অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটি স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি ও তা বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় উত্তপ্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গতকাল রোববার মেলায় দুটি স্টল একবার বন্ধ করে দিয়ে আবার পণ্য বিতরণ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কখনো মব আশঙ্কা, কখনো নীতিমালাপরিপন্থীভাবে এগুলো বিক্রি, আবার কখনো দুঃখপ্রকাশের ঘোষণা আসে।

সব৴শেষ রোববার রাতে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি–সংক্রান্ত একটা ইস্যু বহুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ফোনে বহুজন বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ জানানো জরুরি বলে মনে করছে বাংলা একাডেমি।

একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রসার ও ব্যবহার সম্পর্কে বাংলা একাডেমির কোনো প্রকার সংকোচ থাকার প্রশ্নই আসে না। বইমেলার পণ্যায়নের একটা ব্যাপার স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তার প্রমাণ, একদিকে আমরা অন্য অনেকগুলো পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্যদিকে ইভেন্টকে বলেছি, সৌজন্য হিসেবে তারা যেন স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রয়োজনমাফিক বিতরণ করে।’ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওয়াশরুমের পাশে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখবে, এটাও আমরা নিশ্চিত করছি।’

এই ঘোষণা আসার আগে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে। স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির কারণে গতকাল দুটি স্টল বন্ধ করে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর পক্ষে-বিপক্ষে বাড়তে থাকে আলোচনা। কেউ কেউ বলেন, এটি মব আশঙ্কায় বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত নিতে না পারার দুর্বলতা, আবার বইমেলায় অন্য পণ্য বিক্রি নিয়ে নীতিমালার ইস্যু সামনে আনেন কেউ কেউ। এর মধ্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন।

উপদেষ্টার পোস্ট

সংস্কৃতি উপদেষ্টা গতকাল রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন খুবই স্বাভাবিক একটা জিনিস। সরকার এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে উইমেন হেলথ হাইজিন নিয়ে সারা দেশে সচেতনতা তৈরি করেছে এবং করছে, সেখানে যেকোনো কারণেই হোক বইমেলায় এটাকে নিয়ে এই আলোচনাটা যে হইতে হলো এটা আমাদের জন্য বেদনার।’

একই পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, ‘এ বিষয়ে যেসব ভাই–বোনেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাঁদের সবার বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত। আপনাদের বিস্ময় ও ক্ষোভ আমাদেরও। যা–ই হোক, বাংলা একাডেমি একটু আগেই বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামীকাল (সোমবার) থেকে মেলা প্রাঙ্গণে মেয়েদের ওয়াশরুমের পাশে বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাপারেও তারা তাদের ব্যাখ্যা জানিয়েছে।’

উপদেষ্টার এই ফেসবুক পোস্টের দুই দিন আগে ঘটে এই বিতর্কের সূচনা।

যেভাবে শুরু

প্রাণ-আরএফএলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের প্রতিস্বাক্ষর থাকা একটি চিঠিতে আমাদেরকে “স্টে সেইফ” ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শন না করার অনুরোধ জানানো হয়।’ চিঠিতে বলা হয়, ‘কিছু ব্যক্তির অভিযোগ, এসব গোপন পণ্য এবং প্রকাশ্যে দেখানো যাবে না। কারণ, এতে মানুষজনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’

প্রাণ-আরএফএলের ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি, চিঠিটি পাওয়ার পরে আমরা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাতে বইমেলায় স্টে সেইফের সার্ভিস এবং সেই সঙ্গে বুথগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে প্রাণ-আরএফএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বইমেলায় আসা নারীদের জরুরি শারীরিক সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এটি তাদের বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছিল। এ জন্য বাংলা একাডেমির তালিকাভুক্ত ‘ড্রিমার ডাংকি’ নামের একটি ভেন্ডরের কাছ থেকে বুথ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে নারীদের প্যাড দেওয়া হচ্ছিল।

তবে রোববার স্টল দুটি বন্ধের সময় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়, বইমেলায় অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা।

নারী ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্যের ব্র্যান্ড স্টে সেফের দুটি স্টল বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মেলার প্রথম থেকেই ছিল। স্টল দুটি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে বইমেলা কমিটির সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক সরকার আমিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বইমেলার নীতি অনুযায়ী মেলায় বই ও খাবার ছাড়া অন্য কিছু বিক্রির সুযোগ নেই। তাই স্টল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন বলে নয়, যেকোনো অনুমোদনহীন পণ্যের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।’

আজ বইমেলায় গিয়ে দেখা গেছে, স্টে সেফের ওই বুথ সেখানে নেই। আশপাশের স্টলের কর্মীরা জানান, ওই স্টল পূর্বাচলের ৩০০ ফুটে নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা একাডেমির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে নারী কর্মীদের দিয়ে বইমেলার ‘ওয়াশরুমের’ সামনে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখান থেকে বিনা মূল্যে নারীদের এই পণ্য সরবরাহ করা হবে। বইমেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম র বইম ল য় উপদ ষ ট বইম ল র ব যবস থ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বোনের পর ভাইও হলেন ব্যাংক চেয়ারম্যান

মিডল্যান্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আহসান খান চৌধুরী। তিনি প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এর আগে গত সপ্তাহে মেঘনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন উজমা চৌধুরী। তিনি প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক। তাঁরা দুজন সম্পর্কে ভাই–বোন। প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী তাঁদের বাবা।

প্রয়াত আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে ৪২ বছর বয়সে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে শুরু করেছিলেন ফাউন্ড্রি বা টিউবওয়েল তৈরি ও আবাসনের ব্যবসা। সম্বল ছিল পেনশনের টাকা। তবে আবাসন ব্যবসা তিনি বেশি দিন করেননি। আবাসন ব্যবসা বাদ দিয়ে ফাউন্ড্রির ব্যবসায় নজর বেশি দেন আমজাদ খান চৌধুরী। রংপুরে ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠা করেন, নাম দেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)।

জানা যায়, ২০১৩ সালে মিডল্যান্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন আহসান খান চৌধুরী। মিডল্যান্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সবশেষ তাঁর স্ত্রী নিলুফার জাফরুল্লাহ ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ব্যাংকের সভায় অনুপস্থিত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ২০ মার্চ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১৬৫তম সভায় আহসান খান চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। আহসান খান চৌধুরী মিডল্যান্ড ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আহসান খান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্টবার্গ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৯২ সালে পরিচালক হিসেবে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৩ সালে মেঘনা ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন উজমা চৌধুরী। তবে ব্যাংকটি শুরু থেকে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত সপ্তাহে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকটি উজমা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের নিবন্ধিত সার্টিফায়েড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিপিএ)।

উজমা চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাস থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। দেশটির পেট্রোলিয়াম শিল্পে সাত বছরের বেশি সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তিনি ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপে ফিন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বোনের পর ভাইও হলেন ব্যাংক চেয়ারম্যান