অবশেষে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেলেন শিশু নাহিদ
Published: 17th, February 2025 GMT
দৈনিক সমকাল অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেয়েছেন ১০ বছর বয়সী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু নাহিদ হোসেন।
আজ রোববার বিকেল ৫টায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম নিজে গিয়ে নাহিদের বাড়িতে তার বাবা রুহুল আমিনের হাতে ভাতার কার্ডটি তুলে দেন। এর আগে, দৈনিক সমকালে ‘শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছে ১০ বছরের নাহিদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতের দৃষ্টিতে আসে। তিনি দ্রুত প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ইস্যু করার জন্য নির্দেশ দেন।
নাহিদ উল্লাপাড়ার সড়াতৈল গ্রামের দিনমজুর রুহুল আমিন ও সীমা খাতুনের সন্তান। তিন বছর ধরে শিকলবন্দী হয়ে বাড়িতেই বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। প্রতিবেশী শিশুদের দ্বারা উত্যক্তের শিকার হওয়ার পর তার বাবা তাকে ঘরের বারান্দার খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতেন। নাহিদের চিকিৎসার জন্য পরিবার সবকিছু বিক্রি করে ফেললেও ভাতার কার্ডের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ঘুষ দাবির কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানালে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো কর্মচারী যদি ঘুষ দাবি করে, তা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, সংবাদটি প্রকাশের পর তিনি বিষয়টি জানতেন না, কিন্তু তা দ্রুত সমাধান করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। তিনি জানান, নাহিদের বাবার অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শ্বশুরপক্ষের কম লোককে দাওয়াত দেওয়ায় জামাতার বাড়িতে হামলা, আহত ৯
‘ধর, ধর’ চিৎকারে গ্রামের অলিগলিতে হঠাৎ মুঠোফোন আর টর্চলাইটে আলোর ঝলকানি। মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন গ্রামবাসী ছুটছেন সুমন হোসেন নামের একজনের (২৫) বাড়িতে। তাঁদের কারও হাতে লাঠিসোঁটা; আবার কেউ কেউ সঙ্গে এনেছেন দা-বঁটি।
সুমনের বাড়িতে গিয়ে গ্রামবাসীরা দেখেন, ভাঙচুরের কারণে ঘরের টেলিভিশন, রান্নার প্রেশার কুকারসহ আসবাবপত্রের তছনছ অবস্থা। সুমনসহ তাঁর পরিবারের অন্তত পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রামবাসীর ভুল ভাঙে এবার। জানতে পারেন, ডাকাত নয়; সুমনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হামলায় বাড়িটিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আকিকার অনুষ্ঠানে শ্বশুরপক্ষের কম লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ার জেরে এ ঘটনার সূত্রপাত।
গতকাল শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন সুমন হোসেন ও তাঁর বাবা সোলায়মান হোসেন, মা আকতারা বেগম, ছোট বোন উম্মে হাবিবা, মামা রাশেদুল ইসলাম ও আবু সাঈদ। গ্রামবাসীর পাল্টা হামলায় সুমনের শ্বশুরপক্ষের অন্তত চার সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সুমনের শ্যালিকা ইয়াসমিন আক্তার ও তাঁর বন্ধু হাবিবুর রহমান, আরিফুল ইসলাম ও আল রিমন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে সুমন হোসেনের ছেলের আকিকার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে তিনি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দেন। কিন্তু তাঁর শ্বশুরপক্ষের কম লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ায় সুমনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে ওই রাতেই স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন সুমন। এটি দেখে জেসমিনের বোন ইয়াসমিন আক্তার তাঁর পরিবারের লোকজনকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। পরে সুমনের শ্বশুর অছিম উদ্দিন প্রায় অর্ধশত মানুষ নিয়ে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে সুমন, তাঁর বাবা, মা, ছোট বোন ও দুই মামাকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া বাড়ির আসবাবও ভাঙচুর করেন তাঁরা। গ্রামের মসজিদের মাইকে তখন ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেন, ডাকাত পড়ার খবরে গ্রামের লোকজন সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শ্বশুরপক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দেন। পরে ছয়-সাতজন যুবককে আটক ও মারধর করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের সমঝোতায় আটক যুবকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। গ্রামবাসীর হাতে আটক যুবকেরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’