‘আমাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত।/ আমাদের রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিল মূতার প্রান্তর।/ 
পৃথিবীর যত গোলাপ ফুল ফোটে তার লাল বর্ণ আমাদের রক্ত,/ তার সুগন্ধ আমাদের নিঃশ্বাস বায়ু।’
রংপুরে যখন ১৬ জুলাই আবু সাঈদের বুক বিদীর্ণ করে দেয় ঘাতক পুলিশের বুলেট, তখন রংপুর থেকে ঢাকায় দেয়ালে-গ্রাফিতিতে, প্রতিবাদী স্লোগানে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে কবি আল মাহমুদের এই পঙ্‌ক্তিগুলো। কবি আল মাহমুদ জীবনকে দেখেছেন কবিতার ভেতর, কবিতাকে করে তুলেছেন জীবনের ভাষ্য। প্রতিদিনের উচ্চারিত শব্দ-সমবায় থেকে সংগ্রহ করেছেন শব্দ। ফলে তাঁর জটিল চিন্তাও হয়ে উঠেছে সহজবোধ্য। তাঁর লেখনীতে যেমন এসেছে সময়ের গল্প, তেমনি স্বাদেশিকতা ও আন্তর্জাতিকতা বোধও এনেছেন শব্দের গাঁথুনিতে। রাজনৈতিক চেতনা তাঁকে করে তুলেছে জনবান্ধব। আল মাহমুদ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বারবার চেতনাকে জাগ্রত এবং প্রতিবাদী ভূমিকায় নিজেকে অবতীর্ণ করেন। এ ক্ষেত্রে নিজ জন্মভূমি ও ভিন্ন দেশের মানুষের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য বিবেচনায় আনেননি। ফলে পৃথিবীর যে প্রান্তেই মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতা বিপন্ন হয়েছে, সেখানেই কবি কবিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কেননা তিনি রুশোর মতো বিশ্বাস করেন, মানুষের প্রজন্ম জন্মগতভাবে স্বাধীন। তাদের স্বাধীনতা, তাদের নিজেদের অবিচ্ছেদ্য সত্তা। সে সত্তাকে প্রদান করার অধিকার তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য কারও হতে পারে না। অন্য কারও স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করার অধিকার প্রাকৃতিক বিধানেরই বিরোধী। চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী মিছিলে অনেকটাই প্রাসঙ্গিক ছিলেন কবি আল মাহমুদ। এমনকি দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী স্লোগান ও গ্রাফিতিতে আল মাহমুদের কবিতা শোভা পেয়েছে। মঞ্চে-মিছিলেও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেন কবি আল মাহমুদ। শত শত তরুণের আত্মত্যাগের এই অভ্যুত্থানের মাঠে প্রতিবাদী স্মারক হিসেবে এসেছে আল মাহমুদের কবিতা। কবি লিখেছেন– ‘আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে/ 
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,/ শত সংঘাতের মধ্যে এ শিবিরে এসে দাঁড়িয়েছি।.

..
আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি।/ এর আদি বা অন্ত নেই। /
পনের শত বছর ধরে সভ্যতার উত্থান-পতনে আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।/


চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে অনেক তরুণকেই বিনা অপরাধে জেলে নেওয়া হয়েছে। যদিও তাদের মনপ্রাণ, ধ্যানজ্ঞানে ছিল বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন। কবি-লেখকরা তরুণদের এই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পথ দেখান। তারা থাকেন পথপ্রদর্শকের কাতারে। কবি চার্লস সিমিকের কথায়, ‘প্রতিটি ধর্ম, আদর্শ এবং চিন্তার প্রথা ও পন্থা ব্যক্তি মানুষকে পুনর্শিক্ষা দিতে চায়, তাঁকে ভিন্ন একটি মানুষে রূপান্তর করতে চায়। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নিজের জন্য ভাবেন না, তারা তোমাকে এ কথাই বলবে।’ ‘জেলগেটে দেখা’ কবিতায় উপস্থিত সেই দেশপ্রেমিক আল মাহমুদ; যিনি চিন্তাকে সক্রিয়তা দিয়ে স্বদেশ দেখেছেন। যখন নাহিদ-আসিফদের আয়নাঘরে নিয়ে নিপীড়ন করা হয়, সে সময়ের কষ্ট যেন অনুরণিত হয়েছে একজন আল মাহমুদের কবিতায়। সেই কথার সত্যকে জীবনের সত্যে সমীকৃত করে দিয়েছেন কবি আল মাহমুদ।
জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অনেক দেয়ালে যে কবিতার দেয়াল লিখন দেখা গেছে তা হলো–
আজ আবার হৃদয়ে কেবল যুদ্ধের দামামা/
মনে হয় রক্তেই ফয়সালা।/ বারুদই বিচারক।/ আর স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠা।
                                                                                         (বখতিয়ারের ঘোড়া) 


গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের জনআকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের প্রধানতম কবির নাম আল মাহমুদ। আল মাহমুদ বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হন। চার দশক ধরে আল মাহমুদ সাংস্কৃতিক স্বৈরাচার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনাবিরোধী তৎপরতার বিপক্ষে যে আমৃত্যু লড়াই অব্যাহত রেখেছিলেন, চব্বিশের সফল গণঅভ্যুত্থান তারই ধারাবাহিকতা। তাই নতুন বাংলাদেশে আল মাহমুদ অবশ্য পাঠ্য কবিসত্তা। আল মাহমুদ কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, নিবন্ধকার এবং সাংবাদিক। সবকিছুকে অতিক্রম করে চিরজাগ্রত থাকে তাঁর কবিসত্তা। আজকে আমরা যখন সমাজ বাস্তবতার সর্বত্র নষ্ট রাজনীতির কালো আঁচড় দেখতে পাচ্ছি, এমনকি আমাদের শিল্প-সাহিত্যেও তার করাল প্রভাব দেখা যাচ্ছে, তখন আল মাহমুদ সময়ের কঠিন বাস্তবতার গড্ডলিকা স্রোত অতিক্রম করে নিজেকে চিরায়ত সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সমকালীন সতীর্থ লেখক-সাহিত্যিকদের নির্ভীক-সাহসী উচ্চারণের পথ দেখিয়ে গেছেন। 


কেবল তিরিশের দশকে যে বাংলা কবিতা ইউরোপবাহিত আধুনিকতার অনুরণন ‘ক্লেদ কসুম’ হয়ে নাগরিক যন্ত্রণার চিন্তাভাষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল; পঞ্চাশের দশকে এসে বাংলাদেশের কবিতা তা একান্ত বঙ্গজ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বৃহত্তর বাঙালি মুসলমানদের লোকজ জীবনাচার-ধর্ম-ঐতিহ্য ও ভাষার সমৃদ্ধে আলাদা হয়ে উঠতে দেখি আল মাহমুদের কবিতায়, যা তার অন্যান্য সহযাত্রী কবি শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরীসহ নাগরিক কবিদের উন্নাসিক আধুনিকায়নে আমরা দেখতে পাই না। সেক্যুলার তকমা দিতে গিয়ে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্যচ্যুত হয়ে শিকড়হীন রূপের নাগর হয়ে ওঠে বাংলা কবিতা। কিন্তু কবি আল মাহমুদের এ সচেতনতা আমরা লক্ষ্য করি কবিতায় শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। তিনি সম্পূর্ণ সচেতনভাবে ইংরেজি-আরবি-ফারসি শব্দের পাশাপাশি প্রাচীন সংস্কৃত সাধু-চলতি শব্দ নির্দ্বিধায় ব্যবহার করেছেন তাঁর কবিতায়। 


বাংলাদেশের কবিতার পঞ্চাশের দশকে এসেছিল পাকিস্তানবাদ ও বামপন্থি কমিউনিস্ট ধারার বিপরীতে দেশাত্মবোধক রোমান্টিকতা। বাংলাদেশের পঞ্চাশের কবিরাই সমাজ সচেতনতার সঙ্গে নান্দনিকতার একটি মিশেল ঘটাতে পেরেছিলেন। এরা কবিতাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন রোমান্টিকতার কাছে। এ দশকে, বিশেষ করে আল মাহমুদ, হাসান হাফিজুর রহমান ও ওমর আলীর কবিতা দেশ-মা-মাটি প্রত্যয়ে অভিন্ন প্রতীক হয়ে উপমা-উৎপ্রেক্ষার সমন্বিত শিল্পভাষ্য হয়ে ওঠে। 
সনেট দশ-এ কবির উচ্চারণ: 
‘শ্রমিক সাম্যের মন্ত্রে কিরাতের উঠিয়াছে হাত/
হিয়েনসাঙের দেশে শান্তি নামে দেখো প্রিয়তমা,/
এশিয়ায় যারা আনে কর্মজীবী সাম্যের দাওয়াত/
তাদের পোশাকে এসো এঁটে দিই বীরের তকমা/
আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,/
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,/
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ/ 
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ।’


পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতি দ্বারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা চলছে মাৎস্যন্যায় পন্থায়। বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে গিলে খায়, তেমনি ছোট অর্থনীতি ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে বড় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শক্তিগুলো গিলে খেতে চাইছে। এভাবেই গত শতাব্দীতে বহু ভাষা ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর বিলুপ্তি ঘটেছে। বায়ান্ন সালে তরুণ প্রজন্ম মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এবং একাত্তরে রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের উদাহরণ সৃষ্টি করেও আমরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে আত্মরক্ষা করতে পারছি না। এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজকে অধীনস্থ করা। তিরিশের দশকে ইতালীয় কবি ও মার্ক্সবাদী দার্শনিক অ্যান্তোনিও গ্রামসি পুঁজিবাদী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আগ্রাসনের এই প্রবণতাকে কালচারাল হেজিমনি বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী সরকারের বাহিনীর হাতে বন্দি গ্রামসি জেলখানায় বসেই তাঁর শ্রেষ্ঠ লেখাগুলো লিখেছিলেন। 


সব ধর্ম-বর্ণ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের সম্মিলন ও সহাবস্থানই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার সৌন্দর্য। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনায় এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির আকাঙ্ক্ষা ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য। সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে পরস্পর বৈরী ও বিভাজিত মানুষ নিয়ে কোনো জাতিরাষ্ট্র মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। যারা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে আল মাহমুদের মতো কবিকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করতে চেয়েছে, তাঁকে অস্বীকৃতি জানাতে ও রাজাকার বলে গালি দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি, তারা আসলে কারা? নিশ্চয়ই বহুমত ও পথের সহাবস্থানমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তাদের প্রত্যাশা নয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে কবি আল মাহমুদ সকলের কাছে পৌঁছতে চেয়েছেন। শিকড়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা ও শক্তি সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রেরণা মানুষ বড় কবি-লেখকদের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক গতিপথ নির্মাণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো কবি আল মাহমুদও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক, তিনি আমাদের বাংলাদেশ পন্থারও দিকপাল। ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিলো কবি আল মাহমুদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।   


কবি ও সাংবাদিক
shakilmahmud.bd@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক শ র দশক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আ’লীগকে রাজনীতি করতে দেব না, দেশজুড়ে বিক্ষোভ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই এ দেশের মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। একাত্তরের পরে তারা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। এ দেশের মানুষ যে গণতন্ত্র চেয়েছিল– ’১৪, ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচন– সে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে যারা মারা গেছে, তাদের রক্তের শপথ– আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না। 
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এদিন একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। 

আখতার হোসেন বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কাজ শুরু করেনি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে লীগের বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া যাবে না। না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে লড়াই করবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তাঁকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীকে ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এর পর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে; পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।

রাজধানীর বকশীবাজারে গতকাল বিকেলে কারা কনভেনশন সেন্টারে লালবাগ থানা এনসিপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যদি ক্যান্টনমেন্ট বা ভারত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পথ করে দিতে চায়, তবে তাদেরও প্রতিহত করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেবল আওয়ামী লীগকেই বিদায় করা হয়নি উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ এবং এই ফ্যাসিবাদী ১৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকে। সেই এক-এগারোর বন্দোবস্তের ফলেই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিল। আরেকটি এক-এগারো আমরা কখনও বাংলাদেশে হতে দেব না।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। তা না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে আহতরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে। 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই’– প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যারা করেছে, তাদের আবার কীসের ক্লিন ইমেজ? গণহত্যার বিচার শেষ হওয়ার আগে যতই ক্লিন ইমেজ হোক না কেন, বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না।

গতকাল গণসংহতি আন্দোলন পাবনা জেলার উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও এর রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হওয়ার পরও বিচারকাজ এখনও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগোয়নি। আওয়ামী লীগের যে নেতৃবৃন্দের নির্দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, অবিলম্বে তার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এনসিপি। স্থানীয় পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কিশোরগঞ্জে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে গতকাল মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের এক দফা দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

এদিকে, গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান। নাসের রহমান লেখেন, গণভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হোক। এই গণহত্যাকারী দলকে কোনো সুস্থ, বিবেকবান ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কখনোই সমর্থন করতে পারে না।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক; নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোল করে আর্জেন্টিনাকে হারানোর ঘোষণা রাফিনিয়ার
  • ‘সেনাবাহিনী ভূমিকা না রাখলে গণঅভ্যুত্থান সফল হত না’
  • এনসিপির কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠিত সত্য আড়ালের পরিণতি
  • ৪ ওভারে আর্চারের ৭৬ রান, এমনকিছু আগে দেখেনি আইপিএল
  • অধ্যাপক জিনাত হুদাকে গ্রেপ্তা‌রের দাবি ঢা‌বি সাদা দ‌লের 
  • আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না: আখতার হোসেন
  • আ’লীগকে রাজনীতি করতে দেব না, দেশজুড়ে বিক্ষোভ
  • মঞ্চে আসন রাখা ও বক্তৃতা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এনসিপির ইফতার মাহফিলে হট্টগোল
  • প্রথম আসরের স্মৃতি ফিরিয়ে শুরুতেই কলকাতা-বেঙ্গালুরু ম্যাচ
  • ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি