গ্রিন ইউনিভার্সিটির পঞ্চম সমাবর্তন, সনদ পেলেন ৪১২৯ গ্র্যাজুয়েট
Published: 17th, February 2025 GMT
বর্ণাঢ্য আয়োজন ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৪ হাজার ১২৯ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জন চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ১০ জন ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবেশন সেন্টারে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইলিনয়স স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিসটিংগুইসড প্রফেসর ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ।
আরো পড়ুন:
প্রাইমারি শিক্ষার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি : বিধান রঞ্জন
গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ২ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
বক্তব্য দেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ।
সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, “সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সমাজের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধতা বেড়ে গেছে। যারা পরিবর্তনের সামর্থ্য রাখে, তারা গড়তেও পারে। ইতিবাচক দিকে এই সমাজকে চালিত করা, ঘুনে ধরা কাঠামোকে পুনর্নির্মাণ করা এবং ন্যায়ভিত্তিক সুষম সমাজ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যেসব সম্ভাবনা বিকশিত হতে পারেনি, সেসব সম্ভাবনাকে বিকশিত করার কোনো বিকল্প নেই। যে পথগুলো রুদ্ধ ছিল, তা অবশ্যই উন্মুক্ত করতে হবে।”
এ সময় তিনি গ্র্যাজুয়েটদের প্রযুক্তি ও মানবিকতার ছোঁয়ায় দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, “সমাবর্তনের মাধ্যমে শুধু গ্র্যাজুয়েশন পর্বের সমাপ্তির ঘটছে না, বরং আজ থেকে জীবনের আরো একটি পর্বের সূচনা হচ্ছে। আর তা হলো ব্যবহারিক জীবন, নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া ও নিজের অবস্থান তৈরি করার জীবন। গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটকে সেই চ্যালেঞ্জে মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।”
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন চিরকুটের শারমীন সুলতানা সুমি
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গ্র্যাজুয়েটদের ভবিষ্যৎ যেমন অফুরন্ত সম্ভাবনার, তেমনি অনেক বাধাবিপত্তিরও। তবে আমাদের বিশ্বাস, গ্রিন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ তোমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি হয়ে থাকবে। ইতিমধ্যেই গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে এআই ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয় চালু হয়েছে। আগামী দিনে ফার্মেসি ও আর্টিটেকচারের মতো বিষয় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
এ সময় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গ্রিনকে উত্তোরত্তর এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, “আগামীর বিশ্ব গতিশীল ও বহুমাত্রিক। যেখানে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে অসীম সুযোগ ও সম্ভাবনা। সাইবার প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি, ৫-জি শিল্পবিপ্লব, হাইটেক যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চ্যাটজিপিটির মতো বিষয়গুলো খাপ খাইয়ে নিয়ে আগামীতে এগিয়ে যেতে হবে।”
এ সময় গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসকে আত্মশক্তিতে রূপান্তর করে অসাধ্য সাধন এবং দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করার আহ্বান জানান তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বলেন, “দক্ষ মানবশক্তি তৈরিতে বিশ্বাসী এবং এ জন্য উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের এমন গ্র্যাজুয়েট হতে হবে, যারা গর্বের সঙ্গে দেশকে সারা বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করবে।”
এ সময় উচ্চশিক্ষায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির অবদান সংক্রান্ত নানা দিক তুলে ধরেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, আমন্ত্রিত অতিথি ও অভিভাবকরা ছিলেন।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র ন ইউন ভ র স ট র ন অন ষ ঠ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
মারমাদের মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব যে কারণে হয়, যেভাবে এল
মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে আছে ‘মৈতা রিলং পোয়ে’ বা মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব। এই উৎসবে পরস্পরের দিকে পানি ছিটিয়ে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন মারমারা। ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’(এসো হে সাংগ্রাইংয়ে সবাই মৈত্রী পানিবর্ষণে) গানটিও দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে এই উৎসবের ‘থিম সং’।
গবেষক ও মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবের শুরু গত শতকের সত্তরের দশকে। কিছু তরুণ মিয়ানমারে সাংগ্রাইং উৎসবে এ ধরনের আয়োজন দেখে দেশেও এর প্রচলন করেন। আর ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’ উৎসবের থিম সং হয়েছে ১৯৮৪ সালে।
মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবকে অনেকেই ‘জলকেলি’ ও ‘পানি খেলা’ বলে থাকেন। তবে এসব নাম আপত্তিকর বলে মনে করেন মারমা সমাজের অনেকেই। তাঁদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে ধর্মের যোগ থাকা অনুষ্ঠানটি ভুলভাবে উপস্থাপন হয়।
এবারের সাংগ্রাইং উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে বান্দরবান জেলা শহরে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব শুরু হয়েছে। তবে জেলার অন্যান্য জায়গায় গতকাল মঙ্গলবার এই উৎসব শুরু হয়। খাগড়াছড়িতে কোথাও কোথাও সোমবার শুরু হয়েছে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব।
মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণদের একজন শিক্ষাবিদ থোয়াইংচ প্রু। তিনি প্রথম আলকে বলেন, সাংগ্রাইং আখ্যেয়া বা মূল সাংগ্রাই দিনে বুদ্ধমূর্তি স্নানের আগে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব হয় না। এটা প্রথাসিদ্ধ রীতি। তাই মৈত্রী পানিবর্ষণের সঙ্গে ধর্মের যোগ বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, পানিকে মারমারা পবিত্র মনে করে। তাই সাংগ্রাইং উৎসবে বন্ধুত্বের বন্ধন এবং পরস্পরের প্রতি মৈত্রী ভাবনা নবায়ন ও সুদৃঢ় করার জন্য একে-অপরের দিকে পানি ছোড়েন। পানি ছিটানোর পর কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালে বোঝা যাবে, বন্ধুত্বের সম্পর্কে ও বন্ধনে টানাপোড়েন আছে। এটিই মৈত্রী পানিবর্ষণের মূল্যবোধ। এ কারণে অনেক সময় অযাচিত কাউকে পানিবর্ষণ করলে আগে সালিসের মুখোমুখিও হতে হতো।
মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবে মেতেছেন মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। গতকাল বান্দরবানের ডলুপাড়ায়