বারবার ঘুরিয়ে দালাল ধরতে বাধ্য করা হয়, অভিযোগ সেবাপ্রত্যাশীদের
Published: 17th, February 2025 GMT
রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে ঘুষ আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলার সার্কিট হাউসে এ কার্যক্রম চলে। এক পাসপোর্টেই ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
এ সময় ভুক্তভোগীরা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নিজেদের হয়রানির চিত্র তুলে ধরেন। পরে তাঁদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া বক্তব্য লিখে নেন একজন সাঁটলিপিকার। এ দিন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মঈনুল হোসেন ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন।
আরও পড়ুনরাজশাহী পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালের ফাইলের কাজ আগে করার প্রতিবাদ, হুঁশিয়ারি২০ নভেম্বর ২০২৪এর আগে গত ২০ নভেম্বর পাসপোর্ট কার্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ আদায়ের অভিযোগে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। পরে এ ব্যাপারে রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক (ডিডি) রোজী খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর কক্ষে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ভুক্তভোগীদের উচ্চবাচ্য হয়। এর জেরে থানায় অভিযোগ করেন রোজী খন্দকার। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
তদন্ত কমিটির সামনে একজন ভুক্তভোগী নারী বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি পাসপোর্ট করার জন্য ওই অফিসে যান। তখন শুরুতেই তাঁর ফরমের ভুল ধরে ফেরত পাঠানো হয়। বাধ্য হয়ে তিনি তখন ডিডি রোজী খন্দকারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু ডিডিও কোনো সমাধান দেননি। বাধ্য হয়ে তিনি একটি মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুষ দেন। এরপর ওই ব্যক্তি তাঁকে সরাসরি ছবি তোলার কক্ষে পাঠিয়ে দেন। তখন ওই আগের ফরমেই কাজ হয়ে যায়।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির একজন নেতার ভাতিজা তদন্ত কমিটিকে বলেন, তাঁর চাচার নামে মামলা আছে। পাসপোর্টের আবেদন করার সময় আদালতের অনুমতিপত্রও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তিন মাস ধরে ফাইল আটকে রাখেন ডিডি রোজী খন্দকার। তখন তিনি একটি মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এর ১৫ দিনের মধ্যে তাঁর চাচার পাসপোর্ট হয়ে যায়।
নগরের একজন ফার্মেসি মালিক তদন্ত কমিটিকে জানান, তিনিও একটি মাধ্যমে দুই হাজার টাকা ঘুষ দেন। এরপর তাঁর পাসপোর্ট সংশোধন করা হয়।
ভুক্তভোগী এক সমাজসেবক ছদ্মবেশে তদন্ত কমিটিকে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে হয়রানির চিত্র দেখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, কাগজপত্র নির্ভুল থাকলেও ভুল দেখিয়ে বারবার ঘুরিয়ে সেবাপ্রত্যাশীকে দালাল ধরতে বাধ্য করা হয়। সেখানে সব সমস্যার সমাধান দেন আনসার সদস্যেরা। পাসপোর্ট অফিসে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিলে লাইন লাইনের মতো থাকে, ঘুষ দেওয়া ব্যক্তির কাজ সবার আগে হয়ে যায়। দিনের পর দিন এমন অবস্থায় চলছে। তাঁর দাবি, পাসপোর্ট অফিসে ৯৮ ভাগ মানুষকে ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হয়।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ডিডির২০ নভেম্বর ২০২৪তদন্ত কমিটির কাছে অনেকেই অভিযোগ করেন, রোজী খন্দকার সেবাগ্রহীতাদের তাঁর কক্ষে ঢোকার অনুমতি দিতে চান না। দীর্ঘ সময় পর কক্ষে ঢোকার অনুমতি মিললেও ভেতরে বসার সুযোগ থাকে না। অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে সবাইকে ডিডির টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হয়। আর ডিডি চেয়ার বসে থাকেন। এভাবে তিনি নাগরিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। সরকারি অফিসে এটি হতে পারে না।
ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে রোজী খন্দকার বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে এ ব্যাপারে শুনছি, আমি কী বলব? দেখি তদন্ত প্রতিবেদনে কী আসে, তারপর সেই অনুযায়ী জবাব দেব।’
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অভিযোগকারীদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫-১৬ জন নিজেদের বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে নিয়ে কথা কাটাকাটি, এজলাসের সামনে প্রেমিকার বিষপান
চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসের সামনে কলি নামের এক নারী বিষপান করেছেন। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী নগরীর আলকরণ এক নম্বর গলি এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিষপান করা ওই নারীর সঙ্গে আদালতে কর্মরত হেফাজত নামের একজনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বেশকিছু দিন ধরে তাদের মধ্যে বিয়ে করা না করা নিয়ে কথা কাটাকাটি চলছিল। এর জেরে আজ বুধবার আদালত এলাকায় একপর্যায়ে বিষপান করেন ওই নারী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, বিভিন্নজনের মাধ্যমে জেনেছি, ওই নারীর সঙ্গে আদালতে কর্মরত একজনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বিয়ে করা না করা নিয়ে ওই নারী সিএমএম কোর্টের এজলাসের সামনে বিষপান করেছেন। পরে নারী পুলিশের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত হেফাজতের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বলে জানা গেছে।