পরীক্ষায় না বসেই ১৯৩ শিক্ষার্থী ম্যাটসে ভর্তি
Published: 17th, February 2025 GMT
সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রীয়ভাবে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হয়। শুধু ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পান ম্যাটসে। তবে দুই শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর তিন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন ১৯৩ শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের তদন্তে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। তদন্ত দল তাদের প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে। এতে বাতিল হতে পারে ১৯৩
শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রমা ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৩৩ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও সেখানে ভর্তি হয়েছেন। ট্রমা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২৪ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২২ শিক্ষার্থী জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হন। এ ছাড়া শ্যামলী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৪১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২২ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই অধ্যয়নরত। এই তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সাবেক সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ইমরুল কায়েসের স্ত্রী তানজিনা খান।
ইমরুল কায়েস প্রভাব খাটিয়ে তাঁর নিজের স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ করে দেন। এই কাজে সহযোগিতা করেন অনুষদের সাবেক সচিব ডা.
এসব শিক্ষার্থীর ভর্তির ক্রমিক নম্বর বাছাই করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারাও জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন। ভর্তি ক্রমিকের সঙ্গে কারও নামের মিল পাওয়া যায়নি। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর তথ্য ওয়েবসাইটে থাকলেও সংশ্লিষ্ট ১৯৩ শিক্ষার্থীর কোনো তথ্য সেখানে নেই।
‘দেননি ভর্তি পরীক্ষা, হয়ে যাচ্ছেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ শিরোনামে গত ২ ডিসেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমকাল। এর পর নড়েচড়ে বসে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ। বিষয়টি তদন্তে জানুয়ারিতে সংস্থাটির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এসব ব্যাপারে অনুষদের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, টাকার বিনিময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়। ম্যাটসে ভর্তি হওয়া গত ১০ বছরের সব শিক্ষার্থীর তথ্য চাওয়া হয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। অধিদপ্তর মাত্র তিন বছরের তথ্য দিতে পেরেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তিন প্রতিষ্ঠানের ১৯৩ শিক্ষার্থীর ভর্তি জালিয়াতির তথ্য মিলেছে। এদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি এসব শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
ডা. সাইফুল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ, অনুষদের সাবেক সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ইমরুল কায়েস ও স্ত্রী তানজিনা খানকে একাধিকবার ডাকা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাদের কেউই তদন্ত কমিটির সামনে আসেননি। শেষবারের মতো আগামী রোববার তাদের আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপস্থিত না হলেও রোববারের পরই তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
অনুষদের সাবেক সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ইমরুল কায়েস সমকালকে বলেন, তদন্তাধীন বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর স্ত্রী তানজিনা খান মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক নাজমুল হোসেন সমকালকে বলেন, পরীক্ষা না দিয়ে কোনোভাবে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে পড়ার সুযোগ নেই। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসব শ ক ষ র থ ১৯৩ শ ক ষ র থ ইমর ল ক য় স শ ক ষ বর ষ ২২ শ ক ষ পর ক ষ য় ম য টস সমক ল তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
দুদকের মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক মালেকের ১৩ বছর কারাদণ্ড
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক মো. আবদুল মালেককে ১৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন আজ রোববার এ রায় দেন। রায়ের আগে কারাগার থেকে মালেককে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর তাঁকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই আদালতের বেঞ্চ সহকারী জাহিদুল ইসলাম।
রায়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্পদের তথ্য গোপন করার অপরাধে মালেককে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ টাকা। আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে তাঁকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ টাকা।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মালেকের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মালেক দুদকে দাখিল করা সম্পদের বিবরণীতে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন। তিনি তাঁর জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ১ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে তা ভোগদখলে রেখেছেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আসাদুজ্জামান রানা।
এর আগে ২০২১ সালে অস্ত্র মামলায় মালেককে ৩০ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
অষ্টম শ্রেণি পাস মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন। গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।