সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীদের জন্য ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি প্রজনন বাড়াতে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ই জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সময় ইলিশ বাজারজাতও করা যাবে না। এমন নির্দেশনা জারি করেছে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। 

ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ঠিক করেছে সরকার। বাংলাদেশের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, তখন প্রতিবেশী দেশের জেলেরা এদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে থাকেন। এই কারণে মৎস্যজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞার সময় সমন্বয়ের দাবি করে আসছিলেন।

সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব তথ্য জানান।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন, দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পাশে ছিলেন, তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত আকারে ইলিশ মাছ রপ্তানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকভাবে এই দুটি দেশে মোট ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যা কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর অন্যান্য দেশে পাঠানোর বিষয়ে বিবেচনা করা হতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স দ আরব

এছাড়াও পড়ুন:

উন্নয়ন ও বিশ্বায়নকে নতুনভাবে দেখা

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথ মসৃণ নয়। তাতে আসে বিভিন্ন ধরনের সংকট ও ধাক্কা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে আবার। অনেক দেশ মধ্যম আয়ের স্তরে আটকে থাকছে দীর্ঘদিন। বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘকালের। এখন উন্নত দেশের দক্ষিণপন্থিরাও অসন্তুষ্ট– যদিও ভিন্ন কারণে। এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলোকে নতুনভাবে দেখা এবং পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এ কাজ করা হয়েছে ড. রিজওয়ানুল ইসলামের সদ্য প্রকাশিত বই উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন-এ (প্রকাশক: বাতিঘর)। 

আলোচ্য বইটির শুরুতেই বলা হয়েছে, উন্নয়নের নির্দেশক হিসেবে শুধু জিডিপির প্রবৃদ্ধি অথবা মাথাপিছু আয়ের দিকে তাকালে চলবে না। কারণ অনেক দেশেই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় থেকে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশে আয়ের দিকে থেকে নিচের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের জীবনমান নড়বড়ে; তারা খাদের তলায় পড়ে যায় সামান্য ধাক্কায়। যেমনটি হয়েছিল কভিড মহামারির সময়। এখন আবার হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ধাক্কায়।
ড. ইসলাম মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মূল্যস্ফীতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করতে হয়। বিশ্বব্যাপী সুদহার বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শুধু এর মাধ্যমেই যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়। তিনি মনে করেন, বাস্তব অবস্থা আমলে নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সেখানে চাহিদা কমানোর পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ানোর এবং ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। তা ছাড়া সুদের হার বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে এবং অর্থনীতি ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছে কিনা, তা-ও দেখতে হবে। 

বইটিতে মধ্যম আয়ের স্তর থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ চ্যালেঞ্জ দুই ধাপের– নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যমে এবং সেখান থেকে উচ্চ আয়ের পর্যায়ে ওঠা। লাগাতারভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন শুধু বিনিয়োগের পরিমাণ নয়; প্রযুক্তিগত দক্ষতা, শ্রমের দক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈপুণ্য। সব শর্ত পূরণ করে বার্ষিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশ আগামী দশ বছরে উচ্চমধ্যম আয়ের পর্যায়ে উঠতে পারবে। এবং উচ্চ আয়ের স্তরে পৌঁছাতে লাগবে আরও প্রায় ২২ বছর– অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৩২ বছর! 
বইটিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থানের ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে। তার মূল উপসংহার এই যে সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান না কমলেও কাজের ধরন বদলাবে। সে অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না দেওয়া হলে অনেকেই পিছিয়ে পড়বেন। 
বিশ্বায়ন সম্পর্কে বইটিতে দুটি অধ্যায় রয়েছে। একটিতে আলোচনা করা হয়েছে শ্রম ও শ্রমিকের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব, আর অন্যটি বিশ্বায়নকে নতুনভাবে সাজানোর বিষয়। বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষের মূল কারণ সুফলের বণ্টনে অসাম্য। তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, অনেক দেশেই মোট উৎপাদনে শ্রমের ভাগ কমেছে এবং শ্রমিককে মোকাবিলা করতে হচ্ছে কষ্টের জীবন। কর্মপরিবেশ অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নমানের। মৌলিক অধিকার থেকে তারা থাকে বঞ্চিত। অভিবাসী শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় আচরণ এমনকি প্রতারণার শিকার হতে হয়। 
রক্ষণশীলরা মনে করছেন, বিশ্বায়নের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চীনের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। চীনকে ঠেকানোর জন্য শুরু হয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ড. ইসলাম মনে করেন, এটি চলতে থাকলে বিশ্বায়নের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে। তিনি বিশ্বায়নকে নতুনভাবে দেখার এবং রিগ্লোবালাইজেশনের পক্ষে। তবে তাঁর মতে,  ডব্লিউটিও যেসব সংস্কারের কথা বলছে সেগুলো অপর্যাপ্ত। কর্মসংস্থান এবং শ্রমের বিশ্বায়নের কথা কেউ বলছে না। বিশ্ব বাণিজ্য ও পুঁজির প্রবাহ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দৃষ্টি দিতে হবে শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারের দিকে। 
উপসংহারে বইটিতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন কৌশলকে দেখতে হবে নতুনভাবে, যেখানে প্রবৃদ্ধি হবে মাধ্যম, মূল লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনমান। ড. রিজওয়ানুল ইসলামের বইটিতে রয়েছে উন্নয়নের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ। তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে করা এই বিশ্লেষণ থেকে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষক ছাড়াও একটি বড় পাঠকগোষ্ঠী উপকৃত হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ