পঞ্চগড় পৌর বিএনপির আবারও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
Published: 17th, February 2025 GMT
পঞ্চগড় পৌর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মো. তৌহিদুল ইসলামকে। সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পঞ্চগড় সদর পৌরসভাধীন ওয়ার্ড কমিটিগুলো আহ্বায়ক মো.
গত ২৩ নভেম্বর পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম ও সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ স্বাক্ষরিত পঞ্চগড় পৌর বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই কমিটিতে মো. তৌহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও আবদুল বারীকে সদস্যসচিব করা হয়েছিল। পরে ১৫ ডিসেম্বর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে পৌর বিএনপির ওই নবগঠিত কমিটির পরিচিত সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর পৌর বিএনপির ওই আহ্বায়ক কমিটি পৌরসভা এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছে।
মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে জেলা বিএনপি থেকে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়ে ছিল। এবার ঢাকা থেকে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। দুটি কমিটিতেই আমি আহ্বায়ক। এবারের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন করে আরও ১০ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। তবে আগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর আমরা নয়টি ওয়ার্ডে কমিটি করেছি।’
নতুন আহ্বায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য শামসুজ্জামান বিপ্লব বলেন, ‘এখানে সবাই তো বিএনপিরই। আর আমাদের আহ্বায়ক সাহেব তো সবারই মুরুব্বি। আমরা আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলে, বাকি কাজগুলো একসঙ্গেই করব। আর ওয়ার্ড কমিটিগুলোর বিষয়ে সবাই আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
২০০৯ সালে পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে মো. তৌহিদুল ইসলাম সভাপতি, এ বি এম আখতারুজ্জামান শাহজাহান সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুল্লাহ আল মামুন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ গঠন করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও আর কমিটি গঠিত হয়নি। সর্বশেষ গত বছরের ২৩ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর ওই কমিটিতে আরও ১০ জন সংযুক্ত করে। এবার ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত হ দ ল ইসল ম হয় ছ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গ্লোবাল সাউথকে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের খেসারত দিতে হবে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে হঠাৎ করে ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করেছেন, তাতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। শেয়ার ও বন্ড বাজারে ধস নেমেছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশেষ করে যেসব দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর ফলে এমন একটি বৈশ্বিক মন্দা শুরু হতে পারে, যা পুরোপুরি মানবসৃষ্ট এবং যার সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে।
বেশির ভাগ ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ট্রাম্পের ঘোষণায় বাজার কিছুটা শান্ত হয়েছিল। কিছু শুল্ক স্থগিত রাখলেও যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক এখনো বলবৎ আছে। ট্রাম্প আরও নতুন শুল্ক দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে এসব পদক্ষেপ আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ কমাবে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য দাম বাড়াবে এবং যেসব দেশ পণ্য রপ্তানি করে, তাদের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে। ভবিষ্যতের আলোচনাতেও খুব আশার কিছু নেই। ট্রাম্প আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি বিদেশি নেতাদের সম্মান দেখান না।
চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এই শুল্ক ১৪৫ শতাংশে তোলা মূলত প্রতীকী। এটি চীন যেভাবে নিজের শুল্ক বাড়িয়েছে, তার পালটা পদক্ষেপ। কারণ, আগের ১০৪ শতাংশ শুল্কেই চীনা পণ্যের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক হয়ে পড়েছিল।
মূলত ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার সংকেত দিচ্ছে। এর ফলে চীনা কাঁচামালের ওপর নির্ভর যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ও দেশীয় উৎপাদনকারীরা গভীরভাবে প্রভাবিত হবে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে পণ্যের সরবরাহব্যবস্থায় ইতিমধ্যে বড় ব্যাঘাত ঘটেছে।
বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা অবধারিতভাবে বিনিয়োগ কমিয়ে দেবে। ব্যবসাগুলো নতুন প্রকল্প স্থগিত রাখবে, পরিকল্পিত সম্প্রসারণ পিছিয়ে দেবে, ভবিষ্যতের পরিস্থিতি বোঝার অপেক্ষায় থাকবে। এর ফলে মন্দা দেখা দেবে আর তা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এর চেয়েও খারাপ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র এই বাণিজ্যযুদ্ধে চীনকে হারাতে পারবে না। চীনা সরকার ধৈর্যের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিচ্ছে। যেকোনো সময় এই দুই পরাশক্তির মধ্যে চলমান অর্থনৈতিক লড়াই বড় ধরনের আর্থিক সংকটে বা এমনকি সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ইতিমধ্যেই বিপদের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। বহুদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমে যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের ওপর বিশ্বব্যাপী আস্থা কমছে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার, বন্ড এবং ডলারের দরপতন দেখা যাচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি বন্ড আর আগের মতো বিশ্বের সম্পদের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারছে না।
আগের অনেক আত্মঘাতী অর্থনৈতিক সংকটের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগবে উন্নয়নশীল বিশ্ব। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়া বা বিলম্বিত হওয়ার কারণে অনেক দেশের উৎপাদন কমে গেছে এবং বেকারত্ব বেড়েছে। এর পাশাপাশি আর্থিক অস্থিরতা এমন এক সময়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
এই পরিস্থিতির প্রভাব ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারি ঋণের ওপর পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব দেশ দরিদ্র বা মাঝারি আয়ের, তাদের অবস্থা আরও খারাপ। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত আগের এক মাসে এসব দেশের মার্কিন ডলারে নেওয়া ঋণের মূল্য গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে, আর সেই ঋণের ওপর সুদের হার (ফলন) বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, গ্যাবনের মতো আগেই ঋণের চাপে থাকা দেশগুলোতে সরকারি ঋণের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। অর্থাৎ এসব দেশের জন্য বিদেশ থেকে টাকা ধার নেওয়া এখন আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এ রকম দেশগুলো বহু দশক ধরে অনেক দেশ মুদ্রার মান কমে যাওয়া, ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, বাজেট–ঘাটতি, বাধ্যতামূলক ব্যয়ছাঁটাই এবং দেশীয় বাজারে অস্থিরতার কঠিন চক্রে আটকে আছে। এর ফলে বিনিয়োগ ও ব্যক্তি খাতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।
এই অভিজ্ঞতা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষাটা খুব পরিষ্কার। এখন শুধু বিশ্বায়িত বাণিজ্যই ধ্বংসের পথে নয়, বরং যারা দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল অর্থায়নের সন্ধানে আছে, তাদের জন্য আর্থিক বিশ্বায়নও দিন দিন আরও অনাকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে চান। কারণ তাঁর মতে, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক উন্নয়নশীল দেশ হয়তো নতুন করে ভাবতে শুরু করবে, যে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা তাদের স্বার্থ রক্ষা করে না, তেমন ব্যবস্থায় তারা থাকবে কি না। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না ওঠে, ততক্ষণ এই যাত্রাপথ খুব সহজ হবে না।
● জ্যোতি ঘোষ ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ