নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস রোধে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য যাচাই সেবায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আর আগের মতো এনআইডির নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এনআইডির সব তথ্য পাবে না। তারা কোনো ব্যক্তির তথ্য যাচাইয়ের জন্য নাম ও জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে ইসির কাছে আবেদন করবে। তথ্য সঠিক কি না, তা জানিয়ে দেবে ইসি।

আজ সোমবার দুপুরে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এস এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। সরকারি বেসরকারি ১৮২টি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ইসির কাছ থেকে এনআইডির তথ্য যাচাই–সংক্রান্ত সেবা নিয়ে থাকে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, আগে ব্যক্তির নাম ও জন্মতারিখ দেওয়ার পর চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এনআইডির তথ্যগুলো চলে যেত। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই সে তথ্য যাচাই করত। এখন ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তথ্য যাচাইটি তারা করে দেবে। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নাম ও জন্মতারিখ দিয়ে ‘সিস্টেমে’ তথ্য যাচাইয়ের অনুরোধ করবে। ইসি কোনটি সঠিক কোনটি ভুল তা জানিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এই ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশেষ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে ইসি এনআইডি সেবার চুক্তি বাতিল করে। পরে তাঁরা জানতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি এনআইডি নিয়ে কাজ করে। ইসির কারিগরি দল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয় দেখতে পায়। সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এনআইডির তথ্য ফাঁস ঠেকাতে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছেন।

তথ্য ফাঁস রোধে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন, তাঁরা একটি দল গঠন করে দেবেন। এই দলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও থাকবেন। এই দল যেকোনো সময় যেকোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ‘সিস্টেম চেক’ করতে পারবে; যাতে সিস্টেমে কোনো ত্রুটি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৫ দফা দাবিতে রংপুরের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, সড়ক অবরোধ

এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া চিকিৎসকের স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে রংপুরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একই দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতিতে আছেন।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মুখতার ইলাহী চত্বরে (মেডিকেল মোড়) সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ, প্রাইম মেডিকেল কলেজ, রংপুর আর্মি মেডিকেল কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এক ঘণ্টার সড়ক অবরোধ শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা রংপুর মেডিকেল কলেজের ভেতর পথসভা করেন। পরে মহাসড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, একই দাবিতে ১৭, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিন ধারাবাহিক বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছেন তাঁরা। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করছেন। এসব দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবু রায়হান প্রথম আলোকে জানান, ৫ দফা দাবিতে তাঁরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা আন্দোলন করছেন যাতে মানুষের সঙ্গে স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতারণা করা না হয়। দেড় বছর বা ৬ মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ চিকিৎসক লিখে মানুষের সঙ্গে যাতে প্রতারণা করতে না পারে।

শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো,
১. এমবিবিএস/বিডিএস ব্যতীত কেউ চিকিৎসক লিখতে পারবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে হাসিনা সরকার ম্যাটসদের (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করেছে। এই ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

২. উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ওটিসি লিস্টের বাইরের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবে না। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরের কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।

৩. স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনে দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সব শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে আগের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিবছর ৪-৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। চিকিৎসকদের বিসিএসে বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।

৪. সব মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল (ম্যাটস) ও মানহীন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) পদবি রহিত করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ