মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার কবি সোহেল হাসান গালিবের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদ শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।

এদিকে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কবি সোহেল হাসান গালিবের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন একদল লেখক, প্রকাশক ও সংস্কৃতিকর্মী।

সোমবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে এই সময়সীমা বেঁধে দেন তারা।

আরো পড়ুন:

শনিবার বইমেলার সময় পরিবর্তন

বইমেলায় সাদিয়া সুলতানার সপ্তম উপন্যাস ‘উঠল্লু’

কর্মসূচিতে প্রকাশক মাহাবুবুর রহমান বলেন, “গালিবকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দিলে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পিটিশন করব। কোথায় কোথায় পিটিশন করতে হয়, আমাদের জানা আছে। আমাদেরকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করবেন না।”

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার কবি সোহেল হাসান গালিবকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গ্রেপ্তারের পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারিও গালিবকে আদালতে তোলা হয়। সেদিন তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

ওই সময় গালিবের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সানারপাড় থেকে গালিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সোমবারের কর্মসূচিতে লেখক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, “গালিবকে ধরে নিয়েছে পুলিশ, তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা আজ এখানে জড়ো হয়েছি এবং প্রতিবাদ করছি। আমরা বলছি, গালিবকে যেন অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

কবি-প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন বলেন, “গালিবের সঙ্গে রাষ্ট্র যে আচরণ করছে, তা নতুন কিছু নয়। সব সময় আমরা দেখেছি ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র। শুনেছি গালিবকে ২ দিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।”

“কিন্তু রাষ্ট্র জানে না, লেখককে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে, কিন্তু লেখকের চিন্তাকে কখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব না। গালিবকে কবিতা লেখার জন্য গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্র আত্মঘাতী কাজ করেছে।”

কবি চঞ্চল আশরাফ বলেন, “গালিব তো চুরি করে নাই, দুর্নীতি করেন নাই। তবে তাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে? কত বড় বড় চোর, রাঘব বোয়ালেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, গালিবকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে?”

কবি ও সাংবাদিক জুয়েল মাজহার বলেন, “রাষ্ট্র যেন কবির ভাষাকে সরলীকরণ না করে।”

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ বলেন, “প্রথমে শুনলাম গালিবকে আটক করা হয়েছে, পরে শুনলাম গ্রেপ্তার। আর আজ শুনলাম রিমান্ডে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, কবিতা লেখার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

‘আদর্শ’ প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশক মাহাবুবুর রহমান বলেন, “এখানে দাঁড়ানোর আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে তিন জন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমার মনে হলো, তারা ব্যাপারটি সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।”

“এই সরকার ব্যর্থ হলে আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। যারা এখন সরকারে আছেন, তাদেরকে বলব, আপনারা দুই দিনের ক্ষমতা পেয়ে যদি বন্ধুদের ভুলে যান; দুদিন পর ক্ষমতা থেকে যখন সরে যাবেন, আমাদের পাশেই কিন্তু আপনাদের বসতে হবে।”

লেখক ও সাংবাদিক ধ্রুব সাদিক বলেন, “পুলিশ হুট করে এত উৎসাহী হয়ে গেল যে একজন কবিকে গ্রেপ্তার করতে হল। জুলাই আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার কারণে গালিবের চাকরি চলে যাচ্ছিল। সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, গালিবকে মুক্তি দিন এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”

২০২৪ সালে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উজান থেকে প্রকাশিত বইয়ে গালিবের লেখা একটি কবিতা ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। কবিতাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালে গালিবের বিরুদ্ধে মহানবীকে ‘কটাক্ষ’ করার অভিযোগ ওঠে।

ঢাকা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম গ র প ত র কর আম দ র স মব র

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তহীন দুঃস্বপ্নে বন্দি গাজার বাসিন্দারা

ইসরায়েলের বর্বর বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গাজা। আশ্রয়কেন্দ্র, ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলেছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকার বাসিন্দারা। যেখানেই তারা আশ্রয় নিচ্ছে, হামলা করে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুলি ছোড়া হচ্ছে যাত্রাপথেও। যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও হামলা শুরুর পর এক মাস ধরে গাজায় কোনো খাদ্য সহায়তা ঢুকতে দেয়নি দখলদার ইসরায়েল। খাবার, পানি, চিকিৎসার অভাব এবং চারদিকে বিস্ফোরণের মধ্যে গাজাবাসী যেন এক অন্তহীন দুঃস্বপ্নে বন্দি হয়ে পড়েছে। এ দুর্দশার কোনো শেষ নেই। আশা নিয়ে বেঁচে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। 

১৮ মাস ধরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২১টি আংশিকভাবে সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডা. উইসাম সুক্কার ও তাঁর দল উত্তর গাজার একটি অফিসকে ক্লিনিকে রূপান্তর করেছেন। তারও একটা অংশ বোমা হামলায় ধসে পড়েছে। 

তিনি বলেন, খুব সীমিত সম্পদ নিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা উত্তর গাজায় থাকার চেষ্টা করছি। খাবার ও পানির অভাবের কারণে এখানে অপুষ্টি এবং বিভিন্ন রোগব্যাধি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। পেটেরপীড়া থেকে শুরু করে চর্মরোগ খুব সাধারণ হয়ে পড়েছে। আমরা অনেক শিশুকে পাই যারা শ্বাসনালির সংক্রমণ ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় একই জায়গায় অনেক শিশু থাকে এবং ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের চ্যালেঞ্জ ক্রমেই বাড়ছে। কারণ বিপুলসংখ্যক রোগীর বিপরীতে চিকিৎসা সরঞ্জাম খুবই কম। এ ছাড়া আমরা জটিল সমস্যা পাই এবং আমরা জানি না যে এই রোগীদের কোথায় পাঠাতে হবে। কারণ গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। 

ক্লিনিক থেকে বের হওয়ার সময় সুক্কার তাঁর পরিবারকে ফোন করে, যারা গত দেড় বছরে তাঁর সঙ্গে ৯ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তিনি বলেন, গাজার অন্যদের মতো আমার শিশুদের জন্যও পরিষ্কার পানি ও খাবার নিশ্চিত করতে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয়। আমাদের বিদ্যুৎ নেই, সব জায়গায় মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ করার ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো আশা রাখা সত্যিই কঠিন। আমরা এমন এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছি, যা শেষ হচ্ছে না। এই যুদ্ধ কখন শেষ হবে? 

গতকাল শনিবারও গাজাজুড়ে ভয়াবহ ইসরায়েলি হামলা চালানো হয়েছে। দক্ষিণে রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে শুরু করে উপত্যকায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নুসাইরাত শরণার্থী শিবির, উত্তরে বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুনে হামলা চালানো হয়েছে। বিশেষ করে খান ইউনিসের আশপাশের এলাকায় তিনটি পৃথক অভিযানে ১১ জন নিহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মাস ধরে ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকায় কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) একটি জরুরি সতর্কতায় জানিয়েছে, গাজার এখনই খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। সেখানে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েলি বোমা হামলা এবং অবরোধের কারণে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ