ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তাঁর স্ত্রী কে ইউ জোহরা জেসমিন এবং বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি আবদুর রশিদ শিকদারেরও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত ও তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও ছেলে রাহিব সাফওয়ান সরাফতের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগমের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার এসব আদেশ দেন।

ওরিয়নের চেয়ারম্যানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম ও মেয়ে জেরিন করিমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আবেদন করে দুদক। দুদকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়, ওরিয়ন গ্রুপ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং–সংক্রান্ত বিষয় অনুসন্ধান করছে দুদক। ওবায়দুল করিমসহ অন্যরা দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। আদালত শুনানি নিয়ে ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক জানতে পেরেছে, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তাঁর স্ত্রী দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

নিজাম হাজারীর সম্পদ ক্রোক

সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ৮২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা জমা হয়। আর উত্তোলন করা হয় ২৬৮ কোটি টাকা।

এর বাইরে নিজাম উদ্দিন হাজারীর নামে থাকা গুলশানের একটি ফ্ল্যাটসহ চারটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে একটি চারতলা বাড়ি এবং তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

চৌধুরী নাফিজের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত ও তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও ছেলে রাহিব সাফওয়ান সরাফতের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করে দুদক। সেই আবেদনে বলা হয়, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এমন অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে থাকা ২২টি ফ্ল্যাট, ২টি বাড়িসহ সব প্লট ও জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক শ ক ষ মন ত র ক হ স ব অবর দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

এ দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট বিশেষত পুলিশ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত নিয়মিত বাহিনী, গোয়েন্দা দপ্তরসহ র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ; তারা প্রতিনিয়ত আইনের ব্যত্যয় করছে। গত দুই দশকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে প্রায় চার হাজার নাগরিক। এর মধ্যে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে এক হাজারেরও বেশি।

ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমরা নাগরিকরা সব সময় চেয়েছি ক্রসফায়ারে নয়, বরং আইনগত প্রতিকারে সমস্যাগুলোর সমাধান হোক। রাষ্ট্রের মদদে যখন আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে এসব নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, প্রকৃত অর্থে তখন রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পায়। কোনো সমাজ ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া চলতে পারে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলতে থাকা অনিয়ম, নিষ্ঠুর আচরণে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কার্যত বাংলাদেশে তা-ই ঘটেছে। যখন আমরা জানতে পারি একজন আসামিকে হেফাজতে রেখে আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো ঘটনা ঘটেছে, তখন আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আমরা একটি সভ্য সমাজে বসবাস করছি! এ ধরনের আচরণ যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের দুঃসাহস আমাদের হতবাক করে। কাজেই উত্থাপিত অভিযোগটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনে অভিযোগটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আওতায় নিয়ে ন্যায়সংগত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কী করে এতটা অধঃপতন হলো? তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তারা কি তাহলে রাজনৈতিক প্রচ্ছন্ন বলয়ে ঢুকে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে বা পেয়েছে? এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মবহির্ভূত আচরণ ও কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ হয়তো উঠতেই থাকবে।
বিনা পরোয়ানায় আসামি বা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ না করাটা যে অন্যায় কিংবা বলা যায় আইনের ব্যত্যয়, এই বার্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনে রাখতে হবে। আসামিকে না পেয়ে স্ত্রী কিংবা সন্তানদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বাভাবিক পদ্ধতি বলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে মনে হয়। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় পিতাকে আটক করতে গিয়ে না পেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেসন্তানকে আটক করেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও দেওয়া হয়েছে। যদিও হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পরে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।

আমরা চাই আমাদের নিরাপত্তা। একই সঙ্গে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বা থাকবেন, তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণ যেন আইন ও বিধিসম্মত হয়। অন্যথায় আইনের শাসন ও জবাবদিহি শব্দ দুটি অকার্যকর হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা রয়ে যাবে। নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়ে দেশের কোনো মানুষের প্রাণহানি ঘটুক, সেটি কারও কাম্য নয়। কেননা, জীবনের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
এ দেশে ক্রসফায়ারে হত্যা বন্ধ হোক চিরতরে। কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করে থানা হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ‘গুম’-এর মতো ঘটনা যেন এ দেশে আর কখনও ফিরে না আসে সেই অঙ্গীকার করতে হবে। বিগত দিনে কে কী করেছে তা আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই। সামনের দিনে এ পরিস্থিতি যেন কোনো ক্রমেই না ঘটতে পারে সেই পথে চলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে, অন্যথায় তাদের নিয়ে যে সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা গভীর ক্ষত তৈরি করবে। 

আবু আহমেদ ফয়জুল কবির: মানবাধিকারকর্মী
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ