Samakal:
2025-04-25@11:01:33 GMT

জীবনের বাঁকে বাঁকে

Published: 17th, February 2025 GMT

জীবনের বাঁকে বাঁকে

রিকশার হর্নের শব্দে ভাবনার জগতে হঠাৎ ছেদ পড়লে পেছনে ফিরে তাকালাম। একটা জলজ্যান্ত যুবকের ভাবনার জগতে খেই হারিয়ে ফেলার অপরাধে বেশ কর্কশ ভাষায় কটু কথা শুনিয়ে দিল চালক। দোষ যখন নিজের তখন কিছু না বলেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কে রাস্তার বাম পাশ ধরে হাঁটছি। ইদানীং বাবার ডায়াবেটিস বেড়েছে। ইনসুলিনের টাকা পাঠাতে হবে। এদিকে আমার ফরম ফিলাপও করা হয়নি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায় ছুটে চলছি। সেই শৈশব থেকে কৈশোর কত কিছুর সঙ্গেই না যুদ্ধ করে চলেছি। 
পরিবারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কোনোদিন খাবার জুটত, কোনোদিন জুটত না। পেটে খেলে তো পিঠে সয়। অগত্যা হক বাড়িতে গিয়ে গরুর ঘাস কেটে দিতাম। শীতের কনকনে ঠান্ডায় শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের নোংরা জলে সাঁতার কেটে কাদা ঘেঁটে ঘেঁটে হরেক রকমের মাছ ধরতাম। বিনিময়ে পাতিলের গায়ে লেপ্টে থাকা এক প্লেট সাদা ভাত পেতাম। অভুক্ত পেটে সেটাই যেন আমার কাছে অমৃতের মতো ছিল। পাতিলের শেষের ভাত হওয়ায় মাঝেমধ্যে সাদা পাথরও পেতাম। অভাবী সংসারে যাদের জন্ম তাদের পাথর খুব একটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল হলুদ বিকেলে হৈহুল্লোড় করা শৈশব আর আত্মসম্মানের আত্মাহুতিতে লেখা হচ্ছিল একেকটা বিসর্জনের গল্প। হতাশাকে পাশ কাটিয়ে দূরের আকাশে দৃষ্টি রাখতাম। যেমন করে একজন স্নাইপার তার লক্ষ্যে অবিচল থাকে ঠিক তেমনি। শৈশব থেকে যৌবনের দীর্ঘ পথচলায় স্বর্ণলতার মতো আঁকড়ে ধরেছিলাম কৈশোর।
গাধার পিঠে সওয়ার হয়েছে বৈপ্লবিক সময়। পেছনে ফেলে এসেছি সাপের খোলস পাল্টানো জীবন। ভোঁতা কাস্তের আড়াই কোপে কেটেছি দূর্বাঘাসের মাথা.

..। নাটাইয়ের সুতার মতো কেটে কেটে কতবার যে কেটে গেল শরীর তার কোনো হিসাব রাখতে পারিনি কোনোদিন।
ভাগ্য ফেরাতে শহরের বুকে পা রেখেছি অনেকদিন হলো। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি মেনে চিংড়ির মতো পুড়ে পুড়ে লাল হলো যৌবন। তবু বদলায়নি কোনো কিছু। আজও ছাইয়ে পোড়া আলুর বুক চিড়ে মেখে দেওয়া লবণে একটা আস্ত সাগর খেয়ে ফেলি। স্বভাবী সংসারে আজও অভাবী আমার দিনলিপি। আজও দেখি রাতের শরীরে রাত নামে। শুধু আমার ভাগ্যের শরীরে কতগুলো ক্ষত নিয়ে পড়ে আছি, শুধুই বেঁচে থাকার ভান ধরে। তবু মনে হয় আমার সব আছে, শুধু নেই পান্তা ভাতে সাঁতার কাটা মায়ের ক’টা আঙুল। 
সুহৃদ ঢাকা

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অর্থ কী

মহানবীকে স্মরণ করার সময় আমরা বলি, ‘সল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম’, বাংলায় সংক্ষেপে যা ‘(সা.)’ দিয়ে বোঝানো হয়। ‘সল্লাল্লাহু’ আরবি দুটি শব্দের সমষ্টি। একটি হলো ‘সল্লা’, আরেকটি ‘আল্লাহু’। প্রথম সাধারণ অতীতবাচক ক্রিয়া, যার মূল শব্দটি হলো ‘সালাত’। ‘সল্লাল্লাহু’ মানে ‘আল্লাহ সালাত পড়ুন’।

যেমন, কোরআনে আছে, আল্লাহ-তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা রাসুলের প্রতি সালাত পড়েন। ইমানদারগণ, তোমরাও তার প্রতি সালাত পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম বলো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)

‘সালাত’ শব্দের অনেক রকমের অর্থ আছে। ব্যবহার ভেদে এর অর্থ বিভিন্ন রকমের হয়। আমরা যে নামাজ পড়ি, তাকেও বলে সালাত। আবুল আলিয়া বলেন, মহানবীর (সা.) প্রতি আল্লাহর ‘সালাত’ হলো ফেরেশতাদের সামনে নবীজির (সা.) প্রশংসা করা। আর ফেরেশতাদের ‘সালাত’ মানে প্রার্থনা করা। (সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসির, ইমাম বুখারি, কিতাবুত তফসির)

আরও পড়ুনকেন দরুদ পাঠ করব১৫ মার্চ ২০২৫

আর ‘আলাইহি’ শব্দের অর্থ ‘তার ওপর’। এবং ‘ওয়া সাল্লাম’ মানে এবং ‘তিনি শান্তি দিন’। সালাম মানে শান্তি। সুতরাং ‘সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ মানে আল্লাহ মুহাম্মাদের ওপর সালাত পড়ুন এবং শান্তি বর্ষণ করুন।

ফাতহুল বারিতে গ্রন্থকার ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, এটাই সর্বোত্তম মত। নবীর (সা.) প্রতি আল্লাহর সালাতের অর্থ হবে, তার প্রশংসা করা এবং তাকে সম্মান জানানো। আর ফেরেশতা ও অন্যান্যদের সালাতের অর্থ হবে, আল্লাহর কাছে তার প্রশংসা ও সম্মান কামনা করা। অর্থাৎ, সম্মান ও প্রশংসা বৃদ্ধির কামনা করা। (ইমাম কাস্তালানি, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩/৩১৯)

সাইয়েদ কুতুব (রহ.) বলেন, ‘নবীজির (সা.) প্রতি আল্লাহর সালাত’-এর অর্থ হলো, সুউচ্চ সভায় তাঁর প্রশস্তি বর্ণনা করা। আর ফেরেশতাদের সালাত হলো, আল্লাহর কাছে তার জন্য প্রার্থনা করা। তার মর্যাদা কত মহান। সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ কেবল তার নবীর (সা.) প্রশংসা করেন বারবার। যার আলোয় এই জগতের সব উদ্ভাসিত হয়, যার প্রত্যাশায় প্রতিটি বস্তু সাড়া দেয়, তিনি প্রশংসা করেন। নিশ্চয় তার প্রশংসা চিরন্তন ও অনন্ত। আল্লাহ তাআলা চান নিজের সালাম-সালাতের সঙ্গে মুমিনদের সালাত-সালামকে মিলিয়ে তাদের সম্মানিত করতে। (সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসির, তাফসিরে ফি জিলালিল কোরআন)

আরও পড়ুনদরুদ পড়ার ফজিলত১৫ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ