আসামে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ এখনই ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার
Published: 17th, February 2025 GMT
ভারতের আসাম রাজ্যের বন্দিশিবিরে ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত বন্দীদের এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টকে হলফনামা দিয়ে এ কথা জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
সরকারের হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘অল্প সময়ের মধ্যে বিদেশিদের ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়।’ কারণ, অনুপ্রবেশকারীরা যে দেশের ‘প্রকৃত নাগরিক’, সেই দেশের সরকার তাদের পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই করে প্রত্যর্পণ অনুমোদন করার পরেই তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব, যা সময়সাপেক্ষ বিষয়।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আসামের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে ২৭০ জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিনা অপরাধে এবং বিদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে বন্দী রয়েছেন ৬৩ জন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে কথিত বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের (প্রধানত বাংলাভাষী মুসলমান) কেন তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়, তা জানতে চান সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি বিনা অপরাধে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে কেন আটকে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভর্ৎসনা করেন আদালত।
বিদেশিদের চিহ্নিত করেও কেন তাঁদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না—এই প্রশ্নও তোলেন সুপ্রিম কোর্ট। সে সময়ে কেন্দ্র ও আসাম সরকারের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চান, কোন বিশেষ কারণে তাঁদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। একজন ব্যক্তি বিদেশি বলে চিহ্নিত করে তাঁকে অনন্তকাল আটকে রাখা যায় না।
এরপর গত সপ্তাহের শেষে এক হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, তারা চাইলেও এই ব্যক্তিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়, যতক্ষণ না প্রত্যর্পণ চুক্তি মোতাবেক যাবতীয় তথ্য তাদের হাতে আসছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এমন সময় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কথা বলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে ভারতের নথিপত্রহীন অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, এই অভিবাসীদের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে বিমানে তোলা হচ্ছে।
গতকাল রোববার ১১২ অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে হরিয়ানার ৪৪ জন, গুজরাটের ৩৩ জন, পাঞ্জাবের ৩১ জন, ২ জন উত্তর প্রদেশের এবং ১ জন করে হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের।
এঁদের শিকল পরিয়ে আনা হয়েছে কি না, তা জানা না গেলেও দ্বিতীয় দলে নারী বাদে অন্যদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে বিমানে তোলা হয় বলে এই অভিবাসীরা ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
প্রথম দলের সবাইকে বেড়ি পরানো হয়েছিল। আমেরিকা থেকে বিতাড়িত ভারতীয়দের প্রথম দল ৫ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাবের অমৃতসরে পৌঁছায়। এই দলে ১০৪ ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তাঁদের সবাইকে হাতে–পায়ে বেড়ি পরিয়ে আনা হয়েছিল এবং তাঁরা প্রায় দুই থেকে তিন দিন শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেননি বলে ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় গত শনিবার ১১৭ জন নথিপত্রহীন অভিবাসীকে বিতাড়িত করে ভারতে পাঠানো হয়। এঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভারতের পত্রিকা ‘দ্য হিন্দুস্থান টাইমস’। তাঁরা জানিয়েছেন, এঁদের মধ্যে তিনজন নারীকে ছাড়া বাকিদের বেড়ি পরিয়ে উড়োজাহাজে তোলা হয়েছিল। এ ঘটনা যখন ঘটছিল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন।
দ্বিতীয় দফায় যাঁদের বিতাড়িত করা হয়, তাঁদের মধ্যে ৬৫ জন পাঞ্জাবের, ৩৩ জন হরিয়ানার, ৮ জন গুজরাটের, ৩ জন উত্তর প্রদেশের, ২ জন মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও গোয়ার এবং ১ জন হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের।
ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ধরনের ঘটনার নিন্দা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেআইনি অনুপ্রবেশসংক্রান্ত যাবতীয় আইন মানতে চায় ভারত। সে কারণে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার বিরোধিতা না করলেও অভিবাসীদের মানবিক অধিকারের দিকগুলো মাথায় রাখছে দিল্লি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ বছর পর সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজ এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা রফিকুল ইসলাম এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির পরিচালক অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঈশাখা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা কলেজের অধ্যাপক মো:ওবায়দুল হক । অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান গিয়াস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজ সোনারগাঁও উপজেলায় অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ কলেজ। আমাদের কলেজের শিক্ষকরা খুব আন্তরিকতার সাথে পাঠ দান করে থাকেন এবং আমাদের এই কলেজটি দিয়ে বিভিন্ন চড়াই উৎড়াই এর মধ্য দিয়ে দিন দিন উন্নতির শিখরে আরোহন করছে। আমরা একটি মানসম্মত কলেজ ও ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। তিনি এই কলেজ থেকে যারা পাশ করে গেছে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই কলেজ থেকে যারা পাস করে বিভিন্ন পজিশনে আছো তোমাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ওবায়দুল হক বলেন, এই কলেজ থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী পাশ করে গিয়ে শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ অনেক পেশায় যুক্ত আছে। সকলকে কলেজটির উন্নয়নকল্পে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক ঘাটতি থাকতে পারে কিন্তু আন্তরিকতার ঘাটতি নাই। বিগত সরকার শিক্ষার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে একটা বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য। কলেজের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সততা নিয়ে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ নাই বলে তিনি সকলকে কলেজটিকে উন্নত করার পরামর্শ ও সহযোগিতার কামনা করেন।
অত্র কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ২০১০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সোনারগাঁও উপজেলায় একমাত্র জিপিএ 5 প্রাপ্ত মোঃ রইস উদ্দিন বলেন, সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা স্বপ্ন দেখায়, পরিশ্রম করায় ও সফলতার পথ দেখায়। কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ব্যর্থতা থেকে। একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল,সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুমের সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেনি।
প্রাক্তন ছাত্রী ছনিয়া আক্তার বলেন, কলেজের শিক্ষকরা আমাদের সন্তানতুল্য স্নেহে পড়ালেখা করিয়েছেন।
আরেক প্রাক্তন ছাত্র মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, সোনারগাঁও আইডিয়াল কলেজ সোনারগাঁ উপজেলা একটি স্বনামধন্য কলেজ হওয়া সত্বেও গত ১৫ বছরে যথাযথ অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়নি।আমরা সকলে মিলে কলেজটিকে একটি উন্নত ও মানসম্মত কলেজ হিসেবে গড়ার জন্য সহযোগিতা করব।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট আমির হোসেন, জহিরুল ইসলাম, সোনারগাঁও আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় অনুষ্ঠানে আগত প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।