গত চারবারের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান এবার ছিলেন না। তাঁর শূন্যস্থানটা কে পূরণ করবেন, এই প্রশ্ন নিয়েই শুরু হয় এবারের জাতীয় অ্যাথলেটিকস। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মোহাম্মদ ইসমাইল দ্রুততম মানব হয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছেন।

আজ ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস শুরু হয়েছে। পুরুষ ও নারী, দুই বিভাগেই ১০০ মিটার স্প্রিন্ট হয়েছে আজ। সেখানে ছেলেদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হয়েছেন ইসমাইল। আর সেরা হতে তিনি ইলেকট্রনিক বোর্ডে সময় নিয়েছেন ১০.

৬১ সেকেন্ড।

এ নিয়ে পঞ্চমবার পুরুষদের ১০০ মিটারে স্প্রিন্টে প্রথম হলেন ইসমাইল। ২০২১ সালের পর প্রথমবার দ্রুততম মানব হওয়া ইসমাইল বললেন টানা পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন, ‘আমি এই প্রতিযোগিতায় দ্রুততম মানব হওয়ার জন্য টানা সাত মাস অনুশীলন করেছি। এটা আমার জন্য সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে নৌবাহিনী থেকে আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।’

আজ সুমাইয়া দেওয়ানকে হারিয়ে দ্রুততম মানবীর মুকুট ধরে রেখেছেন শিরিন আক্তার। এ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ১৬ বার ১০০ মিটার জিতলেন শিরিন। আজ নৌবাহিনীর এই অ্যাথলেট সময় নিয়েছেন ১২.০১ সেকেন্ড। দ্বিতীয় হওয়া সুমাইয়া ইলেকট্রনিক বোর্ডে সময় নেন ১২.১৫ সেকেন্ড।

টানা ১৬ বার ১০০ মিটারে প্রথম হয়ে রোমাঞ্চিত শিরিন বললেন এই প্রাপ্তি সহজেই মেলেনি, ‘আবার দ্রুততম মানবী হতে পেরে ভালো লাগছে। এটা আসলে সহজ ছিল। যাঁরা আমার সঙ্গে ছিলেন, তাঁরাও খুব ভালো স্প্রিন্টার। আমার কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফি স্যার সব সময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন।’

তবে দেশের মাটিতে নিয়মিত সাফল্য জেতা শিরিনের একটা স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি! সেটা হলো লাল–সবুজের জার্সিতে এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জেতা। আজ গণমাধ্যমকে যেমনটা বলেছেন তিনি, ‘আক্ষেপ বলে কিছু নেই। তবে এসএ গেমসে দেশকে একটি স্বর্ণপদক উপহার দিতে চাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ১০০ ম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

কোলজুড়ে ফুটফুটে শিশু, চোখে আনন্দ অশ্রু

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২; সোমবার সকাল ৯টা। শেরপুর শহরের বেসরকারি একতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে তোয়ালে মোড়া সদ্যোজাত এক শিশুকে বের করে নিয়ে এলেন চিকিৎসক। নতুন পৃথিবীর নতুন আলোতে তখনও ছেলে শিশুটি ধাতস্ত হতে পারেনি; চোখ পিটপিট করছে তার। সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের ধকলে শিশুটির মা জামেনা খাতুন তখনও অচেতন। চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষারত বাবা মো. মিজানের হাতে তুলে দিলেন সন্তানকে। তারপর যা হলো, সেটি সত্যি পৃথিবীর সেরা দৃশ্যগুলোর একটি হতে পারে। কাঁদতে কাঁদতে বাবা মিজান চুমু খেলেন সদ্যোজাত সন্তানের তুলতুলে হাতে। ওদিকে আজান দিলেন মিজানের ছোট বোনের স্বামী মো. মাসুদ। 

শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রত্যন্ত গ্রাম পাইকারতলার বাসিন্দা মিজান ও জামেনা। জেলার সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষিকাজ। এর বাইরে রাজমিস্ত্রি ও টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন অনেক যুবক। শিক্ষায় অনগ্রসর এ গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো না। যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবার সুব্যবস্থা না থাকায় যেতে হয় শহরে। ফলে অনেকেই গ্রামের ধাত্রী বা দাই দিয়ে প্রসব করান। এতে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার এ গ্রামে বেশি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান মেম্বার। তবে পেশায় রাজমিস্ত্রির সহকারী মিজান সংসারে শত অভাবের মধ্যেও স্ত্রী জামেনার ব্যাপারে ছিলেন সচেতন। 

মিজান জানান, রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে দৈনিক ৬০০ টাকা বেতন পান। তাঁর বাবা জালাল উদ্দিনও একই কাজ করেন। বাবা-মাকে নিয়ে তাদের যৌথ পরিবার। সংসারে অভাব অনটন লেগে আছে। তাদের প্রথম সন্তান জোবায়েদের বয়স ৫ বছর। স্ত্রী দ্বিতীয়বারের মতো যখন অন্তঃসত্ত্বা হলেন, তখন নানা অভাব অনটন সত্ত্বেও তাঁকে সর্বোচ্চ যত্নে রেখেছিলেন। প্রত্যন্ত গ্রামে অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ খুব কম। তাই স্ত্রীকে শেরপুর নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করিয়েছেন। গর্ভধারণের পর টিকাসহ চিকিৎসকের পরামর্শে সব ধরনের চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। সীমিত আয় থেকে একটু একটু সঞ্চয় করে সিজারের জন্য টাকা জমিয়েছেন। এসব করতে গিয়ে কষ্ট হয়েছে। এখন সেসব ভুলে গেছেন সন্তানের মুখ দেখে। 

মিজান আরও জানান, রোববার রাত ২টার দিকে জামেনা খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। প্রতিবেশী এক আত্মীয়ের ইজিবাইক ভাড়া করে ফজরের নামাজের সময় স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন শেরপুরের উদ্দেশে। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন, তাঁর স্বামী ও জ্যাঠাতো ভাইয়ের বউ। প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি যান নারায়ণপুরের একতা হাসপাতালে। ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক সকাল ৯টায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করায়। 

দুই ছেলেকেই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা পোষণ করে মিজান বলেন, তাঁর স্বপ্ন ওরা দু’জনই ভবিষ্যতে নামকরা আলেম হবে। শিশুর কি নাম রেখেছেন জানতে চাইলে মিজান জানান, তাঁর ছোট ভাই মাদ্রাসার হুজুরের সঙ্গে কথা বলে নাম ঠিক করবেন। বাড়ি যাওয়ার পর নাম রাখা হবে। 

মিজানের মা রোকেয়া বেগম সোমবার বিকেলে এসেছিলেন নাতি দেখতে। ফুটফুটে নাতিকে কোলে নিয়ে বলছিলেন, ‘ছেলের চেহারা আমার শ্বশুরের মতো হয়েছে। তিনি খুব ভালো মানুষ আছিলেন। নাতি আমার খুব ভাগ্যবান হবো। বছরের প্রথম দিন জন্ম নিছে। এইডা আল্লাহর রহমত। আল্লাহ ওরে সুস্থ রাখুক এই দোয়া করি।’ 

সোমবার রাতে কথা হয় জামেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, সোমবার যে বৈশাখের প্রথম দিন অর্থাৎ নববর্ষ ছিল জানতেন না। জ্ঞান ফেরার পর যখন নার্সের কাছে শুনলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে তিনি ওই হাসপাতালে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তখন কুব ভালো লেগেছে। মাশাআল্লাহ বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। 

জামেনা আরও বলেন, অভাবের সংসারে তাঁকে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি অনেক যত্নে রেখেছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর কোনো বাড়তি কাজের চাপ দেননি। সময় মতো ডাক্তার দিয়ে চেকআপ করেছেন। সবজির পাশাপাশি কষ্ট হলেও ডিম, দুধ, কলা খেয়েছেন নিয়মিত। 
হাসপাতালের চিকিৎসক মাহবুবা কবীর স্বপ্না বলেন, মা ও শিশু দু’জনই ভালো আছে। শিশুটির ওজন হয়েছে ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম। মায়ের জ্ঞান ফেরার পর শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানো হয়েছে। চারদিন পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ