পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবারের মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। ফলে সুযোগ সন্ধানীরা যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।

সোমবার ডিএমপি সদরদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সার্বিক সহায়তা করবে ডিএমপি। 

সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো.

সরওয়ার, অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মাসুদ করিম, যুগ্ম কমিশনার, উপকমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড আইজ ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

ইতালি নেওয়ার নামে লিবিয়ায় নির্যাতনে ছেলের মৃত্যু, কাঁদছে পরিবার

পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার তরুণ মো. রাসেল মিয়া (২৫)। অবৈধপথে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে তার ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই দালাল চক্রের নির্যাতনে লিবিয়ায় শুক্রবার (২১ ফ্রেরুয়ারি) তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (২২ ফ্রেরুয়ারি) দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে রাসেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার। নিহত রাসেল নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ধরমণ্ডল গ্রামের লাউস মিয়া ও আউলিয়া বেগমের বড় ছেলে।

রাসেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ ভাই–বোনের মধ্যে রাসেল ছিল সবার বড়। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। পরিবারের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটা বিক্রি করে ও স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মোট ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার মাধ্যমে তিনি লিবিয়ায় যান। কথা ছিল লিবিয়া থেকে তাকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। দালাল চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে ভিডিও বাংলাদেশে পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় আরও ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। টাকা দিতে না পারায় দালাল চক্রের সদস্যরা তাকে নির্যাতন করা শুরু করেন। এতে শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। আজ (শনিবার) দুপুরে এক প্রবাসীর মাধ্যমে স্বজনেরা তার মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন।

রাসেলের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন, “আমার জীবনের শেষ সম্বল বসতভিটা ও ফসলি জমি বিক্রি কইরা কয়েক ধাপে টাকা দিছি। আরও টাকা চাইছিল তারা। দিতে না পারায় আমার ছেলেরে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।” 

তিনি বলেন, “লিবিয়ায় যাওয়ার পর ছেলের কপালে জোটে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। মাফিয়া চক্র রাসেলকে নির্যাতন করে একাধিকবার ভিডিও পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আরও ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে ছেলেকে হত্যা করেছে।”

রাসেলের মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানির পর গণমাধ্যমকর্মীরা ধরমণ্ডল গ্রামের দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে তিনি পলাতক। একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় লিলু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ধরমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, “রাসেলকে বাঁচাতে তার পরিবার লাখ লাখ টাকা দিয়েছে। টাকা দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারেনি। যারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। যাতে রাসেলের মতো আর কোনো তরুণের অকালে মরতে না হয়।”

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, “স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে ওই তরুণের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/রুবেল/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ