বাংলা একাডেমি ও বিসিএসআইআরে দুদকের অভিযান
Published: 17th, February 2025 GMT
জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলা একাডেমি এবং নানা ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, গবেষণায় অনিয়ম, পুরস্কার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ সোমবার দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, বাংলা একাডেমিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় জানা যায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৮০টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন আহ্বান করা হলে ৫০ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। ৪ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়; কিন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় মাত্র ৫০০ জনকে ডাকা হয়। এরপর ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলে দেখা গেছে। এ ছাড়া চাকরিতে যোগ দেওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৪৫ জনই আগে থেকেই বাংলা একাডেমিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযানকালে নিয়োগ–সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত ব্যক্তিরা নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত অংশে কম নম্বর পেলেও ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার তাঁদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া চূড়ান্ত ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করে গোপনে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, যা স্বাভাবিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় বলে দুদক দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
এদিকে বিসিএসআইআরে নানা আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, গবেষণায় অনিয়ম, পুরস্কার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানের সময় ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি’ অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে নিজস্ব ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন, ‘স্পেসিফিকেশন’ ও বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী কেনাকাটা না করে অর্থ উত্তোলনসহ অন্যান্য অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক দল।
সরেজমিনে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিসিএসআইআরের জন্য বিভিন্ন মেশিনারিজ কেনাকাটার টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই ওইসব মেশিনারিজ কিনে স্থাপন করা হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরে ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে টেন্ডার বাস্তবায়ন করে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদক টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই প্রকল্পের আওতায় রাসায়নিক কেনা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ হাজার টাকার; কিন্তু পরে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার টেন্ডার দেখানো হয়েছে। ফলে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। দুদকের দল অভিযানের সময় ১১টি যন্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পায়, যেগুলো কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেনা হয়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এগুলো আগামী অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হবে, যা সম্পূর্ণভাবে নিয়মবহির্ভূত।
এ ছাড়া টাঙ্গাইলে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘ইনভয়েস’ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট ইনভয়েস চালানের ছায়ালিপিসহ অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। ইনভয়েসে অগ্রিম স্বাক্ষরের মাধ্যমে গুদামের কোনো চাল আত্মসাৎ হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে দুদক টিমের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা গুদামগুলোতে যৌথ স্বাক্ষরে সিলগালা করেন। রেকর্ডপত্রের সঙ্গে গুদামে মজুত করা চালের পরিমাণের হিসাব যাচাই করে দুদক দল বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যবিপ্রবিতে ভুয়া বেতন বিল তৈরি অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অভিযোগে আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে কর্মরত পাঁচজন অনুপস্থিত কর্মচারীর নামে ভুয়া বেতন বিল তৈরি ও সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ‘বিএসএস’ এর সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, যবিপ্রবিতে আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে কর্মরত অনুপস্থিত পাঁচজন কর্মচারীর তিন মাসের ভুয়া বেতন বিল তৈরি ও সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ‘বিএসএস’ এর সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে যবিপ্রবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টেট ও নিরাপত্তা শাখা) মো. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে।
এছাড়া গত মাসের বেতন শিটে কর্মচারীদের স্বাক্ষরে গড়মিল থাকায় অডিট আপত্তি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট সেল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তদন্ত কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এস এম নুর আলমকে আহ্বায়ক ও সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রিয়াজুল হককে সদস্য সচিব করা হয়েছে ।
এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রউফ সরকার এবং তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার।
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী