Samakal:
2025-04-15@22:30:22 GMT

ডিজিটাল বিপর্যয়

Published: 17th, February 2025 GMT

ডিজিটাল বিপর্যয়

প্রযুক্তির উৎকর্ষে জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে এর অপব্যবহারজনিত বিপর্যয়। বিশেষত শিশু-কিশোরদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম, অনলাইন গেমিং এবং ভুয়া তথ্য-গুজবের প্রভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তারা বিপদে পড়ছে।

সম্প্রতি ১১ বছরের সুবার করুণ গল্প সমাজকে নাড়া দিয়েছে। মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে সে টিকটকের মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং নওগাঁয় পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও, এ ঘটনা আমাদের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে– শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে অভিভাবকরা কি ডিজিটাল বিপদের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন?
গাজীপুরের ১৪ বছরের এক কিশোরী ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, সে মেসেঞ্জারে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে কথা বলেছে এবং ভুল ধারণায় পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশ উদ্ধার করলেও, এর ফলে তার পরিবার ও মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হয়েছে।

পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো গেমের প্রতি আসক্তি শিশুদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের এক কিশোর গেমের জন্য টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এটি আমাদের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা– ডিজিটাল মাধ্যমের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শিশুদের বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। অনেক কিশোর-কিশোরী ভাইরাল হওয়ার আশায় বিপজ্জনক ভিডিও বানাচ্ছে। একসময় ব্লু হোয়েল গেমের কারণে প্রাণহানি ঘটেছিল; এখন টিকটকের বিভিন্ন ‘চ্যালেঞ্জ’ বা ‘স্টান্ট’ সেই একই ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
অনেক অভিভাবক জানেনই না, তাদের সন্তান অনলাইনে কী করছে। ব্যস্ততার অজুহাতে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া সমস্যার মূল কারণগুলোর একটি। স্কুল-কলেজে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর শিক্ষা নেই। শিক্ষার্থীরা যখন ভুল পথে যায়, অনেক শিক্ষক তা এড়িয়ে যান বা নজর দিতে পারেন না। এর মূল কারণ, অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে এবং অনেকে এখনও আধুনিক ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত নন।

টিভি, ইউটিউব, টিকটক বা ফেসবুকে যে কোনো ধরনের অশ্লীল, সহিংস ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে, যা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা থাকলেও তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না। ফলে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সংবাদ সহজলভ্য হলেও ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা বেড়ে গেছে।
শিশুদের ‘সঠিক তথ্য যাচাই করা’ শেখাতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে, কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে সেটির সত্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। শিশুদের জন্য বই পড়া, আবৃত্তি, সংগীত, বিতর্ক, নাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

শিক্ষকদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন হন এবং শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। পাশাপাশি অনলাইন নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি, যাতে প্রয়োজন হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সুবার ঘটনা এবং সাম্প্রতিক অন্যান্য বিষয়ের আলোকে এটি স্পষ্ট– প্রযুক্তির অপব্যবহার, ভুয়া তথ্য এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা, মিডিয়া শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি, প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত এবং সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে, যাতে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে প্রযুক্তি বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
রাষ্ট্র, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এক গভীর সংকটের বীজ বপন করে যাব।

রহমান মৃধা: সুইডেনপ্রবাসী
Rahman.

Mridha@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ