অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’: ৫২৯ জনসহ সারাদেশে গ্রেপ্তার ১৫০৩
Published: 17th, February 2025 GMT
অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের আওতায় গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫২৯ জনসহ মোট এক হাজার ১ হাজার ৫০৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় ৫২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর অন্যান্য মামলা ও ওয়ারেন্টের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৭৪ জনকে।
পুলিশ সদরদপ্তর জানিয়েছে, আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধার করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা। ২৪ ঘণ্টার অভিযানে ১টি পিস্তল, ১টি দেশীয় তৈরী শুটার গান, ১টি পিস্তলের গুলির খোসা, ১টি লাল রংয়ের তাজা সীসার কার্তুজ, ২টি কার্তুজের খোসা, ১টি চাপাতি, ২টি রামদা, ১টি ছেনি, ২টি দা, ৪টি ছোরা, ১টি ধারালো চাকু, ২টি ধামা, ১টি স্টীলের তৈরি ব্যাটন, ১টি প্লাস ও ১টি খেলানা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশকে বাঁচাতে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ
মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ছাত্র শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন পুলিশের গুলিতে মারা যান। কিন্তু বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও পুলিশের হাতে ইয়ামিনের মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারে গত ১৮ জুলাই ইয়ামিনকে হত্যা করা হয়।
পুলিশের এমন প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ এমআইএসটির শিক্ষার্থীরা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন তারা। এ হত্যা মামলার অগ্রগতি জানতে চেয়ে দ্বিতীয় দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। একই সঙ্গে সাভার থানায় করা মামলার অগ্রগতির তথ্য আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
ইয়ামিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার থানার পরিদর্শক হেলাল উদ্দীন সমকালকে বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। শেষ হতে সময় লাগবে। কতদিন সময় লাগবে, এটা বলা যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাঁচাতে এমন বিতর্কিত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, আইনের মাধ্যমে দোষীদের যাতে শাস্তি নিশ্চিত করা না যায়।
ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, সাভারের পাকিজা মডেল মসজিদের কাছে পুলিশের একটি এপিসি (সাঁজোয়া যান) থেকে একজনকে টেনে নিচে ফেলা হয়। তিনি সাঁজোয়া যানের চাকার কাছে সড়কে পড়ে থাকেন। পুলিশের এক সদস্য নিচে নামেন। এক হাত ধরে তাঁকে টেনে আরেকটু দূরে ফেলে রাখেন। পরে কয়েকজন পুলিশ মিলে তাঁকে টেনে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে ঠেলে অন্য পাশে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি ছিলেন ইয়ামিন।
এর আগে ইয়ামিনকে হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সঙ্গে যুক্ত ছিল ভিডিও ক্লিপ। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত নভেম্বরে তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
‘জনতার গুলি’তে ইয়ামিনের মৃত্যু
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনরত জনতা ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলি এবং ইটের আঘাতে আহত ইয়ামিন এপিসির ওপর লুটিয়ে পড়েন। এর পর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন পুলিশ সদস্যরা। তদন্ত কমিটি ৯ পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্য নিয়েছে। সাক্ষীরা একই কথা বলেছেন।
জানা গেছে, যে ৯ পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশ সরাসরি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে দু’জন ইয়ামিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারগারে আছেন। তদন্তের সময় পুলিশ ছাড়া অন্য কারও সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় তাঁর মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির সাভার থানা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলা করেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪৬ জনকে আসামি করা হয় এ দুই মামলায়।
এক পুলিশের চাকরির অবসান, দু’জন বরখাস্ত
জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপের সঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এ ঘটনায় জড়িত সব পক্ষের সাক্ষ্য নেওয়া জরুরি ছিল। তদন্ত কমিটির তিন সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে কমিটির সভাপতি ও ঢাকা জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নুর আলম ও সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ১৬ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশ সদরদপ্তরকে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সহকারী পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেনের চাকরি ১ ডিসেম্বর থেকে অবসান করা হয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল, তাদের সবার কথা শোনা উচিত ছিল। যেহেতু এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই মামলার আসামি, তাই আরও ভালোভাবে তদন্ত করা যেত। তিনি বলেন, এই তদন্ত বিশ্বাসযোগ্য না হলে আরও তদন্ত হতে পারে। প্রয়োজনে যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তোষজনক প্রতিবেদন না আসে, ততক্ষণ তদন্ত করা যাবে। যাদের কথা মানুষ বিশ্বাস করবে, তাদের দিয়ে তদন্ত করতে হবে।
তদন্ত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নুর আলম বলেন, এটা মামলার তদন্ত না। এটা অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন।
দু’জনের বরখাস্ত ১১ দিন পর প্রত্যাহার
তদন্ত কমিটির সভাপতি ও এক সদস্যের সাময়িক বরখাস্ত আদেশ গত ২৭ জানুয়ারি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১১ দিন পর তাদের বরখাস্ত কেন প্রত্যাহার করা হলো, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির সই করা প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। তবে তাদের বরখাস্তের সময় কর্তব্যকাল হিসেবে গণ্য হবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, পুলিশ সদরদপ্তরের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ, মন্ত্রণালয় থেকে এ বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘুষ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে। এ দুই কর্মকর্তা পুলিশ ক্যাডারের হওয়ায় সহজে তাদের আদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুত এনায়েত হোসেন নন-ক্যাডার হওয়ায় তাঁর আদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি।
হাসিনার কাছে পুরস্কার পাওয়া কর্মকর্তারা তদন্তে
বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর আলম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত ও সুবিধাভোগী বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনা এ পুরস্কার দেন। তদন্তকারী এ দুই কর্মকর্তাও গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের দমনের দায়িত্বে ছিলেন। বিপিএম-পিপিএম পাওয়া অনেক পুলিশ কর্মকর্তার পদক গতকাল বাতিল করেছে সরকার।
বদলি আদেশ অমান্য
বরখাস্তের পর মোহাম্মদ নুর আলমকে রাজশাহী ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের পরও তাদের বদলি আদেশ বহাল। কিন্তু তারা সে আদেশ অমান্য করে ঢাকায় রয়েছেন।
ঢাকা জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার ও পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি আহম্মদ মুঈদ বলেন, সেই সময় আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তা ছাড়া বিকল্প কেউ ছিলেন না। তাই তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে এটা প্রাথমিক প্রতিবেদন। ঘটনার পর পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেটা তুলে ধরা হয়েছে। যতটুকু পেরেছে, ঠিক ততটুকু প্রতিবেদনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন বিতর্কিত প্রতিবেদন কেন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে একটা প্রতিবেদন চাচ্ছিল। এ জন্য সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
বিতর্কিত এই তদন্তের পর এ ঘটনার পুনঃতদন্ত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এখন বিষয়টি বিচারাধীন। আদালতের মাধ্যমে বিচার হবে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলাগুলোর অগ্রগতি কম। এ জন্য অনেক কমিটি করা হয়েছে। আর ইয়ামিনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে নথিপত্র দেখে কথা বলতে হবে। এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।