নক্ষত্র গঠনের বিরল দৃশ্য দেখা গেল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে
Published: 17th, February 2025 GMT
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে নক্ষত্র গঠনের বিরল এক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। ফিনিক্স গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের মধ্যে নক্ষত্র গঠনের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, পৃথিবী থেকে ৫৮গ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ফিনিক্স গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। এই ক্লাস্টারে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল রয়েছে, যার ভর প্রায় এক হাজার সৌর ভরের সমান। এই ব্ল্যাকহোল গ্যাসকে উত্তপ্ত করে পার্শ্ববর্তী তারার গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে। জেমস ওয়েবের ডেটা, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি ও বিভিন্ন স্থলভিত্তিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে এমন এক শীতল গ্যাসের প্রবাহ সম্পর্কে জানা গেছে, যা নক্ষত্রের জন্মের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। এই গ্যাস গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের বিবর্তন সম্পর্কে দীর্ঘকাল ধরে চলমান নানা তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, জেমস ওয়েবের বর্ণালির তথ্য ক্লাস্টারের মধ্যে শীতল গ্যাসের একটি বিশদ মানচিত্র সম্পর্কে ধারণা দেয়। ফিনিক্স ক্লাস্টারে ব্যতিক্রমী উচ্চসংখ্যক নক্ষত্র গঠনের হার লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী মাইকেল ম্যাকডোনাল্ড বলেন, পূর্ববর্তী বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ বিভিন্ন তাপমাত্রায় গ্যাসের অসামঞ্জস্যপূর্ণ শীতলীকরণের হার দেখিয়েছিল। জেমস ওয়েব মধ্যবর্তী-তাপমাত্রার গ্যাস শনাক্ত করেছে, যা তারা গঠনের উষ্ণতম ও ঠান্ডা পর্যায়ের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে। জেমস ওয়েবের মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট (এমআইআরআই) ব্যবহার করে এই পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে। এই গ্যাস প্রায় ৫ লাখ ৪০ জাচার ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার। এই শীতল গ্যাসের উপস্থিতি পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণার অসংগতি সমাধান করে ক্লাস্টারের তারকা গঠন চক্রের পূর্ণ চিত্র প্রদান করে।
আরও পড়ুনমহাবিশ্বের শুরু কখন২৩ নভেম্বর ২০২৪বিজ্ঞানী মাইকেল রিফ জানিয়েছেন, জেমস ওয়েবের সংবেদনশীলতার কারণে নিয়ন সিক্স নির্গমন শনাক্তকরণের সুযোগ আছে। এটি মধ্য-ইনফ্রারেড বর্ণালিতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। গ্যাসের সন্ধান বিস্তৃত স্কেলে তারার গঠন বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
সূত্র: গ্যাজেটস৩৬০
আরও পড়ুনমহাবিশ্বের বৃহত্তম কাঠামোর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, কত বড় জানেন১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ বছরের পুরোনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘উলচাপাড়া শাহী জামে মসজিদ’
বিশাল চওড়া ফটক। ফটকের ওপর কারুকাজে নির্মিত দুটি মিনার। সুউচ্চ ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে ছয়টি ছোট–বড় মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ চোখে পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উলচাপাড়া এলাকার এই মসজিদের নাম উলচাপাড়া মসজিদ। এলাকাবাসীর কাছে এটি ‘উলচাপাড়া শাহী জামে মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত।
মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। এটি বর্তমানে দেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
চার ফুট উচ্চতার মজবুত প্ল্যাটফর্মের ওপর চুন–সুরকি, ইট আর কালো পাথরের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মসজিদের অবকাঠামো। মসজিদের দেয়ালে অসংখ্য খোপকাটা মৌলিক টেরাকোটার অলংকরণ। মসজিদটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিমাংশে নামাজের কক্ষ আর নামাজের কক্ষের পূর্ব পাশে বারান্দা। মসজিদের ওপর বর্গাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট নামাজের কক্ষ এবং পূর্ব ভাগে ছোট তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি বারান্দা আছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্থানের তালিকায় উলচাপাড়া মসজিদের নাম উল্লেখ আছে। সেখানে উলচাপাড়া মসজিদের বিষয়ে উল্লেখ আছে, মসজিদের নির্মাণ কৌশল ও মসজিদে ব্যবহৃত ইট দেখে মনে হয় যে এটি সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত। মসজিদে পাওয়া শিলালিপি পাঠ থেকে জানা যায়, ১৭২৭–২৮ সালে কোনো বণিক কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।
এই মসজিদে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন হাফেজ মাওলানা উবায়দুল্লাহ। অসুস্থতার কারণে তিনি বর্তমানে আসতে পারেন না। বর্তমানে মসজিদ তত্ত্বাবধান করছেন মাওলানা আখতারুজ্জামান। কথা হলে তাঁরা দুজন প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদটি ৩০০ বছরের পুরোনো। অনেক মানুষ এই মসজিদ দেখতে এলাকায় আসেন। তবে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে তাঁরা বেশি কিছু জানেন না বলে জানালেন।
মসজিদে কথা হয় ইতিকাফে বসা উলচাপাড়ার গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের (৬৫) সঙ্গে। তাঁর বাবা এনায়েত আলী এই মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১০৫ বছর বয়সে এনায়েত আলী মারা যান। হাবিবুর রহমানের দাদা মোহাম্মদ তোরাব আলী মৃধাসহ পরদাদারা এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের প্রভাষক মোবারক হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। এর পর থেকে মসজিদের কোনো সংস্কারকাজ এলাকাবাসী চাইলেও করতে পারছেন না। মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। প্রতিদিন অনেক মানুষ মসজিদটি দেখতে এই গ্রামে আসেন।