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো করেছে মাত্র ৫৭ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ২৭ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকে এক টাকার ঋণও পুনঃতপশিল হয়নি।
এর আগের প্রান্তিক অর্থাৎ গত এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংক খাতে মোট ১০ হাজার ৯২৮ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিল হয়, যার মধ্যে ৭৯ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকে। আর ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে। বিশেষায়িত ব্যাংকে ছিল ৮৮০ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে মাত্র ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত হয়েছিল, যার মধ্যে ২ হাজার ৩২ কোটি টাকা হয় বেসরকারি ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন পুনঃতপশিল হয়েছে ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে, যার পরিমাণ ২০ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ভোটের আগে রেকর্ড খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২২ সালে ঋণ পুনঃতপশিলের নীতিমালা শিথিল করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এরপর ঋণ নিয়মিত করার প্রবণতা যেন লাফিয়ে বাড়ে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করা হয় ২০২৩ সালে। এর আগের বছর পুনঃতপশিল হয় ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ২৬ হাজার ৮১০ কোটি এবং ২০২০ সালে নিয়মিত হয় ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকার ঋণ। ২০২২ সালের বিশেষ শিথিলতার আগে কোনো এক বছরে সর্বোচ্চ পুনঃতপশিল হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর পুনঃতপশিলের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলাপি ঋণ কমাতে মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুবিধা নিয়ে অনেকেই ঋণ পুনঃতপশিল করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসব ঋণই এখন খেলাপি হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঋণ প ন তপশ ল র প স প ট ম বর র ড স ম বর গত বছর র র পর ম ণ ট ক র ঋণ ব সরক র র প রথম দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
গণহত্যার অস্বীকার ঠেকাতে আগে বিচার দরকার
ব্যক্তির স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বোধও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবি দানা বাঁধতে বাঁধতে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান অস্বীকারের প্রবণতা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উঠে এসেছে এ কথাগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘গণহত্যা, অস্বীকারের প্রবণতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ।
সহুল আহমদ তাঁর প্রবন্ধে বলেন, গণহত্যাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে। গণহত্যা বা এ ধরনের অপরাধের ঘটনার সত্যতার অস্বীকার ঠেকাতে সবার আগে দরকার বিচার।
এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম ও লেখক সারোয়ার তুষার। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাতের পঙ্ক থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—গণহত্যার পক্ষগুলো সব সময় জাতিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে, মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ১৯৭১–এর পূর্বকালে এ অঞ্চলের মানুষ সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক আলোচনা, মীমাংসা ইত্যাদি চালিয়েছে। তবে একাত্তরের ২৫ মার্চ সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নে সুদীর্ঘকাল লড়াই–সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, স্বপ্নভঙ্গের শিকারও হয়েছে। যে বিপুল জনগোষ্ঠী একাত্তরে গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না, সেটাই আজকের দিনের বড় প্রশ্ন।’
অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।