সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হবে
Published: 17th, February 2025 GMT
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীদের জন্য ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি প্রজনন বাড়াতে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ই জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সময় ইলিশ বাজারজাতও করা যাবে না। এমন নির্দেশনা জারি করেছে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়।
ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ঠিক করেছে সরকার। বাংলাদেশের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, তখন প্রতিবেশী দেশের জেলেরা এদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে থাকেন। এই কারণে মৎস্যজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞার সময় সমন্বয়ের দাবি করে আসছিলেন।
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব তথ্য জানান।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন, দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পাশে ছিলেন, তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত আকারে ইলিশ মাছ রপ্তানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকভাবে এই দুটি দেশে মোট ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যা কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর অন্যান্য দেশে পাঠানোর বিষয়ে বিবেচনা করা হতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স দ আরব
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন আর্থসামাজিক বাস্তবতায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে
প্রধানত কৃষি-নির্ভর গ্রামীণ জনপদের বিপন্ন জনগোষ্ঠির কল্যাণে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অনুসরণীয় সাফল্য। তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে হতে যাচ্ছে। এই নতুন আর্থসামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো দরকার। সোমবার উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘সামাজিক সুরক্ষায় সংস্কার প্রসঙ্গ’ শিরোনামে প্রাক-বাজেট ওয়েবিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকরা।
ওয়েবিনারের ধারণাপত্র উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, জাতীয় বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও এই বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ চলে যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসর ভাতা দেয়ায় এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ। প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ও বিপন্ন নাগরিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োজিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ০.৭ শতাংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা বাবদ, যেখানে প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ অনুপাত ১.১ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়বৈষম্য বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেন সমাজতাত্ত্বিক এবং বিআইজিডি-এর রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী। বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রধানত কৃষি-নির্ভর পরিবারের দিকে নীতি-মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত আলী বলেন, কৃষিতে এখনও শ্রমশক্তির বৃহত্তম অংশটি নিয়োজিত থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি দ্রুত বাড়ছে। তাই এই দুই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রান্তিক পরিবারগুলোর জন্য নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওপর জোর দেন তিনি।
নদী বিশেষজ্ঞ এবং রিভারাইন পিপল-এর সংগঠক শেখ রোকন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা দেয়ার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ আর্থ-সামাজিকভাবে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। তাদের বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হয় এমন সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা একান্ত জরুরি বলে মত দেন তিনি।
সিডব্লিউসিএস-এর সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ যেহেতু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত, তাই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক পরিবারগুলোর সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলের অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সহজ হলেও, নগরাঞ্চলে শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিতদের চিহ্নিত করায় অনেক রকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই নগরাঞ্চলের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাব্য উপকারভোগীদের চিহ্নিত করতে আলাদা ডাটাবেজ গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন চর, হাওড় ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারি এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান।