Samakal:
2025-03-24@00:53:23 GMT

দুর্নীতির সূচকে সুখবর নেই কেন?

Published: 17th, February 2025 GMT

দুর্নীতির সূচকে সুখবর নেই কেন?

বহু বছর ধরে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২৩ সালে সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমাদের অবস্থান ছিল দশম। এ বছর আমাদের অবস্থান হয়েছে ১৪তম। মানে আমাদের আগে আরও চারটি দেশের নাম এ তালিকায় ঢুকেছে। বাংলাদেশ দশম থেকে ১৪তম হয়েছে মানে যে আমাদের দেশে দুর্নীতি কমেছে তা নয়। দুর্নীতিতে আমাদের স্কোর প্রায় একই আছে (১ কমেছে)। ২০২৩-এ স্কোর ছিল ২৪, ২০২৪ সালের স্কোর হয়েছে ২৩। সহজ কথা, আমাদের চেয়ে আরও কয়েকটি দেশে বেশি দুর্নীতি হওয়ায় সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৮০টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান এখন ১৫১তম। 

 

দুর্নীতি দেশে আগেও ছিল, এখনও আছে। ব্রিটিশ আমলেও এ দেশে দুর্নীতি হয়েছে। তার প্রমাণ ‘দুর্নীতি বিরোধী আইন ১৯৪৭’, যা এখনও কার্যকর। মূলত পাবলিক সেক্টরের দুর্নীতিই এ আইনের উপজীব্য। তার মানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্রিটিশ আমল থেকেই দুর্নীতিপ্রবণ ছিলেন। সে কারণেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্রিটিশ সরকার আইন করে গেছে। ঔপনিবেশিক শাসন এখান থেকে বিদায় হয়েছে প্রায় ৮০ বছর, কিন্তু আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা এখনও দূর হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্রিটিশ মহারানীর আমলে যেমন দুর্নীতি করেছেন, হাল আমলের মহারানী বা সরকারের আমলেও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তারা ব্রিটিশ আমলেও নিজেদের মহারানীর খাস প্রতিনিধি মনে করতেন, এখনও নিজেদের তা-ই মনে করেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজও নিজেদের জনগণের সেবক মনে করতে পারলেন না। 
দুর্নীতির সঙ্গে গণতন্ত্র ও সুশাসনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। স্থিতিশীল গণতন্ত্রে ধীরে ধীরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। গণতন্ত্রে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি থাকে। গণতন্ত্র না থাকলে সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি থাকে না। গত ১৫ বছর বিশেষ করে ১০ বছর (২০১৪ থেকে) সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি ছিল না। ফলে সরকারের ভেতরে ও বাইরে দুর্নীতি বেড়েছে। 


প্রশাসন সরকারের অধীনে কাজ করে। প্রশাসন সরকারের কাছে জবাবদিহি করে। যেহেতু সরকারেরই কোনো জবাবদিহি ছিল না, তাই ধীরে ধীরে এখানে গড়ে উঠেছে এক জবাবদিহিহীন প্রশাসন। জনগণের কাছে আস্থাহীন একটি সরকার প্রশাসন বা রাষ্ট্রের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। ফলে প্রশাসন বা সরকারের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে। এভাবে গণতন্ত্রহীনতা রাষ্ট্রের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। যে যেভাবে পারে লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। সবাই যেন দুর্নীতির লাইসেন্স পেয়ে যায়। বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির লাইসেন্স পেয়ে যেন ব্রেক-ফ্রি দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। 


বিগত সরকার পুলিশের ওপর যারপরনাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পুলিশের ওপর নির্ভর করেছে। পুলিশকে দিয়ে সরকার বিরোধীদের দমন করেছে। ফলে পুলিশও এ সুযোগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। পুলিশের সবাই দুর্নীতিবাজ তা নয়। এ বাহিনীতেও সৎ কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু মোটের ওপর গত ১৫ বছরে পুলিশ ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের পুলিশের ওপর এই নির্ভরতার সুযোগে পুলিশ বাহিনীতে বেনজীর আহমেদের মতো কর্মকর্তারা লাগামছাড়া দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ তালিকায় বেনজীরের মতো আরও অনেকেই আছেন। আসলে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। দুর্নীতিবাজদের ওপর নির্ভর করেই টিকে থাকেন কর্তৃত্ববাদী শাসকরা। 
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ডেনমার্কে। তালিকায় এর পরে আছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ভুটানে। 


গণতন্ত্র ও সুশাসনের সঙ্গে যে দুর্নীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা তালিকায় থাকা দেশগুলোর অবস্থান থেকেই বোঝা যায়। ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড– এ দেশগুলোতে এক ধরনের স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে। যেখানে যে শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছে, জনগণ সে শাসন ব্যবস্থাই মেনে নিয়েছে। নরওয়েতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চালু আছে। সেখানকার জনগণ সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত। আবার ফিনল্যান্ডে গণতন্ত্র চলছে। এটিই সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ওই দেশগুলোর শাসক ও শাসন ব্যবস্থার ওপর জনগণ আস্থাশীল। নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই সেখানে চলছে। ফলে সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আছে। তাই ওই দেশগুলোতে দুর্নীতি কম।


বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোতে দেখা যায় ঠিক তার বিপরীত চিত্র। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে দক্ষিণ সুদানে। এরপর সোমালিয়া, ভেনিজুয়েলা ও সিরিয়ার অবস্থান। এই তিনটি দেশেই রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান। দেশগুলোতে গণতন্ত্র নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে। কর্তৃত্ববাদী শাসন বিদ্যমান। তাই সুশাসনও নেই। ফলে দেশগুলো চরম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। 


গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রগুলোতে শুধু যে দুর্নীতি বেড়ে যায় তা নয়, এসব রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে অবনতি হয়। আসলে গণতন্ত্রের সঙ্গে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সবকিছুই সম্পর্কযুক্ত। গণতন্ত্র থাকলে সুশাসন থাকে, সুশাসন থাকলে জনকল্যাণও হয়– কিছু কম নয় তো বেশি। উন্নয়ন না গণতন্ত্র– এই নব্য রাজনৈতিক মতবাদ কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে দেশকে ধাবিত করে। উদাহরণ বাংলাদেশ ও সিরিয়া। সুশাসন থাকলে মানবাধিকার পরিস্থিতিও উন্নত হয়। কারণ সুশাসনের মূল ভিত্তিই হলো আইনের শাসন। আমাদের গণতন্ত্রের সংকট থাকায় অপরাপর সব সূচকেই আমরা নিম্নগামী। 


বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে রাজনৈতিক সংকট দেখা যাচ্ছে, তার মূল কারণ গণতন্ত্রের সংকট। গণতন্ত্রের সংকটের কারণেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতার সূত্রপাত, সেখানে থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণতন্ত্রের সংকটের জন্যই সুশাসন বাধাগ্রস্ত হয় এবং দুর্নীতি বেড়ে যায়। কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে ‍দুর্নীতি বেড়ে যায়। আবার দুর্নীতিপ্রবণ রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই কর্তৃত্ববাদী শাসন বিকাশ লাভ করে। ফলে দুটিরই লাগাম টেনে ধরতে হবে। তা না হলে একটি শান্তিপূর্ণ, মুক্ত ও টেকসই বিশ্বব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা নিশ্চয়ই সে রকম একটি বিশ্বব্যবস্থা চাই না। কিন্তু বাস্তবে মনে হচ্ছে, আমরা যেন ক্রমে সে পথেই হাঁটছি। 

এরশাদুল আলম প্রিন্স: আইনজীবী, প্রাবন্ধিক
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট আইব জনগণ র ক ছ র জন ত ক স র অবস থ ন সরক র র র জনগণ আম দ র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলের সংস্কার যেভাবে সম্ভব

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছে। তবে অভ্যুত্থানের সাত মাস পরও সমাজে এখনও দুর্ভাগ্যবশত, কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা আসেনি। রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে অনেক অস্বস্তি ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মূলত রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এই উদ্বেগ, অস্বস্তি ও সমন্বয়ের অভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষাকে ক্রমশ পিছিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে একটি ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, তাকে সরকার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এক রকমের দূরত্ব ও বোঝাপড়ার অভাব বলা যায়। এটিকে অন্তর্বর্তী সরকার ও সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছাত্রদের এক ধরনের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। 

আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যাকরণ অনুযায়ী, এ ধরনের ঘোষণাপত্র সাধারণত অভ্যুত্থানের আগে কিংবা আন্দোলনের এক পর্যায়ে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষণাটি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ইতিহাসে আমরা দেখেছি, সাধারণত এ ধরনের উদ্যোগ অভ্যুত্থানের শরিকদের সমঝোতার ভিত্তি ও নীতিতে তৈরি হয়। কিন্তু এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও শরিকদের যথেষ্ট বোঝাপড়া ও যোগাযোগ ছিল না। এখন তো জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তৈরি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নামে একটি ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ফলে ওই ঘোষণাপত্রের প্রাসঙ্গিকতা ফিকে হয়ে গেছে, বললে ভুল হয় না।

সম্মুখ যোদ্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সংগঠনগুলোর মধ্যে আন্দোলনকালে শক্ত ঐক্য গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী শিক্ষার্থীদের এক রকমের দূরত্ব। এর সঙ্গে সংস্কারের সময়সীমা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের তারিখ আর চলমান সংস্কারে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে ইত্যাদি যুক্ত। সংস্কারের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসা। সংবাদমাধ্যমে আমরা জেনেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। 

দেশ পরিচালনার জন্য দরকার রাজনৈতিক দল। আর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি তুলেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি; তা কায়েমের মূল চালকও আসতে হবে রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ গুণগত পরিবর্তন আনতে আগ্রহী বলে মনে হয় না। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ যোদ্ধাদের কাছে এ বিষয়ে আস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান রাজনৈতিক পাটাতনে নতুন আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারে এমন রাজনৈতিক শক্তির শূন্যতা রয়েছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করার জন্য একটি রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ছাত্রদের সঙ্গে সমাজের একটি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের শক্তি ও সংযোগের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে। এখানে পরিষ্কারভাবে একটি রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে। কিন্তু জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো একটি রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠার জন্য যে প্রস্তুতি, প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দরকার, সেটি কিন্তু ছাত্র সংগঠন বা সম্ভাব্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে অনুপস্থিত। সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগের জায়গাটা এখনও স্পষ্ট বা শক্তিশালী নয়। ফলে পুরোনো রাজনৈতিক দলকে চ্যালেঞ্জ করতে হলে এনসিপিকে শুধু ছাত্রশক্তির ওপর ভর করলে চলবে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জায়গাটা পরিষ্কার করতে না পারলে তারা খুব বেশি দূর যেতে পারবে, বলা যায় না । 
পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে শুধু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন বোঝায় না। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে যে শাসন কাঠামো চলে এসেছে, তার সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান-দল-গোষ্ঠীর স্বার্থের আন্তঃসম্পর্ক বোঝানো হয়। এই সম্পর্ক বদলানো খুব সহজ নয়। পুরোনো কাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং স্বার্থের জায়গাগুলো সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে এক প্রকার লিখিত-অলিখিত যোগাযোগ রয়েছে। সেই যোগাযোগ ভেঙে দিয়ে নতুন বন্দোবস্তের দিকে যাওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। 

ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যদি ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া ও যোগাযোগ করে; তাদের সঙ্গে একটি সংযোগ তৈরি করে, তাহলে দূরত্ব কমতে পারে। দ্বিতীয়ত, পুরোনো সম্পর্ক এতই শক্তিশালী যে তারা নতুন সম্ভাব্য রাজনৈতিক শক্তিকে বিনষ্ট করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাতে পারে। ছাত্রশক্তির মূল ভরসা হতে পারে তাদের নিষ্ঠা, ত্যাগ ও ভবিষ্যৎমুখী স্বপ্ন। তারা যদি এই তিনটি বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ ও নাগরিকদের কাছে পৌঁছাতে পারে তাহলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খানিকটা সহজ হবে। তবে এটা অল্প সময়ে হয়ে যাবে, এমন ভাবনা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
গণতান্ত্রিক চর্চার স্বার্থে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে সংস্কার আনা জরুরি। এ পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পারলে দলগুলোর মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিষ্কারভাবে এখনও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব রয়েছে। এখনও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রায় সব সিদ্ধান্ত দেশের বাইরে থেকে আসে। এই প্রবণতা কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের জন্য ইতিবাচক নয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে, দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করা। জামায়াতও যদি মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট না করে এবং এ ব্যাপারে ক্ষমা চেয়ে পরবর্তী বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার প্রবণতা না দেখায়, তাহলে তাদের রাজনীতিও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। শুধু এসব কথা এ দুটি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমন নয়। সব দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা দরকার এবং তা প্রকাশ্য হওয়া জরুরি। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রত্যেককে নতুন করে জনসংযোগ ও জনসংগঠনগুলো গড়ে তোলার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। 

ড. কাজী মারুফুল ইসলাম: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য
kazi.maruf@du.ac.bd

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ. লীগের অর্থে পুষ্টরা এখনও গুজব ছড়াচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
  • ছাত্রনেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে: নুরুল হক
  • সেনাবাহিনী পক্ষে ছিল বলেই হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে: রিজভী
  • ‘আমাদের হাতে এখনও দ্বিতীয় লেগ আছে’
  • রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়াতেই হবে
  • সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে: তারেক রহমান
  • কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই: আমীর খসরু
  • শাকিবের জন্মদিনে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার ফার্স্ট লুক
  • শাকিবের জন্মদিনে ‘তাণ্ডব’সিনেমার ফার্স্ট লুক
  • রাজনৈতিক দলের সংস্কার যেভাবে সম্ভব