জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অধীন বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে বডি ক্যামেরা রাখা, জনবিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মারণাস্ত্র ও ছররা গুলি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন ডিসিরা।

গতকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকেরা জননিরাপত্তা বিভাগ-সম্পর্কিত আলোচনায় এ রকম ১১টি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে আগামীকাল মঙ্গলবার জননিরাপত্তা বিভাগ-সম্পর্কিত কার্য অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া এদিন জনপ্রশাসন, আইন মন্ত্রণালয়সহ আরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এবার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রায় ১ হাজার ৫০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি আলোচনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। প্রতিবছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় এই জেলা প্রশাসক সম্মেলন। জেলা প্রশাসকেরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়, উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাঁরা। এ জন্য এই সম্মেলন ও তাঁদের প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।

জননিরাপত্তা বিভাগ-সম্পর্কিত আলোচনার জন্য লিখিত প্রস্তাবে মাগুরার জেলা প্রশাসক ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব করেছেন। এর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) নিজে কিংবা তাঁর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, উচ্ছেদ অভিযান, বিভিন্ন জরুরি কার্যক্রম তথা ত্রাণ বিতরণ ও দুর্যোগে তাৎক্ষণিক সেবা দিয়ে থাকেন। নিজস্ব সুরক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ও জরুরি সেবা কার্যক্রম বেগবান করার জন্য জেলা প্রশাসকের অধীন বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে ‘স্পেশাল ডেডিকেটেড রেসপন্স ফোর্স’ গঠন প্রয়োজন। কারণ, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিদ্যমান বিভিন্ন বাহিনীর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে প্রস্তুতিমূলক কারণে সময়ক্ষেপণ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্বার্থ বিঘ্নিত হয়।

এ ছাড়া জেলার পুলিশ বাহিনীর সার্বিক কার্যক্রমের ওপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক। গোপনীয় এই প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জননিরাপত্তা বিভাগ একটি নির্দিষ্ট কাঠামো বা ফরম্যাট তৈরি করে দিতে পারে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর যুক্তি হিসেবে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে আরও বলা হয়, জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমে মূলত পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হয়।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করেছেন মাগুরা ও মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক। যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেছেন, এর ফলে নিয়োগপ্রক্রিয়া অধিকতর কার্যকর, ফলপ্রসূ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

এ ছাড়া অপরাধ তথ্যভান্ডার ও জাতীয় পরিচয়ের তথ্যভান্ডারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেল প্রশাসক) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন মাগুরার জেলা প্রশাসক।

ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের বিধিমালা করা এবং এই আদালতের দণ্ডবিধির কিছু ধারায় অর্থদণ্ড বাড়ানো ইত্যাদি প্রস্তাবও এসেছে। দণ্ডবিধির কিছু ধারায় ন্যূনতম অর্থদণ্ড ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। নরসিংদী জেলার চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে আলাদা থানা গঠনের প্রস্তাব করেছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক।

আইন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ে স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন, নিবন্ধন অধিদপ্তরকে আইন মন্ত্রণালয়ের হাত থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করাসহ আরও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প শ ল ড ড ক ট ড র সপন স ফ র স র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রাচ হাতে, হুইলচেয়ারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মানববন্ধন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা সুচিকিৎসার দাবিতে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে দেড় ঘণ্টা মানববন্ধন করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত শতাধিক আহত ব্যক্তি এই মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁরা বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই মানববন্ধনে পাশের চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও অংশ নেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, পঙ্গু হাসপাতালে বিভিন্ন তলায় চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে আহত ব্যক্তিরা হুইল চেয়ার ও ক্রাচে ভর করে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এই মানববন্ধনে যোগ দেন।

মানববন্ধনে আহত ব্যক্তিরা বলেন, গুলিতে আহত হয়ে তাঁরা মাসের পর মাস পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সুচিকিৎসার অভাবে তাঁরা সুস্থ হচ্ছেন না। সুচিকিৎসা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিন পঙ্গু হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মাদ্রাসা ছাত্র মো. রাফি হোসাইন বলেন, ১৮ জুলাই শ্যামলী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করা গুলির স্প্লিন্টার তাঁর ডান পায়ে লাগে। পরে ৫ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করা গুলি তাঁর দু হাতে লাগে। তাঁর দুই হাতেই ২৫০ স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। এরপর থেকে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্প্লিন্টারের অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর দিন কাটছে। চিকিৎসকেরা ব্যথানাশক ট্যাবলেট দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আর কত দিন ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন-এই প্রশ্ন রাখেন।

রাফি বলেন, সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী শনিবার থেকে তাঁরা প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।  

এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক মো. আবুল কেনান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইব্রাহিমের মাথা, পিঠে ও পায়ে ৫টি গুলি করে রায়হান ও ইলিয়াছ
  • মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইব্রাহিমের মাথা, পিঠে ও পায়ে ৫টি গুলি করে রায়হান ও ইলিয়াছ
  • দেশজুড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার ২০৪
  • বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত পারভেজের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে: ছাত্রদল সভাপতি
  • পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৫ এপ্রিল
  • আট দিন পর চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী উদ্ধার
  • ক্রাচ হাতে, হুইলচেয়ারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মানববন্ধন
  • কলেজ কর্তৃপক্ষের কি কোনো দায় নেই
  • আরাকান আর্মির উপস্থিতি ভিডিওতে যেভাবে এসেছে তা সঠিক নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মতো ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধ