চবি প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল
Published: 17th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ আরিফ হায়দারের পদত্যাগ ও ৯ নারী শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে মশাল মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস হয়ে শেখ হাসিনা হলে গিয়ে শেষ হয়। এতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, ‘নারী মানে হানি না, এই প্রশাসন মানি না’, ‘ছাত্রী হলে হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লুকিয়ে করা বহিষ্কার, প্রহসন তা পরিষ্কার’ ইত্যাদি।
মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা ছাত্রী হলের সামনের সড়কে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এতে বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা, সুমাইয়া শিকদার, জান্নাতুল মাওয়া প্রমুখ।
প্রক্টরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করে ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, আমরা জানতে চাই, কেন প্রক্টর ছাত্রী হলে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। কেন ২ জানুয়ারি এক শিক্ষার্থী ছাত্রী হলে ঢুকে ভাঙচুর করার পরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ব্যর্থতার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। ছাত্রীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যর জন্য প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ আরিফ হায়দার সমকালকে বলেন, বোর্ড অব রেসিডেন্স শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রস্তাব করেছে, যা এখনও তদন্তাধীন। কাজ শেষে নোটিশ পাঠানো হবে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা হলের নামফলক ও হলের সামনে কংক্রিট নির্মিত নৌকা ভাঙতে গেলে হল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। ছাত্রীদের অভিযোগ, একদল শিক্ষার্থী নামফলক ভাঙতে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। ওইদিন রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রতিবাদ জানাতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে অশোভন আচরণ করেন এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় ১০ জনকে বহিষ্কারের তথ্য প্রকাশের পর সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদত য গ র দ ব
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন
এ দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট বিশেষত পুলিশ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত নিয়মিত বাহিনী, গোয়েন্দা দপ্তরসহ র্যাবের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ; তারা প্রতিনিয়ত আইনের ব্যত্যয় করছে। গত দুই দশকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে প্রায় চার হাজার নাগরিক। এর মধ্যে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে এক হাজারেরও বেশি।
ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমরা নাগরিকরা সব সময় চেয়েছি ক্রসফায়ারে নয়, বরং আইনগত প্রতিকারে সমস্যাগুলোর সমাধান হোক। রাষ্ট্রের মদদে যখন আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে এসব নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, প্রকৃত অর্থে তখন রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পায়। কোনো সমাজ ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া চলতে পারে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলতে থাকা অনিয়ম, নিষ্ঠুর আচরণে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কার্যত বাংলাদেশে তা-ই ঘটেছে। যখন আমরা জানতে পারি একজন আসামিকে হেফাজতে রেখে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো ঘটনা ঘটেছে, তখন আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আমরা একটি সভ্য সমাজে বসবাস করছি! এ ধরনের আচরণ যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের দুঃসাহস আমাদের হতবাক করে। কাজেই উত্থাপিত অভিযোগটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনে অভিযোগটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আওতায় নিয়ে ন্যায়সংগত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কী করে এতটা অধঃপতন হলো? তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তারা কি তাহলে রাজনৈতিক প্রচ্ছন্ন বলয়ে ঢুকে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে বা পেয়েছে? এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মবহির্ভূত আচরণ ও কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ হয়তো উঠতেই থাকবে।
বিনা পরোয়ানায় আসামি বা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ না করাটা যে অন্যায় কিংবা বলা যায় আইনের ব্যত্যয়, এই বার্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনে রাখতে হবে। আসামিকে না পেয়ে স্ত্রী কিংবা সন্তানদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বাভাবিক পদ্ধতি বলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে মনে হয়। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় পিতাকে আটক করতে গিয়ে না পেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেসন্তানকে আটক করেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও দেওয়া হয়েছে। যদিও হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পরে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।
আমরা চাই আমাদের নিরাপত্তা। একই সঙ্গে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বা থাকবেন, তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণ যেন আইন ও বিধিসম্মত হয়। অন্যথায় আইনের শাসন ও জবাবদিহি শব্দ দুটি অকার্যকর হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা রয়ে যাবে। নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়ে দেশের কোনো মানুষের প্রাণহানি ঘটুক, সেটি কারও কাম্য নয়। কেননা, জীবনের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
এ দেশে ক্রসফায়ারে হত্যা বন্ধ হোক চিরতরে। কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করে থানা হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ‘গুম’-এর মতো ঘটনা যেন এ দেশে আর কখনও ফিরে না আসে সেই অঙ্গীকার করতে হবে। বিগত দিনে কে কী করেছে তা আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই। সামনের দিনে এ পরিস্থিতি যেন কোনো ক্রমেই না ঘটতে পারে সেই পথে চলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে, অন্যথায় তাদের নিয়ে যে সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা গভীর ক্ষত তৈরি করবে।
আবু আহমেদ ফয়জুল কবির: মানবাধিকারকর্মী