অতৃপ্ত প্রহর
আলমামুন হোসেন
তোমার অপেক্ষার অতৃপ্ত প্রহরে
দলছুট বাহিরমুখো তীর্থের কাক–
নিবু নিবু পিদিমের ব্যথাতুর হৃদয়,
অন্ধকারে মিলিয়ে যায় আশার যত বায়না।
জোনাকির সব আলো কেঁদে ওঠে
দূরের কোনো এক আগন্তুকের পথ চেয়ে–
সাড়া মেলে না হাজারো রাতের শেষে,
অচেনা ভোরের নিষ্ফল আবেদনে।
কতদূর তোমার অপেক্ষার রাজ্য?
কতটা পথ হাঁটতে হবে বন্ধুর সিঁড়ি বেয়ে?
অজস্র প্রশ্নের উত্তর মেলে না লড়াইয়ের ময়দানে,
আলো এবং আলেয়ার অনিশ্চিত যাত্রাপথে।
গোধূলির রং
আনজানা ডালিয়া
ফাগুনের কোনো এক বিকেলে
সব অভিমান, সব সীমারেখা ভেঙে
তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াব
খুঁজো না বসন্ত,
খুঁজো না কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি,
কোকিলের ডাকে হইও না আনমনা।
তোমার আমার খুনসুটিতে হেসে উঠবে
বুনোফুলগুলো
গোধূলির রং মেখে নেব ঠোঁটে
কিছু অনুচ্চারিত শব্দে মেলাব জীবনের সমীকরণ।
একুশ মানে
মাসুদুর রহমান শাওন
একুশ মানে আমার মায়ের ভাষার অহংকার,
আমার ভাইয়ের রক্তে জ্বলা জাগ্রত হুংকার।
একুশ মানে মাথা তুলে বাঁচার দৃপ্ত পণ,
রক্তচক্ষু রুখে দেবার শপথ আমরণ।
একুশ মানে স্লোগান শোভিত পায়ে পায়ে মিছিল,
অধিকার আদায়ে রাজপথটা রক্তে করা পিছিল।
একুশ মানে উত্তাল ঢেউয়ে যুদ্ধে যাবার নেশা,
বুকের ভেতর তপ্ত আগুন বারুদে পুরো ঠাসা।
আমার কাছে একুশ মানে স্বাধীন হবার ডাক,
রৌদ্রজ্বলা ঝাঁজালো দুপুরে ডানা ঝাপটার হাঁক।
চাষার চোখে সোনালি ভোরের সকাল দেখার স্বপন,
একুশ মানে মজুর-যুবার ইচ্ছে বুকে লালন।
একুশ বোঝায় অন্যায় সব দু’পায়ে মাড়িয়ে চলা,
শাসক নামের শোষক শ্রেণির পতন করার খেলা।
একুশ মানে আপন চোখে আকাশ দেখার স্বাদ,
একুশ মানে ন্যায়ের তরে উঁচিয়ে তোলা হাত।
বসন্ত উল্লাস
নকুল শর্ম্মা
বিরহি কোকিলের কণ্ঠে বসন্ত বার্তা–
মহুয়ার বনে মৃদুমন্দ বাতাসের লুকোচুরি,
অব্যক্ত হৃদয় পাখা মেলে প্রিয়ার সান্নিধ্যে।
ঝরাপাতার নীরব কান্নার অবসান–
নতুন কুঁড়ি ঘোমটার চাদর করেছে ছিন্ন,
বসন্ত আলোর উল্লাসে নাচে মিষ্টি প্রজাপতি দল।
আকাশের সীমানায় হাজারো রঙের খেলা–
ফুলের আলপনায় সেজেছে প্রকৃতির ক্যানভাস,
অপার সৌন্দর্যের মাধুরী প্রাণের পরতে পরতে।
রিক্ততার দিনশেষে পূর্ণতার আগমনী–
বসন্তবাহারে দিকে দিকে ভালোবাসার বন্দনা,
সুখের সমুদ্রে বিগত দিনের যন্ত্রণার বিসর্জন।
তোমার চোখে রেখেছি জমা
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
এ প্রাণময় উচ্ছ্বাস, সুরভিত বসন্তবেলা
পুষ্প-পল্লবে সাজে বৃক্ষের আড়ং সম্ভার।
নবযৌবনে গেয়ে ওঠে প্রেমের পদাবলি
থেমে যায় বনজুড়ে ঝরাপাতার আর্তনাদ!
পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার বনে রক্তরাঙা হিন্দোল
ফুলে ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, জলের শিঞ্জন
যুগল হৃদয়ে ওঠে কম্পন উতলা মন উন্মন,
অনূঢ়ার চোখে প্রীতিময় লাজুক সম্ভাষণ।
এ এক কাব্যময় লগন ঋতুরাজ বসন্তবেলা
পাপিয়ার পিউ পিউ, কোকিলের কুহুতান
পুষ্প মঞ্জরিতে আলোর নাচন মায়াবী মগন
নিশ্চুপ রাতের আকাশে স্নিগ্ধ নক্ষত্রের মেলা।
দখিনা মলয়ে নাতিশীতোষ্ণ বসন্তের দ্বারে
এতসব আয়োজন, এত রূপ রস গল্পে ভরা
একটি প্রেমময় গোলাপি রোদের বিকেল
তোমার চোখে রেখেছি জমা, হে প্রিয়তমা!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তোমার জন্য একটি চিঠি
প্রিয় নোমি
আশা করি তুমি ভালো আছ। আমি জানি, হয়তো এই চিঠি পাঠানোটা অপ্রত্যাশিত, কিন্তু কিছু কথা ছিল যেগুলো তোমার সঙ্গে শেয়ার করতে চাচ্ছি।
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে, তখন তোমার হাসি ছিল যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তোমার কথা ছিল, যেন আমার হৃদয়ের প্রতিটি অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাওয়া এক মিষ্টি সুর। আমি জানতাম, তুমি যে আমার পাশে থাকবে, আমার কষ্ট, আমার সুখ– সব কিছুই তুমি বুঝবে। তবে এখন, তোমার শূন্যতা অনুভব করতে করতে প্রতিটি দিন যেন একেকটি অমাবস্যা হয়ে গেছে।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি– কী ছিল আমার মধ্যে, যা তোমাকে আটকাতে পারল না? আমি কি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না? না কি আমি শুধু তোমার কাছে সেই মুহূর্তগুলো চেয়েছিলাম, যেগুলো তোমার জন্য ছিল না? তোমার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি যেন এখন মনে হয় অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। তবুও আমি জানি, এ শূন্যতাকে আমি কেবল তোমার উপস্থিতিতে পূর্ণ করতে পারব।
আমার জীবনে তুমি ছিলে। এখন তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করে কাটে প্রতিটি দিন। তবুও আমি তোমার প্রতি অনুভূতি হারাইনি; বরং আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসার কোনো সময়সীমা বা জায়গা নেই। জানি তোমার জীবনে অনেক কিছু ঘটছে এবং তুমি নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। আমি চাই না তুমি এই সময়ে একা থাক। যদি কখনও তোমার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে, আমি সেখানে থাকব। তুমি আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নোমি। আমি জানি, তুমি হয়তো ফিরে আসবে না; তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও কমবে না। আমি শুধু চাই তুমি যেখানে আছ, সুখে থাক, শান্তিতে থাক। তুমি ছাড়া কিছুই আর একে অপরের মতো হবে না। তোমার শূন্যতাকে আমি নিজের হৃদয়ে ধারণ করেছি; সেই শূন্যতা কখনোই আমার ভালোবাসাকে কমাতে পারে না।
এটা বলতে চাই, আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। সম্ভবত কোনোদিন পারব না। তুমি ছাড়া কিছুই যেন পূর্ণতা পায় না। তুমি যদি কখনও ফিরে আস, আমি তোমাকে স্বাগত জানাব। আমি জানি যে তোমার পথ তোমার নিজের। যদি কখনও তুমি আমাকে মনে কর, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।
তুমি থাক না থাক, আমার ভালোবাসা তোমার জন্য চিরকালই থাকবে নোমি।
ইতি তোমারই
বিনি
ফাতেমাতুজ জোহুরা তানিয়া
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ