মেরুদণ্ডের গড়ন বদলে দিতে পারে যে বাতরোগ
Published: 17th, February 2025 GMT
মেরুদণ্ডের বাতরোগ
মেরুদণ্ডের বাতরোগকে সাধারণ ভাষায় বলে ‘স্পন্ডাইলো-আর্থোপ্যাথি’। মেরুদণ্ডে যেকোনো রকমের প্রদাহ হলে বলে ‘স্পন্ডালাইটিস’। নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে, তবে তুলনামূলকভাবে পুরুষদের বেশি হয়। হাত-পায়ের অন্যান্য বাতরোগ বা আর্থ্রাইটিস আবার নারীদের বেশি হয়। আরেকটি ভিন্ন দিক হচ্ছে, তুলনামূলক তরুণ বয়স থেকে এটি শুরু হতে পারে। এই রোগের কারণ হতে পারে বিভিন্ন। বংশগত বা জেনেটিক ত্রুটি ও পারিবারিক ইতিহাস অনেকাংশে ভূমিকা রাখে।
লক্ষণমেরুদণ্ডের বাতরোগে যে লক্ষণ বেশি দেখা যায়, সেটি হলো কোমর বা পিঠের নিচের দিকে ব্যথা। ব্যথার পাশাপাশি অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে মেরুদণ্ড ও এর সংলগ্ন অংশ অসাড় অনুভব করেন। অনেকে ঘাড়ব্যথা ও ঘাড় শক্ত অনুভব করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বড় অস্থিসন্ধি, যেমন হাঁটু, গোড়ালি ও কনুইয়ে ব্যথা হতে পারে ও ফুলে যেতে পারে। কিছু কিছু রোগীর মেরুদণ্ড আক্রান্ত হওয়ার আগে এসব অস্থিসন্ধিতে আক্রান্ত হয়। কারও কারও পায়ের পাতা, টেন্ডনেও ব্যথা ও প্রদাহ হতে পারে।
কীভাবে মেরুদণ্ডের গড়ন পরিবর্তন করে এই বাতরোগমেরুদণ্ডে থাকে কশেরুকা আর মাঝখানে থাকে ডিস্ক, এসবকে সাধারণ ভাষায় বলা হয় মেরুদণ্ডের হাড়। মূলত কশেরুকার হাড়গুলোতে প্রদাহ হয় এ রোগে। এর সংলগ্ন তন্তু, লিগামেন্ট, টেন্ডন—এসবেও প্রদাহ হয়ে গঠনগত পরিবর্তন হয়। ফলে দেখা যায় মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া লেগে যায়; কিছু হাড় প্রবর্ধিত হয়। অনেক সময় হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এসব পরিবর্তন ঘটায় মেরুদণ্ডের হাড় বেঁকে যায়, কারও কারও ক্ষেত্রে শারীরিক যে স্বাভাবিক গঠন থাকে, সেটিও পরিবর্তন হয়ে যায়।
করণীয়এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক প্রথমে লক্ষণ অনুযায়ী বাতরোগ নিশ্চিত করবেন ও সেটির ধরন বুঝে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। আধুনিক চিকিৎসায় ব্যাপক পরিবর্তন আসায় এ ধরনের বাতরোগ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে রোগগুলো যত আগে নির্ণয় করা যায়, চিকিৎসায় তত দ্রুত উন্নতি সম্ভব।
আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, এ ধরনের বাতরোগে শরীর সচল রাখা খুব জরুরি। এসব রোগের চিকিৎসায় শারীরিক ব্যায়াম, সাইক্লিং ও সাঁতার জরুরি।
আরও পড়ুনকোলন ও পাকস্থলীর ক্যানসার ঠেকাতে যেসব অভ্যাস করতে হবে১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াক্ফ বিল ইস্যুতে মুসলিমদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে দিলেন নাইডু
ওয়াক্ফ বিল নিয়ে বিজেপির চিন্তা কিছুটা বাড়িয়ে দিল শরিক দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। অন্ধ্র প্রদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ শরিক দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু গতকাল শুক্রবার মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, ওয়াক্ফ সম্পত্তি রক্ষায় তিনি দায়বদ্ধ। রাজ্যের ওয়াক্ফ সম্পত্তির চরিত্র নষ্ট হয়, এমন কিছু তিনি হতে দেবেন না।
কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের অস্তিত্ব রক্ষায় টিডিপির সমর্থন জরুরি। সেই দলের সর্বময় কর্তার এমন মন্তব্য বিজেপিকে কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সরকার আগেই তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিল, ঈদের পর সংসদের যে চার দিন অধিবেশন বাকি থাকবে, সেখানে ওয়াক্ফ বিল পেশ ও পাস করা হবে। আগামী শুক্রবার সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে।
যেসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আল্লাহর নামে নিবেদিত, সেগুলোকে ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলা হয়। সেই সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়। রাজ্য ও কেন্দ্রের ওয়াক্ফ বোর্ড সেসব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতে ৯ দশমিক ৪০ লাখ একরজুড়ে থাকা ৮ দশমিক ৭০ লাখ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াক্ফ বোর্ড। এই বিপুল সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য প্রায় দেড় লাখ কোটি রুপি।
ওয়াক্ফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে। অভিযোগ নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল আনে। খসড়া বিলটি বিবেচিত হয় সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি)। বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে শুধু সরকার পক্ষের সদস্যদের আনা ১৪টি সংশোধনী গ্রহণ করে এই অধিবেশনে সরকার তা পেশ ও পাস করাতে চাইছে।
সরকারের আনা বিলে দেশের সর্বত্র ওয়াক্ফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় সরকারের ভূমিকা রাখা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিলটি অসাংবিধানিক। এর মাধ্যমে সরকার মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে।
গত বছরের আগস্টে এই বিল সরকার সংসদে পেশ করেছিল। সেই সময় টিডিপি কিছু প্রশ্নও তুলেছিল। তবে বিজেপির সদস্য জগদম্বিকা পালকে চেয়ারম্যান করে গঠিত জেপিসিতে বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় টিডিপি তেমন একটা আপত্তি জানায়নি। এখন চূড়ান্ত বিল পেশ হওয়ার সময় টিডিপি মুসলিমদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে রাজনৈতিক কারণে।
জনগণনার পর জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভার আসন বৃদ্ধি হলে দক্ষিণের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ একমাত্র দক্ষিণি রাজ্য, যারা ওই প্রচেষ্টার সরাসরি বিরোধিতা করেনি। এতে রাজ্যে টিডিপি কিছুটা কোণঠাসা। সেই কারণে মনে করা হচ্ছে, মুসলিম সমাজ যাতে দলের বিরোধিতা না করে, সে জন্য চন্দ্রবাবু নাইডু এই ভূমিকা নিতে চাইছেন। এক ইফতার অনুষ্ঠানে ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ে দলের দায়বদ্ধতার কথা জানানোর পাশাপাশি মুসলিমদের জন্য তিনি কী কী করেছেন, সে তথ্যও বিস্তারে বলেছেন।
টিডিপির এই ভূমিকা বিরোধীদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কংগ্রেস মনে করছে, চন্দ্রবাবু সম্ভবত রাজনৈতিক বিপদটা বুঝতে পেরেছেন। বিজেপিও বোঝার চেষ্টা করছে, নাইডুর বাধ্যবাধকতা কতটা।
পাশাপাশি বিজেপি বিহারের অবস্থাও বোঝার চেষ্টা করছে। নাইডু বিরোধিতার রাস্তায় গেলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারও সেই পথ ধরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বিলটি রাজ্যসভায় মুখ থুবড়ে পড়বে। তাতে বিজেপির সম্মানহানি হবে।
চলতি বছরের শেষে বিহার বিধানসভার ভোট। ওয়াক্ফ প্রসঙ্গে মুসলিম ভোট বিজেপি ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে একজোট হলে বিজেপির কাছে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিহারে শুধু নীতীশের দল জেডিইউ নয়, এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ানও মুসলিমদের সমর্থনের জন্য ওয়াক্ফ বিলের বিরোধিতা করতে পারেন। ভোটের আগে ওয়াক্ফ বিল পাস করানোর মতো এত বড় একটা ঝুঁকি বিজেপি কি নেবে?
ওয়াক্ফ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ঈদের আগে শেষ শুক্রবার জুম্মার নামাজে মুসলিমদের কালো ব্যাজ পরার অনুরোধ করেছিলেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মহম্মদ ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি। বিজেপির প্রতি ভারতের মুসলিম সমাজ এমনিতেই সদয় নয়। তবু সেই সমাজের অনগ্রসর ‘পসমন্দা’ শ্রেণির মুসলিমদের কাছে টানতে বিজেপি বেশ কিছু দিন ধরেই সক্রিয়।
তবে বিজেপির একাংশের ধারণা, ওয়াক্ফ বিল পাস হলে গোটা মুসলিম সমাজই বিরূপ হবে। বিরোধিতার রাস্তায় নামবে। কারণ, তারা মনে করবে, সেটা হবে তাদের স্বাধীন ধর্মাচরণে কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ। এই হস্তক্ষেপ দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংগঠনের ক্ষেত্রে নেই।