বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এমডির বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু
Published: 17th, February 2025 GMT
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার ও ব্যবস্থাপক সাফায়েত আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলোর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন করেন দিনাজপুর সদরের বালুবাড়ী এলাকার জোবায়দুর রহমান।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবস্থাপকের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই দুদকের কর্মকর্তারা এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। দুর্নীতি অনিয়মের সংশ্লিষ্টতার বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
অভিযোগ জোবায়দুর রহমান উল্লেখ করেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার খনিতে একের পর এক দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে নানান অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার ও ব্যবস্থাপক সাফায়েত আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পেট্রোবাংলা থেকে একটি অফিস আদেশ হয়।
পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ থাকলেও ৩ মাসেও ওই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। একইসঙ্গে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার ও সাফায়েত আলীকে ওএসডি না করে খুবই ধীর গতিতে তাদের তদন্ত কাজ করায় জনমনে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছে বলে ওই আবেদনে বলা হয়।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জোবায়দুর রহমান ও মোর্শেদ আলম বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপক সাফায়েত আলীর বিরুদ্ধে পেট্রোবাংলা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, উপ-কর কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, উৎকোচের বিনিময়ে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ২৫ জনকে নিয়োগ প্রদান, ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন, ব্যাংকে এফডিআর, প্রক্রিয়া ছাড়াই গাছ কাটা ও টাকা আত্মসাৎ।
অভিযোগগুলো থেকে জানা যায়, প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকারের বাড়ি বগুড়া জেলা সদরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়া এলাকায়। প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার ২০২২ সালের ২১ জুলাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে বিসিএমসিএলে কর্মরত আছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতির পূর্বে তিনি চাইনিজ ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির ইঞ্জিনিয়ার টু কন্ট্রাক্ট ও মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং) পদে দায়িত্বে ছিলেন। এই খনিতে চাকরিতে থেকে তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের পেছন দিকে ৮/১০ শতক জমির উপর ৫/৬ তলা বিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকার মিরপুর-২ এ একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়াও তিনি বগুড়া ও ফুলবাড়ীতে নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার জমি কিনেছেন।
অভিযোগগুলো বলছে, তার নামে অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়, চৌহাটি, পার্বতীপুর, দিনাজপুর-এ চলাচলের জন্য একটি পাজেরো স্পোর্টস জিপ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অফিস আদেশ বহির্ভূত আরও একটি পাজেরো ভি-৬ জিপ এককভাবে ঢাকাতে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও তিনি অবৈধভাবে ঢাকায় বসবাসরত তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য একটি মিতসুবিসি ল্যান্সার কার ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও সাইফুল ইসলাম সরকারের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ বছরে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি গত ২ বছরে কয়লা খনির আবাসিক এলাকায় ২৮/৩০ বছরের পুরাতন ৪০/৫০টি ফলদ বৃক্ষ কোনোরকম প্রক্রিয়া ছাড়াই বিক্রি করে সব অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে খনির ব্যবস্থাপক শাফায়েত আলী মিয়ার বিরুদ্ধেও সাইফুল ইসলামের সঙ্গে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১২ সালে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরিতে যোগদান করা শাফায়েত আলী ২০২০ সালে ঢাকার মিরপুর-০১ এর প্রাণকেন্দ্র রূপায়ণ টাওয়ারের পেছনে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। তার দুটি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ব্যবস্থাপক শাফায়েত আলী মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকের লেনদেনের স্টেটমেন্টও সঠিক নয় এবং ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়টিও সঠিক নয়।
কথা হলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো সঠিক নয়। আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ ওঠেপড়ে লেগেছে। এখানে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো করতে হয়। তবে এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ফ য় ত আল তদন ত ক র তদন ত কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানিদের বাংলাদেশ ভ্রমণে ‘ভিসা ক্লিয়ারেন্স’ লাগবে না
পাকিস্তানের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন আর ভিসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আগে বাংলাদেশের ভিসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স নিতে হতো পাকিস্তানিদের। এই ক্লিয়ারেন্স ছাড়া তাদের ভিসা দেওয়া সম্ভব ছিল না।
সম্প্রতি এই নিয়ম প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এখন পাকিস্তানিরা ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই ভিসা পাচ্ছেন।
২০২৪ সালে পাকিস্তানিদের জন্য ২ হাজার ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ভিসা ইস্যু করা হতো। এখন এই নিয়ম বাতিল হয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানও বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ১২৬টি দেশের জন্য ভিসা ফি মওকুফ করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
পাকিস্তানি অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকরা যাতে সহজেই বাংলাদেশে আসতে পারেন, সে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগে একজন পাকিস্তানি অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিককে বাংলাদেশি ভিসা পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। এমনও হয়েছে ভিসাপ্রার্থীর আবেদন অনুমোদন পেতে বছরও পার হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তিনি বলেন, “আগে এক জন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিক সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভিসার আবেদন করার পর তা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতো। সেখান থেকে সেটা আসত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এই মন্ত্রণালয় সেটা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠাত একটি গোয়েন্দা সংস্থায়। সেই গোয়েন্দা সংস্থা ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রবেশ করার ভিসা বা অনুমতি পেতেন।”
বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগের ফলে এখন আর সময়ক্ষেপণ হবে না। পাকিস্তানি বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য কোনো দেশের নাগরিক বাংলাদেশে আসার ভিসা পাবেন কি না, সেটা শুধু সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের বিবেচনার বিষয় হিসেবে থাকবে। ভিসা দেওয়া এবং প্রত্যাখ্যান করার এখতিয়ার এখন থেকে তাদের হাতেই থাকবে।
পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা ইস্যু সহজ করা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করতে এর আগে সুরক্ষা সেবা বিভাগের জারি করা (১১/০২/২০১৯ তারিখ) আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে পাকিস্তানি অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অন্য দেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদন বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশন সরাসরি নিষ্পত্তি করতে পারবে।
এর আগে ২০১৯ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত যেকোনো দেশের নাগরিককে ভিসা দেওয়া প্রসঙ্গে জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী অথবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত পৃথিবীর যেকোনো দেশের নাগরিককে সুরক্ষা সেবা বিভাগের ‘অনাপত্তি’ নিয়ে ভিসা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হলো।
ঢাকা/হাসান/রফিক