প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল বা এইচ বি এম ইকবাল। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। একই সঙ্গে তাঁর ছেলে ও ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মঈন ইকবালও পদত্যাগ করেছেন। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি তাঁরা পরিচালক পদও ছেড়ে দিয়েছেন।

ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি তাঁরা পদত্যাগপত্র জমা দেন আর ১৪ জানুয়ারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তা অনুমোদন হয়। একই সময়ে পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক কাইজার এ চৌধুরীও। এইচ বি এম ইকবাল চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাঁর আরেক ছেলে ইমরান ইকবালকে।

জানা যায়, এইচ বি এম ইকবাল স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আর মঈন ইকবাল কোনো কারণ না দেখিয়েই পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে এখনো চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে তাঁদের নাম রয়ে গেছে।

এ নিয়ে জানতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ ছাড়েন এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্য। গত অক্টোবরে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুদকের আবেদনে বলা হয়, এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এরপর গত নভেম্বরে এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও তাঁদের তিন সন্তানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এই তিন সন্তান হলেন মঈন উদ্দিন ইকবাল, ইকরাম ইকবাল ও নওরীন ইকবাল। সন্তানদের মধ্যে দুই ছেলে ছিলেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক।

ব্যাংকের মালিকানার পাশাপাশি এইচ বি এম ইকবাল নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তিনি প্রিমিয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান। গ্রুপটির অধীন পাঁচ তারকা হোটেলের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট, সিমেন্ট উৎপাদন, মেডিকেল সেন্টারসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। দেশে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১১ সাল থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থাকার পাশাপাশি এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে আর্থিক নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদত য গ ন ইকব ল ম ইকব ল এইচ ব

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মচারীকে পিটিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বললেন, ‌‌‌‘রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি’

দিনাজপুরের বিরামপুরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলার সময় বিএনপির নেতাদের সামনেই উপজেলা পরিষদের কর্মচারীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আরিফুর রহমান রাসেল নামের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। তারা বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোমবার দুপুরে দিকে উপজেলা পরিষদের মুক্ত মঞ্চ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আরিফুর রহমান রাসেল বলেছেন, ‘আমি রাগ কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করতে পারিনি। একটা চড় মেরেছি। খাবার বিতরণের অনিয়ম ও সিনিয়র নেতাদের অপমান করায় এমনটি হয়েছে। তবে আমার ভুল হয়েছে।’

আহতরা হলেন, উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক এমদাদুল হক, আবু হোসেন, ইউএনও কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী মমিনুল ইসলাম ওরফে রনি। তাদের মধ্যে এমদাদুল হক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

ঘটনার সময় বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিঞা মো. শফিকুল আলম মামুন, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী চৌধুরী রুবেল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও এ ঘটনার সত্যতা  নিশ্চিত করে বলেছেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হাজার লোকের আয়োজন ছিল। সেখানে এমন ঘটনা ঠিক হয়নি। আহত তিন কর্মচারীকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, এ ঘটনায় ইউএনওর কার্যালয়ের কর্মচারীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। 

জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সোমবার উপজেলা পরিষদের ভেতর মুক্তমঞ্চে চলছিল। অনুষ্ঠানের ফাঁকে উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও অফিসের কয়েকজন কর্মচারী আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য পান্তা, মাছ ,ভর্তা ও পানি আপ্যয়নের ব্যবস্থা করছিলেন। এ সময় পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান রাসেল ও তার সহযোগীরা খাবার নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু করে। এক পর্যায়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনেই তারা বেধড়ক মারপিট করে তিনজনকে আহত করেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনওর কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী মমিনুল ইসলাম রনি বলেন, সুন্দর পরিবেশে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। এর ফাঁকে অতিথিদের জন্য পান্তা উৎসব শুরু করার জন্য আমরা কয়েকজন নিয়োজিত ছিলাম। আমাদের কাজের ফাঁকে বিএনপির পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান রাসেল নিজেই খাবার নিতে শুরু করে। আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের পিটিয়ে আহত করে।

অনুষ্ঠানের সামনের অংশে আমরা ছিলাম। ঘটনা আমাদের থেকে অনেক দূরে উল্লেখ করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর এলাহী চৌধুরী রুবেল বলেন, এমন একটি অনুষ্ঠানে এই আচরণ করা মোটেও ঠিক হয়নি। এমন আচরণের পর আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে এসেছি।

অভিযুক্ত আরিফুর রহমান রাসেলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা বিএনপির দায়িত্বে রয়েছি, ওরা পৌর কমিটির। তারপরও নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ