ভারতের আসাম রাজ্যের বন্দিশিবিরে ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত বন্দীদের এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টকে হলফনামা দিয়ে এ কথা জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

সরকারের হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘অল্প সময়ের মধ্যে বিদেশিদের ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়।’ কারণ, অনুপ্রবেশকারীরা যে দেশের ‘প্রকৃত নাগরিক’, সেই দেশের সরকার তাদের পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই করে প্রত্যর্পণ অনুমোদন করার পরেই তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব, যা সময়সাপেক্ষ বিষয়।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আসামের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে ২৭০ জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিনা অপরাধে এবং বিদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে বন্দী রয়েছেন ৬৩ জন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে কথিত বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের (প্রধানত বাংলাভাষী মুসলমান) কেন তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়, তা জানতে চান সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি বিনা অপরাধে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে কেন আটকে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভর্ৎসনা করেন আদালত।

বিদেশিদের চিহ্নিত করেও কেন তাঁদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না—এই প্রশ্নও তোলেন সুপ্রিম কোর্ট। সে সময়ে কেন্দ্র ও আসাম সরকারের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চান, কোন বিশেষ কারণে তাঁদের ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। একজন ব্যক্তি বিদেশি বলে চিহ্নিত করে তাঁকে অনন্তকাল আটকে রাখা যায় না।

এরপর গত সপ্তাহের শেষে এক হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, তারা চাইলেও এই ব্যক্তিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়, যতক্ষণ না প্রত্যর্পণ চুক্তি মোতাবেক যাবতীয় তথ্য তাদের হাতে আসছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এমন সময় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কথা বলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে ভারতের নথিপত্রহীন অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, এই অভিবাসীদের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে বিমানে তোলা হচ্ছে।

গতকাল রোববার ১১২ অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে হরিয়ানার ৪৪ জন, গুজরাটের ৩৩ জন, পাঞ্জাবের ৩১ জন, ২ জন উত্তর প্রদেশের এবং ১ জন করে হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের।

এঁদের শিকল পরিয়ে আনা হয়েছে কি না, তা জানা না গেলেও দ্বিতীয় দলে নারী বাদে অন্যদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে বিমানে তোলা হয় বলে এই অভিবাসীরা ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

প্রথম দলের সবাইকে বেড়ি পরানো হয়েছিল। আমেরিকা থেকে বিতাড়িত ভারতীয়দের প্রথম দল ৫ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাবের অমৃতসরে পৌঁছায়। এই দলে ১০৪ ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তাঁদের সবাইকে হাতে–পায়ে বেড়ি পরিয়ে আনা হয়েছিল এবং তাঁরা প্রায় দুই থেকে তিন দিন শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেননি বলে ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় গত শনিবার ১১৭ জন নথিপত্রহীন অভিবাসীকে বিতাড়িত করে ভারতে পাঠানো হয়। এঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভারতের পত্রিকা ‘দ্য হিন্দুস্থান টাইমস’। তাঁরা জানিয়েছেন, এঁদের মধ্যে তিনজন নারীকে ছাড়া বাকিদের বেড়ি পরিয়ে উড়োজাহাজে তোলা হয়েছিল। এ ঘটনা যখন ঘটছিল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন।

দ্বিতীয় দফায় যাঁদের বিতাড়িত করা হয়, তাঁদের মধ্যে ৬৫ জন পাঞ্জাবের, ৩৩ জন হরিয়ানার, ৮ জন গুজরাটের, ৩ জন উত্তর প্রদেশের, ২ জন মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও গোয়ার এবং ১ জন হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের।

ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ধরনের ঘটনার নিন্দা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেআইনি অনুপ্রবেশসংক্রান্ত যাবতীয় আইন মানতে চায় ভারত। সে কারণে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার বিরোধিতা না করলেও অভিবাসীদের মানবিক অধিকারের দিকগুলো মাথায় রাখছে দিল্লি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গণমাধ্যম কমিশন ‘এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশের তালিকা দেবে আজ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসে কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। শনিবার (২২ মার্চ) জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ‘এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশগুলোর আলাদা তালিকা দিতে বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সুপারিশের তালিকা আজ (সোমবার) জমা দেওয়া হবে। 

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছে। 

রবিবার (২৩ মার্চ) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ তথ্য জানান।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “শনিবার প্রধান উপদেষ্টা আমাদের এখনই ব্যস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের তালিকা আলাদা করে দিতে বলেছেন। আমরা সোমবারের মধ্যে সেটা দেবো। আমাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

এদিকে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ব্যস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে এমন মন্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যম মালিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনি ন্যায্য মজুরি না দিতে পারলে প্রতিষ্ঠান করেন কেন? গার্মেন্টস মালিকদের মতো এসব কথা বলবেন না। সাংবাদিকদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

কামাল আহমেদ বলেন, “আমরা শুধু আপনাদের খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করিনি, কমানোর জন্য অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব করেছি, যাতে একটি সংবাদমাধ্যম আরো অনেক বেশি স্বাবলম্বী হতে পারে।”

গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, “প্রতিটি মিডিয়া হাউসে ফ্যাক্টচেকিং ডেস্ক করা দরকার। সেটা আমরা অনেক আগে থেকে বলেছি। কিন্তু বিগত সরকার অনেক মিথ্যা উন্নয়নের বয়ান করেছে। তখন সেটা মিডিয়া  প্রত্যাখ্যান করতে পারেনি। সরকারের সঙ্গে বিরোধ করতে পারেনি, ফ্যাক্টচেক ঠিকমতো হয়নি।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আগে মিথ্যা উন্নয়নের তথ্য ছড়িয়েছে। এখন পতনের পর অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য সুনামির মতো প্রচার হচ্ছে। আর মূলধারার অনেক মিডিয়া নানা ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে এখন তাদের গুরুত্ব হারিয়েছে। ফলে এখন মূলধারার মিডিয়া ভাইরাল হওয়ার নেশায় যা-তা ছড়াচ্ছে। ভারতের মূলধারার অনেক মিডিয়াও বাংলাদেশে গুজব ছড়াচ্ছে। রিপাবলিক বাংলা বা এমন আধা ডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা পতিত সরকারের বন্ধু চ্যানেল।”

কামাল আহমেদ বলেন, “এটা রাজনৈতিকভাবে এখন মোকাবিলা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগ লাগবে। অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য নিয়ে খুব বড় বিপদ আসন্ন। কারণ ফেসবুক ও অন্যান্য মিডিয়া ফ্যাক্টচেক কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদনে বলেছি, এর জন্য সরকারি উদ্যোগ ও প্রতিটা হাউজের একে অপরের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।”

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার জামিন চেয়ে জেলহাজতে বাদী
  • আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার জামিন চাওয়ায় বাদীকে হাজতে পাঠালেন আদালত
  • ন্যায্য মজুরি দিতে না পারলে প্রতিষ্ঠান করেন কেন : কামাল আহমেদ
  • গণমাধ্যম কমিশন ‘এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশের তালিকা দেবে আজ