বাংলাদেশে হুমকি-হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা
Published: 17th, February 2025 GMT
কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের ছয় মাস পরও সাংবাদিকরা তাদের কাজের জন্য হুমকি ও হামলার শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে খসড়া পর্যায়ে থাকা দুটি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হলে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি সিপিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের মারধর, হয়রানি ও ফৌজদারি তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে ৩ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে হামলার শিকার হন সমকাল প্রতিনিধিসহ চার সাংবাদিক। সেদিনই লক্ষ্মীপুরে জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার পথে চার সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তথ্যচিত্র নির্মাতা শফিউর রহমান জানিয়েছেন, গত ৩০ জানুয়ারি একটি নিবন্ধ প্রকাশের পর ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি পাচ্ছেন তিনি।
এ ছাড়া ‘বেআইনি ব্যবসায়িক চর্চা এবং শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চারজন সাংবাদিক। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযোগ মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে বিচার হলে এবং তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারিতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এই দুটি খসড়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের হালনাগাদ করা খসড়ায় মানহানি ও পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি-সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। তার পরও অধ্যাদেশের কয়েকটি বিধান সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠী।
এ নিয়ে সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রামের সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, শক্তিশালী সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেট বাস্তবায়নে সচিবদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখার নির্দেশ অর্থ উপদেষ্টার
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আমি তাঁদের বলেছি, বাজেট বাস্তবায়নে তাঁরা যেন জনগণের কল্যাণটা দেখেন এবং সময়মতো সবকিছু করা হয়।’
সচিবালয়ে আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন। বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ২৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে এ আলোচনা হয় অর্থ উপদেষ্টার। তিনি এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন।
সচিবেরা কী পরামর্শ দিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পরামর্শ ঠিক না। আমি তাঁদের বলেছি, আমাদের বাজেটটা যথাসম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।’ বলেছি, ‘তাঁরা যেন জনগণের কল্যাণটা দেখেন এবং বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে। আরও বলেছি যে সময়মতো যেন সবকিছু করা হয়।’
আপনি যা বললেন, সব সরকারেরই দর্শন। বাজেট বাস্তবায়িত না হওয়া নিয়ে সচিবেরা কী সমস্যায় ভোগেন বলে আপনাকে জানিয়েছেন—এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আছে, অনেক কারণ আছে।’ একই আমলাতন্ত্র দিয়ে কি বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবেন—এ প্রশ্নেরও জবাব দেননি অর্থ উপদেষ্টা।
এদিকে ২৬ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন। চীনের সঙ্গে কোনো ঋণ চুক্তি হবে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সেগুলো আমি বলব না। ইআরডি সচিব সে সফরে যাচ্ছেন।’
আগামী বাজেটে কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য কত টাকা বরাদ্দ থাকছে, তা ইতিমধ্যে ঠিক করেছে অর্থ বিভাগ। বৈঠকে অংশ নেওয়া তিনজন সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ সচিবই আগামী বাজেটে তাঁদের মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্তির জন্য তাদের বাড়তি টাকা লাগবে।
সূত্রগুলো জানায়, অর্থ উপদেষ্টা অপচয় রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে শুধু ভবন নির্মাণ, অর্থাৎ অবকাঠামো তৈরিতে সবাই মনোযোগী। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যাবে না।
সংশোধিত বাজেট নিয়েও কথা উঠেছে আলোচনায়। সচিবেরা বলেছেন, প্রতিবছরই সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করতে দেরি হয়। এমনকি এবারের সংশোধিত বাজেট হতেও দেরি হচ্ছে। এতে বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়েন তাঁরা। এমন পরিস্থিতির অবসান চাইলে অর্থ উপদেষ্টা তাতে একমত পোষণ করেন।
আগামী বাজেটকে অংশগ্রহণমূলক করতে পাঁচটি প্রাক্-বাজেট আলোচনার উদ্যোগ দেন অর্থ উপদেষ্টা। প্রথমটি হয় ১৬ মার্চ অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে। এরপর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে হয় আলাদা দুটি প্রাক্-বাজেট আলোচনা। আজ হয়েছে সচিবদের সঙ্গে। আজ মঙ্গলবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে রয়েছে প্রাক্-বাজেট আলোচনা।
আগের আলোচনাগুলোর পর অর্থ উপদেষ্টা যেসব কথা বলেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আগামী বাজেট হবে বাস্তবসম্মত। অহেতুক এর আকার বড় করা হবে না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোটি কোটি ডলারের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে, এমন ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে না এবং আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব।