‘বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় পড়েছিস?’/-‘না স্যার।’ কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’ উপন্যাসের শুরুর দিকে কিশোর অর্ণব ও তার শিক্ষকের এই কথোপকথন। ‘চাঁদের পাহাড়ে’ বাঙালি তরুণের পূর্ব আফ্রিকায় চাকরি, সেখান থেকে হীরার খনির সন্ধানে বের হওয়া। একের পর এক ভয়ংকর প্রাণীর সঙ্গে লড়াই। সঙ্গীর মৃত্যু। আগ্নেয়গিরি ডিঙানো। অ্যাডভেঞ্চার আর টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এই উপন্যাস। শেষে শঙ্কর জাহাজে বাড়ি ফেরে। এই একরকম বাড়ি ফেরা আমরা দেখি।
ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাসে অর্ণবের বাড়ি ফেরাটা অন্যরকম। সে অপহরণকারীদের ফাঁদে পড়ে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। সেখান থেকে এক সময় সে পালিয়ে আসে। তার এই বাড়ি ফেরাটা নিশ্চয়ই ছিল আনন্দের। কিন্তু তার পকেটে ছিল না টাকা। ফলে তাকে ফিরতে হয় অনেক কষ্টে। চালককে অনুরোধ করে গাড়িতে চড়ে আবার হেঁটে। বাড়ি ফেরার পর অবশ্য অন্যরা আনন্দিত হয়।
তার এই বাড়ি ফেরার কথা পড়তে গিয়ে আমার মনে পড়ে গেল মাইকেল চাকমার কথা। তিনিও বাড়ি ফিরেছেন গত বছর। চোখ বেঁধে চট্টগ্রামের একটি পাহাড়ের ওপর তাঁকে ফেলে রাখা হয়। সেখানে চোখ খুলে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এক মোটরসাইকেল চালককে অনুরোধ করে বাসস্ট্যান্ডে যান। বাসে উঠে চট্টগ্রাম শহরে আসেন। টাকা না থাকায় পদে পদে তাঁকে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে। মানুষর কাছে হাত পাততে হয়েছে। এই এক বাড়ি ফেরা দেখলাম আমরা বাস্তবে।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’ কিশোর উপন্যাস। ছোট ছোট বাক্য, সাবলীল ভাষা, সহজ-সরল উপস্থাপনা– এর বিশেষ গুণ। এই উপন্যাসে যেমন আছে অ্যাডভেঞ্চার, তেমনি আছে রূপকথা। অর্ণব অপহরণের পর যেখানে ছিল, সেটি পুরোনো একটা বাড়ি। এটাই মূলত জঙ্গলবাড়ি। আর এর রহস্য হচ্ছে রাজকন্যা স্বর্ণলতা। আছে তার দেহরক্ষী রুস্তম। অর্ণবকে মুক্ত করতে সহায়তা করে এরা দু’জন।
উপন্যাসের শুরু এক অদ্ভূত স্বপ্ন দিয়ে। পরপর তিন রাত একই স্বপ্ন। স্বপ্নে সে রহস্যময় জঙ্গলবাড়িটা দেখে। সেখানে দু’জন মানুষ। বাস্তবে সে এমন বাড়ি কখনও দেখেনি। এই স্বপ্ন দেখার কিছুদিন পর তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তাকে সেই জঙ্গলবাড়িতে নিয়ে আসে। এই বাড়ির বর্ণনাটা চিত্তাকর্ষক। একদিন ঘুম ভেঙে অর্ণব দেখে ‘বাইরে বোধহয় প্রখর জ্যোৎস্না ফুটেছে। দরজার ফুটো-ফাটা দিয়ে চাঁদের আলো ঢুকেছে।’ এমন চাঁদের আলোয় কি কেউ ভয় পায়? তার ভয়ও কেটে যায়। সে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। এভাবে সে মুক্ত হয়।
বইটি ইতোমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রথম ১০ দিনে দ্বিতীয় মুদ্রণ ছেপেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা। ১১২ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ৩০০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। প্রচ্ছদেও রহস্য ধরা পড়েছে।
হানযালা হান, কবি ও সাংবাদিক
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল উপন য স রহস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মাদ্রাসাছাত্রীকে অপহরণচেষ্টা
নোয়াখালীর হাতিয়ার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অস্ত্রের মুখে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে (১৫) বাড়ি থেকে অপহরণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার রাতে নিঝুম দ্বীপ শতফুল বাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আরিফ হোসেন উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. সাহেদের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার রাতে মুখোশধারী কয়েকজন যুবক এসে মাদ্রাসাছাত্রীদের বাড়িতে হানা দেয়। তারা পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় বাধা দিতে গেলে মেয়ের মা ও স্বজনদের পিটিয়ে আহত করা হয়। অপহরণকারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে মেয়ের স্বজনদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন এবং অপহরণকারীদের তাড়া করলে তারা মেয়েটিকে স্থানীয় খালপাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভুক্তভোগী মেয়েটির সঙ্গে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা সাহেদ। মেয়ের পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বিএনপি নেতার ছেলে ও তার সহযোগীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরিফের বাবা সাহেদ, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার মেম্বার, যুবদলের সভাপতি আশ্রাফসহ বিএনপির একটি দল ভুক্তভোগী মেয়ের বাড়িতে যান। তারা এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার মেম্বার বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এটা দলের জন্য লজ্জার।
ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা বলেন, তার মেয়ে এখনো অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। রাতে ডাক্তার এনে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। তিনি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঘটনার রাত থেকে তাকে শুধু হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বিষয়টি দুঃখজনক অভিহিত করে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. সাহেদ বলেন, ওই মেয়ের বাড়ি ও তাঁর বাড়ি কাছাকাছি। মেয়ের পরিবারের সঙ্গে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তিনি খবর পেয়ে মেয়েকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
হাতিয়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, ঘটনাটি তিনি জেনেছেন। মেয়েটিকে অপহরণ করার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটি বর্তমানে তার নিজ বাড়িতে আছে। ভুক্তভোগী মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।